দুর্গাপুজোর পর কালীপুজো আসন্ন। কালীপুজোর সূত্র ধরে বাংলায় আসে দীপাবলি। কেবল বাংলা নয়, সারা ভারত জুড়েই পালিত হয় এই আলোর উৎসব। কিন্তু জানেন কি, পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন নামে আলোর উৎসব পালন করা হয়?
‘যাক অবসাদ বিষাদ কালো/ দীপালিকায় জ্বালাও আলো/ জ্বালাও আলো, আপন আলো, শুনাও আলোর জয়বাণীরে’- এ কথাই যেন আলোয় আলোয় বলে দীপাবলি। কার্তিক মাসের শুরু থেকেই বাংলায় জ্বলে ওঠে আকাশপ্রদীপ, পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে। কালীপুজোর আগের রাতে জ্বালানো হয় চোদ্দ প্রদীপ। আর কালীপুজোর রাতে আলোর মালায় সেজে ওঠে কেবল বাংলা নয়, গোটা ভারত। সারা দেশেই দিওয়ালি পালনের মধ্যে দিয়ে যেন অশুভকে, অন্ধকারকে দূর করার ব্রত নেওয়া হয়। যে অন্ধকার আসলে মনের, চেতনার তমসা।
আরও শুনুন: ধনতেরসে সোনা কেনার রীতির নেপথ্যে আছেন এক নারী? শুনে নিন সেই গল্প
কিন্তু কেবল ভারতেই নয়, আলোর উৎসব পালিত হয় পৃথিবীর আরও অনেক দেশেই। জাপানে প্রতি বছর আগস্ট মাসের ২ থেকে ৭ তারিখ পর্যন্ত চলে ‘অ্যামোরি নেবুতা মাৎসুরি’। এই উৎসবের রঙিন মিছিলে জাপানি দেবতা ও পৌরাণিক চরিত্রদের আদলে সেজে অংশ নেন অনেকে। সব মিলিয়ে, এই সময়ে এক জমজমাট উৎসব চলে সে দেশে।
আরও শুনুন: প্ল্যানচেটের অভ্যাস ছিল রবীন্দ্রনাথের, মৃত্যুর পর নাকি প্ল্যানচেটে সাড়া দিয়েছিলেন নিজেও
ভারত বা জাপানের মতোই, এশিয়ার আরেক প্রাচীন দেশ চিনেও চলে আলোর উৎসব। চিনের ক্যালেন্ডার তৈরি হয় চাঁদের গতিবিধির উপর নির্ভর করে। সেই চান্দ্র দিনলিপির পনেরো-তম দিনে পালিত হয় এই উৎসব। আমাদের হিসেবে, ফেব্রুয়ারির শেষের দিক কিংবা মার্চ মাসের গোড়ায়। আকাশে উড়িয়ে দেওয়া হয় অসংখ্য আলো জ্বলা ফানুস, সবগুলি মিলে নিজেরাই যেন হয়ে ওঠে এক অপূর্ব নক্ষত্রমালা। চিনা নববর্ষেও আলোর বড় ভূমিকা রয়েছে। সেই সময়েও বিভিন্নরকম আলো এবং চিনা লন্ঠন জ্বালানোর প্রথা মেনে চলেন এই দেশের মানুষ। তাইওয়ানেও একইভাবে ফানুস ওড়ানোর রীতি রয়েছে। আগে ফানুস ওড়ানোর মাধ্যমে ইঙ্গিত দেওয়া হত যে শহর নিরাপদে রয়েছে। বর্তমানে তার প্রয়োজন না থাকলেও রীতিটি রয়ে গিয়েছে।
নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের মাঝখানে আট দিন ধরে চলে হানুক্কা উৎসব। সারা পৃথিবীর ইহুদিরা অংশ নেন এই উৎসবে। আটটি মোমবাতি জ্বালিয়েই এই উৎসবের সূচনা হয়।
স্পেনে আলোর উৎসবের নাম ‘লা ফালা’। এই নামকরণ এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘ফ্যাক্স’ থেকে, যার মানে আলো। এই উৎসব উপলক্ষে আগুনে আহুতি দেওয়া চলতেই থাকে। হয়তো মনে অশুভ প্রবৃত্তিকে বিসর্জন দেওয়ার প্রতীক হিসেবেই এই আহুতির আয়োজন।
ফ্রান্সে আলোর উৎসব হয় ৮ ডিসেম্বর, মাতা মেরিকে স্মরণ করে। চার দিন ধরে চলে এই উৎসব। দিওয়ালির মতোই, দেশের সমস্ত বাড়ি সেজে ওঠে আলোর সাজে। আবার নেদারল্যান্ডস আলোয় সেজে ওঠে ১১ নভেম্বর। হ্যালোইনের মতো করে পালন করা এই দিনটি পরিচিত সেন্ট মার্টিন’স ডে বলে। মেক্সিকোর আলোর উৎসবও অনেকটা এমনই। ‘নাইট অফ দ্য উইচেস’ নামে ডাকা হয় এই উৎসবটিকে।
নভেম্বর মাসেই থাইল্যান্ডে পালন করা হয় ‘লোই ক্র্যাথং’ উৎসব। এই শব্দবন্ধের আক্ষরিক মানে ‘ঝুড়ি ভাসানো’। আমাদের দেশে যেমন কোনও তীর্থস্থানে নদীতে প্রদীপ ভাসিয়ে দেওয়া হয়, এই প্রথাটিও অনেকটা সেরকমই। ফুল মালা দিয়ে সুন্দরভাবে সাজানো ছোট ছোট ঝুড়িতে আলো জ্বালিয়ে নদীর বুকে ভাসিয়ে দেন থাইল্যান্ডের অধিবাসীরা।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন নামে সারা পৃথিবী জুড়েই পালিত হয়ে চলেছে আলোর উৎসব। যতদিন আমাদের মনে, আমাদের সমাজে কোথাও না কোথাও অন্ধকার রয়ে যাবে, ততদিন এই উৎসবের তাৎপর্যও ফুরোবে না।