শ্যেন নদীর তীরে বসে কবিতা লেখা যায়। মোনালিসার চোখে চোখ রাখা যায় আজীবন। সেই শহরই এবার নতুন করে পড়বে মেসি-প্রেমে। ফুটবল ভক্তদের দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে যাবে লা লিগা। ভেসে উঠবে ফরাসি লিগ। ‘দুখজাগানিয়া’ রাত ভুলতে মেসির বল পায়ে ‘গান’ শুনবেন ফরাসিরা। বদলে যাওয়া সেই ফুটবল-পৃথিবীর কথা শোনালেন কৃশানু মজুমদার।
কয়েক বছর আগেই ভাইরাল হয়েছিল ছবিটা। বারুদ, ল্যান্ডমাইন, বোমায় প্রায় ধ্বংস গোটা আফগানিস্তান। চারদিকে স্বজন হারানোর কান্না। কবরের শহরে এক খুদের পায়ে ফুটবল। গায়ে লিওনেল আন্দ্রেস মেসির জার্সি। প্লাস্টিকের ব্যাগ দিয়ে আর্জেন্টাইন মহাতারকার জার্সি তৈরি করে পরেছিল বছর সাতেকের মোর্তাজা আহমদী। তার সেই ছবিই ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বের সর্বত্র। পরে সেই খুদে ভক্তের জন্য ফুটবলের রাজপুত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলেন সই করা আর্জেন্টিনার নীল-সাদা জার্সি। বার্সেলোনার বেগুনি জার্সি। যে জার্সি প্রেমের। যে জার্সি জন্ম দেয় স্বপ্নের।
অনেক সময় দুঃস্বপ্ন আমাদের এমনভাবে তাড়া করে, আমরা সম্বিত খুঁজে পাই না। দ্বিগবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে যাই। আচমকা আঘাতে স্নায়ু বিদ্রোহ করে বসে। লিও মেসির বার্সেলোনা ছাড়ার অভিঘাত হয়তো সেররকমই। আমাদের সবাইকে স্থাণুবৎ করে দিয়ে মেসি বিদায় নিলেন তাঁর যৌবনের তপোবন-বার্সেলোনা থেকে। বলা ভাল, চলে যেতে বাধ্য হলেন।
আরও শুনুন – Olympics: ফুটবলে এশিয়ার প্রথম হ্যাটট্রিকের রেকর্ড ভারতেরই
সেই কোন ছেলেবেলায় বাবার হাত ধরে বার্সায় চলে এসেছিল ছোট্ট মেসি। কথায় বলে, মর্নিং শোজ দ্য ডে। ফুটবলার জীবনের সেই প্রভাতবেলাতেই মেসির বাঁ পায়ের শিল্প দেখে ন্যাপকিনেই সই করিয়ে ফেলেছিল বার্সেলোনা। তার পরের কাহিনি তো ইতিহাস। আমাদের সবার জানা।
ন্যু ক্যাম্পের সবুজ ঘাস আর মেসি! ঠিক যেন রোমিও আর জুলিয়েট। অবিচ্ছেদ্য, অবিনশ্বর। প্রতিটি ঘাসের ডগা জানে, বল পায়ে মেসির শরীরী মোচড়, ইনসাইড ড্রিবল। সাইডলাইনের ধার ধরে গতির ঝড় তুলতে তুলতে হঠাতই দিক বদলে ফেলা সর্পিল দৌড়। সবাই জানে মেসির সেই গতিপথ। কিন্তু তিনি যে প্রহেলিকা। ধাঁধা। ‘চিনি চিনি’ করেও মেসিকে যে চিনতে পারেননি তাঁর প্রবল প্রতিপক্ষরা।
আরও শুনুন – অলিম্পিকে হিটলারের সঙ্গে হ্যান্ডশেক, এক ছবিতেই প্রাণ বেঁচেছিল এই অ্যাথলিটের
ন্যু ক্যাম্প গ্যালারির প্রতিটি চেয়ার জানে সেই দৌড় অন্য কারওর হতে পারে না। প্রাণের থেকেও প্রিয় বার্সার জার্সিতে কত ফুলই না ফুটিয়েছেন মেসি, তার ইয়ত্তা নেই। বুট ঠুকে একের পর এক সব রেকর্ড গড়েছেন। বার্সার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি শিরোপাজয়ীর নাম মেসি, ৬৩৪টি গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা এলএম ১০, লা লিগার সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনিই। লা লিগায় সবচেয়ে বেশি ম্যাচে জয়ী বার্সার বর্শাই। ৭৩১টি ম্যাচে ৫১৩টি জয় মহানায়কের। ৩৫টি হ্যাটট্রিক করে মেসিই সবার উপরে। লা লিগার এক মরসুমে ৫০টি গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনিই। মোট ছ’ বার ব্যালন ডি’অর জিতেছেন মেসি। চার-চারবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন। এরকম আরও কত কী। বলে শেষ করা যাবে না।
বাকিটা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।