ধর্মে মুসলিম, কিন্তু শেষকৃত্য হয়েছিল হিন্দুমতে। বিয়েও করেছিলেন ভিনধর্মে। একসময় তাঁকে নিয়ে গোট দেশে চর্চা চলত। অবশ্য এমনটাই স্বাভাবিক, কারণ ইনিই ছিলেন দেশের প্রথম মুসলিম প্রধান বিচারপতি। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কিছুদিন আগেই প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর নিয়েছেন জাস্টিস চন্দ্রচূড়। কর্মজীবনে বিভিন্ন ইস্যুতে তাঁর নাম চর্চায় এসেছে। তবে স্রেফ চন্দ্রচূড় নন, যে কোনও প্রধান বিচারপতিকে নিয়েই চর্চা হয়ে থাকে। বিশেষ করে তিনি যদি ব্যক্তিগত জীবনে কিছু ব্যতিক্রমী কাজ করে থাকেন।
জাস্টিস মহম্মদ হিদায়তুল্লা (Mohammad Hidayatullah) এমনই এক নাম। স্রেফ প্রধান বিচারপতি নয়, উপ রাষ্ট্রপতি পদের দায়িত্বও সামলেছেন ইনি। দীর্ঘদিন ভারতীয় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ছিলেন হিদায়তুল্লা। তবে প্রধান বিচারপতি হিসেবেও তাঁর অবদান নেহাতই কম নয়। ১৯৬৮ সালে সুপ্রিম বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। তার আগে নিয়মমতো হাই কোর্টে বিচারকের দায়িত্ব সামলেছেন। আইনের যাবতীয় অলিগলি ছিল তাঁর নখদর্পনে। একইসঙ্গে প্রশাসনিক পদেও নিজেকে প্রমাণ করেছেন হিদায়তুল্লা। ইন্দিরা আমলে অ্যাক্টিং প্রেসিডেন্ট হিসেবেও নিযুক্ত হয়েছিলেন। তাঁর আগে কোনও প্রধান বিচারপতি এই গুরুদায়িত্ব পাননি। তবে হিদায়তুল্লা নিজের যোগ্যতায় সবটা অর্জন করেছিলেন। যদিও এই কারণে তাঁকে নিয়ে আলাদা করে চর্চা হয় না। তিনি চর্চায় থাকতেন তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের কারণে। মুসলিম হলেও নিজের ধর্মের কাউকে বিয়ে করেননি। সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন পুষ্পা শাহ নামে এক জৈন মহিলাকে। এই নিয়ে বিস্তর হইচই হয়েছিল। হিদায়তুল্লা অবশ্য তেমন আমল দেননি বিতর্কে। নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পছন্দ করতেন। তাই জীবনসঙ্গী বাছার ক্ষেত্রেও ধর্মের কথা ভাবেননি। এখানেই শেষ নয়, মৃত্যুর পরও নিজের ব্যতিক্রমী সত্ত্বার পরিচয় দিয়েছিলেন হিদায়তুল্লা।
এমনিতে মুসলিম নিয়ম অনুযায়ী, মৃতদেহ কবর দিতে হয়। কিন্তু হিদায়তুল্লা চেয়েছিলেন তাঁর শেষকৃত্য হোক হিন্দুমতে। বাস্তবে হয়েও ছিল তাই। প্রাক্তন প্রধান বিচারপতিক্র শেষ ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে দাহ করা হয়েছিল তাঁর দেহ। আসলে, বিয়ের পর থেকে নিজের ধর্মের পাশাপাশি হিন্দু ধর্মের অনুষ্ঠানেও সমানভাবে যোগ দিতেন হিদায়তুল্লা। ধর্মের গোঁড়ামিতে নিজেকে আটকে রাখতে পছন্দ করতেন না একেবারেই। বরং হিন্দু ধর্মগ্রন্থ পাঠে তাঁর আগ্রহ ছিল প্রবল। বেদ, উপনিষদ, গীতা, সবই পড়েছিলেন হিদায়তুল্লা। তার থেকেই হিন্দু ধর্মের প্রতি তাঁর আকর্ষণ জন্মায়। স্রেফ ধর্ম নয়, হিন্দু সংস্কৃতিকেও খুবই গুরুত্ব দিতেন হিদায়তুল্লা। তাঁর সিদ্ধান্তে সেই প্রভাব লক্ষ করা যেত। আর সেই কারনেই নিজের শেষকৃত্য হিন্দুমতে করাতে চেয়েছিলেন তিনি। সেকালে এমন উদার ভাবনা বিরল বললে ভুল হয় না। তাই এতদিন পরেও নিজের ব্যতিক্রমী গুনেই চর্চায় রয়ে গিয়েছেন ভারতের প্রথম মুসলিম প্রধান বিচারপতি।