দোলের উদযাপন কেবল এই যুগেই সীমাবদ্ধ নয়, পুরাণেও উল্লেখ রয়েছে এই উৎসবের। দোল উৎসব ঘিরে একাধিক পৌরাণিক অনুষঙ্গের সন্ধান পাওয়া যায়। কী সেসব কাহিনি, জানেন? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ধনসম্পদের অধিষ্ঠাত্রী দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয় যে পাঁচালি পড়ে, সেখানে কাহিনির সূচনাই হয় দোলপূর্ণিমার এক রাতে। “দোলপূর্ণিমার নিশি নির্মল আকাশ/ মন্দ মন্দ বহিতেছে মলয় বাতাস”, এহেন আবহে একান্ত কথোপকথনে মগ্ন লক্ষ্মী নারায়ণ। যদিও সেখানে পরবর্তীতে দোলের আর কোনও অনুষঙ্গ পাওয়া যায় না, তবে এ কথা সকলেই জানেন যে বাংলায় দোলযাত্রা উৎসবের কেন্দ্রে আছেন ভগবান বিষ্ণু। কখনও তিনি কৃষ্ণ রূপে শ্রীরাধিকা ও গোপিনীদের সঙ্গে দোলের আনন্দে মেতে ওঠেন, কখনও আবার বিষ্ণু রূপে নিজের ঐশ্বরিক ক্ষমতা প্রকাশ করে সূচনা করেন দোলযাত্রার। দোলযাত্রা প্রসঙ্গে এমনটাই বিশ্বাস করে থাকেন ভক্তরা।
আরও শুনুন: রং খেলবেন, কিন্তু রঙের হাত থেকে মোবাইল ফোনটিকে বাঁচাবেন কীভাবে?
ভাগবত পুরাণ জানায়, দোর্দণ্ডপ্রতাপ রাজা হিরণ্যকশিপু বিষ্ণুর প্রবল বিরোধী ছিলেন। কিন্তু এমনই ভাগ্য, তাঁর সন্তান প্রহ্লাদ কালে কালে ভগবান বিষ্ণুর একান্ত ভক্ত হয়ে ওঠেন। শাসন তর্জন অত্যাচার, কোনোভাবেই যখন প্রহ্লাদকে তাঁর নিজস্ব বিশ্বাস থেকে সরিয়ে আনা সম্ভব হল না, তখন চরম পথ অবলম্বন করলেন হিরণ্যকশিপু। নিজের সন্তানের জন্য ধার্য করলেন মৃত্যুদণ্ড। নিজের বোন হোলিকার সাহায্যে প্রহ্লাদকে পুড়িয়ে মারতে চাইলেন তিনি। হোলিকার ছিল এক মায়া আবরণ, যা গায়ে থাকলে আগুন তাকে ছুঁতে পারবে না। সেই আবরণ গায়ে জড়িয়ে প্রহ্লাদকে নিয়ে আগুনে প্রবেশ করল সে। কিন্তু বিষ্ণুর কৃপায় ফল হল বিপরীত। আগুনে পুড়ে মৃত্যু হল হোলিকারই, আর প্রহ্লাদের গায়ে আঁচটুকুও লাগল না। পুরাণে বর্ণিত এই ঘটনাকে স্মরণ করেই দোলের আগের দিন হোলিকা দহনের প্রচলন হয়েছে। চলতি কথায় যার নাম ন্যাড়াপোড়া। অশুভ শক্তির বিনাশের উদ্দেশ্যে পালন করা হয় এই প্রথা।
আরও শুনুন: ত্বকের যত্ন নিন… রঙের উৎসবে মেতে ওঠার আগে ঠিক কী করবেন? রইল টিপস
তবে সারা ভারতবর্ষের প্রেক্ষিতে দেখলে দোল উৎসবের ভিন্ন পৌরাণিক তাৎপর্যও মেলে। প্রাচীন ভারতে দোল মানেই ছিল মদনোৎসব। প্রেমের দেবতার পূজার্চনার সঙ্গে সঙ্গে প্রেমিক-প্রেমিকাদের মিলন উৎসব উদযাপন করা হত এই দিনে। আর সেই প্রথার পিছনেও রয়েছে এক পৌরাণিক কাহিনি। দক্ষযজ্ঞে অপমানিত হয়ে সতী যখন প্রাণত্যাগ করলেন, দুঃখে রাগে শিব বসলেন ধ্যানে। এদিকে হিমালয়কন্যা উমা রূপে জন্ম নিলেন সতী। মহাদেবের ধ্যান ভাঙানোর জন্য উমার সঙ্গে জোট বাঁধলেন কামদেব মদন। মদনের বাণে শিবের ধ্যান ভাঙল বটে, কিন্তু শিবের ত্রিনয়নজাত আগুনে ভস্ম হয়ে গেলেন মদন। অবশেষে মদনের স্ত্রী রতির আকুল প্রার্থনায় তাঁর প্রাণ ফিরিয়ে দেন শিব। মদনের পুনর্জন্মের এই দিনটিই ছিল দোল উৎসবের তিথি।
বস্তুত রাধাকৃষ্ণের মিলনকে উদযাপন করে বাংলায় যেভাবে দোল উৎসব পালিত হয়, সেখানেও রয়েছে এই প্রেমের অনুষঙ্গই। আর এই দিনেই বঙ্গদেশে জন্ম নিয়েছিলেন এমন একজন মানুষ, প্রেমকেই যিনি ধর্মের মূল কথা বলে মনে করতেন। তিনি শ্রীচৈতন্য। দোল উৎসবের পৌরাণিক তাৎপর্যে অন্য এক মাত্রা যোগ করে দিয়েছেন তিনিই।