বিজ্ঞাপনের ছবি থেকে উত্তেজক খবরের শিরোনাম, সব জায়গাতেই লাস্যময়ী নারীদের ভিড়। তাঁদের আকর্ষণ থেকে নাকি চোখ ফেরাতে পারেন না অধিকাংশ পুরুষই। কিন্তু জানেন কি, নারীর কোন বৈশিষ্ট্যটিকে ‘লাস্য’ বলে চিহ্নিত করা হয়? আসুন, তাহলে শুনেই নেওয়া যাক।
লাস্যময়ী। নারীর যৌন আকর্ষণের দিকেই ইঙ্গিত করে এই শব্দ। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, কোনও নারীর সৌন্দর্য, তাঁর আবেদন, এ সবকিছু বোঝাতেই ‘লাস্যময়ী’ বিশেষণের প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু আসলে কি লাস্য কেবল যৌন আকর্ষণকেই বোঝায়?
আরও শুনুন: প্রাতরাশেই হস্তমৈথুন ঠেকানোর দাওয়াই, জন্ম হয়েছিল কর্নফ্লেক্সের
উঁহু। সে কথা বলছে না অভিধান। অভিধান মতে, লাস্য শব্দের অর্থ হচ্ছে রমণীদের লীলায়িত নৃত্যভঙ্গি। প্রাথমিক শ্রেণিবিভাগ অনুযায়ী, নৃত্যের দুটি মুখ্য শৈলী হচ্ছে তাণ্ডব ও লাস্য। তাণ্ডব যেমন প্রবল পৌরুষ এবং পুরুষসুলভ শক্তিকে ফুটিয়ে তোলে, অন্যদিকে লাস্য নারীসুলভ সৌন্দর্য কমনীয়তা ও লালিত্যকে সূচিত করে। লাস্য মূলত চার প্রকারের বলে জানা যায়। সেই চারটি প্রকার হল, শৃঙ্খলা, লতা, পিণ্ডি ও ভেদ্যক।
আরও শুনুন: বোরোলিন থেকে পার্লে-জি… স্বাধীনতার আগেই যাত্রা শুরু, রমরমিয়ে চলছে যেসব স্বদেশি পণ্য
আবার ভারতীয় শাস্ত্রও কিন্তু বলছে অন্য কথাই। শাস্ত্র অনুযায়ী লাস্যের সঙ্গে জুড়ে রয়েছেন দেবাদিদেব শিব এবং জগন্মাতা পার্বতী। ভরত মুনি যে নাট্যশাস্ত্র লিখেছিলেন, সেখান থেকে এই লাস্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়। ভরত জানিয়েছেন, আসলে দেবী পার্বতী যে নৃত্য প্রদর্শন করেছিলেন, তারই নাম লাস্য। এমনিতে শিবের নৃত্যের কথা তো সকলেরই জানা। কিন্তু দেবী পার্বতীও ঠিক কী কারণে নৃত্য প্রদর্শন করেছিলেন? শাস্ত্রের একটি মত বলে, ত্রিপুরাসুরকে বধ করার পর তাণ্ডব নৃত্য করেছিলেন দেবাদিদেব মহাদেব। তাঁর এই উদ্দাম নৃত্য দেখে স্বর্গ থেকে মর্ত শঙ্কিত হয়ে পড়ে। সকলেরই আশঙ্কা হয়, শিবের এই প্রলয়নৃত্যেই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। বলা হয়, শিবের এই নৃত্যের পালটা নৃত্য শুরু করেছিলেন দেবী পার্বতী। তাণ্ডবের প্রভাবকে প্রশমিত করতে তিনি এই যে নৃত্যে রত হলেন, সেই ভঙ্গিটিকেই লাস্য বলা হয়। আর পরবর্তীতে নৃত্যশৈলীর ভাগ নির্ধারণ করার সময় শাস্ত্রকারেরা তুলে আনেন এই দুই ভঙ্গিকেই। যেহেতু শিবের প্রবল পৌরুষের উত্তেজনাকে শান্ত করেছিল পার্বতীর এই রমণীয় ভঙ্গি, হয়তো সেখান থেকেই লাস্য শব্দের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে নর-নারীর শারীরিক আকর্ষণের বিষয়টিও।