রথযাত্রা লোকারণ্য মহা ধুমধাম… রথের কথা বললেই মনে আসে পুরীর নাম। আর পুরীর কথা বললেই মনে পড়ে যায় খাজা। ঘিয়ে ভাজা রসে ডোবান হালকা মুচমুচে এই মিষ্টির জগতজোড়া খাতি। স্বয়ং জগন্নাথের ভোগও খাজা ছাড়া অসম্পূর্ণ। কিন্তু কীভাবে জন্ম হয়েছিল এই মিষ্টির? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
পুরী গেলে খাজা খেতেই হয়! অনেকে স্রেফ এই মিষ্টির টানে সৈকত শহরে ছুটে যান। জগন্নাথের ভোগও এই মিষ্টি ছাড়া অসম্পূর্ণ। পুরীর প্রায় সব মিষ্টির দোকানেই খাজার দেখা মিলবে। আকারে ছোট বড় হতেই পারে। তবে স্বাদের দিক দিয়ে সবই মোটামুটি এক। স্রেফ কোথাও ঘিয়ে ভাজা, আর কোথাও তেলে।
:আরও শুনুন:
জিলিপি নাকি ভিনদেশি? অমৃতির বাড়িই বা কোথায়!
স্রেফ বেড়াতে যাওয়ার উদ্দেশ্য করে পুরী খুব কম মানুষ যান। বেশিরভাগেরই মূল উদ্দেশ্য থাকে জগন্নাথের পুজো দেওয়া। আর সেই সুবাদে খাজা প্রসাদ চাই-ই-চাই। যদিও ওড়িশাও খাজার থেকেও সুস্বাদু মিষ্টি রয়েছে একাধিক। ক্ষীরমোহন, রসমালঞ্চ, ছানাপোড়া, ছানার মুড়কি…তালিকা নেহাতই ছোট নয়। তাও জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে খাজার স্থান বেশ উপরের দিকেই। কারণ এই মিষ্টি ছাড়া জগন্নাথের ভোগ অসম্পূর্ণ। প্রতিদিন পুরীতে হাজার হাজার খাজা একেবারে ধোঁয়ার মতো উবে যায়। পর্যটকরা তো বটেই, স্থানীয়রাও এই মিষ্টি খেতে বড় পছন্দ করেন। আর এই পছন্দ যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। শোনা যায়, মৌর্য যুগে এই মিষ্টি খাওয়ার চল ছিল। সেই হিসেবে এর জন্ম যে বেশ প্রাচীন তা বলতেই হয়। আবার কেউ কেউ বলেন, এই মিষ্টির উল্লেখ বেদেও রয়েছে। সেখানে অবশ্য খাজা নাম উল্লেখ নেই। কিন্তু যে পদ্ধতিতে খাজা তৈরি হয় একেবারে সেই রেসিপি মেনে তৈরি হওয়া মিষ্টির উল্লেখ রয়েছে। এমনকি উপকরণও এক। চিনা পর্যটক হিউয়েন সাঙ-এর লেখাতেও এই মিষ্টির উল্লেখ মেলে। তিনি অবশ্য খাজার সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের জনপ্রিয় মিষ্টি বাকলাভার তুলনা করেছিলেন।
:আরও শুনুন:
ফুচকার জন্ম নাকি দ্রৌপদীর হাতেই! কোথা থেকে এল এই লোভনীয় খাবার?
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু বদলালেও খাজা খুব একটা বদলায়নি। তৈরির পদ্ধতি, উপকরণ সবই কমবেশি এক রয়েছে। আর জগন্নাথের ভোগে এই মিষ্টি থাকায় বদল হওয়ার সম্ভাবনাও অনেকটা কমেছে। সেই অর্থে খাজা তৈরি করেছিলেন কে, তা ঠিকমতো জানা যায় না। এমনকি পুরীতে এমন কোনও বিশেষ দোকানও নেই যারা খাজাকে নিজেদের সম্পত্তি বলে দাবি করেন। তবে ওড়িশার অন্যান্য প্রান্তে খেলে খাজার কিছু রকমফের পাওয়া যায়। তফাৎ বলতে মাপের। এক ধরনের খাজায় ভাঁজের পরিমাণ কম। অর্থাৎ মাত্র একটা বা দুটো ভাঁজ থাকে খাজায়। আবার কিছু কিছু খাজা অনেক ভাঁজের হয়। ময়দা লুচির মতো বেলে তা ভাঁজ করে ফের বেলা হয়, এইভাবে বেশ কয়েকবার ভাঁজ করে ভাজা। তেল বা ঘিয়ে পড়লেই, ভাঁজ গুলো কিছুটা হলেও খুলে যাবে। একইসঙ্গে বাইরের অংশ লুচির মতো ফুলবেও না। তারপর রসে ডুবিয়ে নিলেই মিষ্টি তৈরি। জগন্নাথের ভোগেও একই পদ্ধতি মেনে তৈরি হয় খাজা। যেহেতু বেশ কয়েকদিন রেখে খাওয়া যায়, তাই অনেকেই বাড়ির জন্য মজুত করে নিয়ে যান খাজা। বর্তমানে ওড়িশার খাজা জিআই ট্যাগও পেয়েছে। যার ফলে কিছু কিছু দোকানের খাজা গোটা ভারতে ডেলিভারি করা হয়। স্রেফ রথের সময় নয়, সারা বছরই পুরীর খাজার চাহিদা থাকে তুঙ্গে। যতই বাড়ি বসে পাওয়া যাক, সমুদ্রের হাওয়া খেতে খেতে গরম গরম খাজা খাওয়ার আনন্দ যে আলাদ, তা বলাই বাহুল্য।