এতবড় অঙ্কের নোট, ভাঙাতে বড় সমস্যা হয়। দু-হাজার নিয়ে নোট এমন কথা প্রায়শই শোনা যেত অনেকের মুখে। সম্প্রতি তা নিষিদ্ধ করেছে কেন্দ্র সরকার। কিন্তু স্রেফ খুচরো করাই যদি সমস্যা হয়, তাহলে ভেবে দেখুন তো ১৯৫৪ সালে দেশবাসীর কী অবস্থা হয়েছিল! কারণ তখন বাজারে চালু হয়েছিল ১০ হাজার টাকার নোট। এমনকি পাঁচ হাজার টাকার নোটও একসময় চালু ছিল এই দেশে। কীভাবে বন্ধ হয়েছিল সেসব? আসুন শুনে নিই।
নোটবন্দি। শব্দটার সঙ্গে পরিচিত নন এমন ভারতীয় খুঁজে পাওয়া কঠিন। বহুবার এই অভিজ্ঞতার সাক্ষী থেকেছেন দেশবাসী। তবে সম্প্রতি দু-হাজার টাকার নোট বাতিল বেশ সাড়া ফেলেছিল গোটা দেশে। বলা ভালো, দু-হাজার টাকা চালু হওয়া নিয়েও দেখা গিয়েছিল রীতিমতো উত্তেজনা। কিন্তু একসময় এই দেশেই প্রচলন ছিল পাঁচ হাজার এবং দশ হাজারের নোট।
আরও শুনুন: ফুচকায় আলুর বদলে কলা! ভিডিও দেখে চটে লাল খাদ্যপ্রেমীরা
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। এখনও পর্যন্ত দেশে সবচেয়ে বড় অঙ্কের নোট হল দশ হাজার। আরবিআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৩৮ সালে ১০ হাজার টাকার নোট ছাপা শুরু করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। ১৯৪৬ সালের জানুয়ারি মাসে সেই টাকাকে বাতিল ঘোষণা করা হয়। ১৯৫৪ সালে ফের ফিরিয়ে আনা হয় সেই দশ হাজার টাকার নোট। সেইসময় দেশে চালু ছিল ১হাজার, ৫হাজার ও ১০হাজারের নোট। তবে বেশিদিন নয়। ১৯৭৮ সালে আবারও বন্ধ হয়ে যায় এর মধ্যে দুটি নোটের ব্যবহার। তুলে নেওয়া হয় ৫ ও ১০ হাজারের নোট। মূলত খুচরোর সমস্যাই এক্ষেত্রে প্রধান কারণ হিসেবে দেখা দেয়। এরপর নতুন করে আর বড় নোট ছাপানোর সিদ্ধান্ত নেয়নি আরবিআই। তবে ১৯৩৪ সালের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ইন্ডিয়ায় তরফে জানানো হয়, দশ হাজারের উপরের কোনও অঙ্কের নোট ছাপানো যাবে না। তাছাড়া কোন কোন অঙ্কের নোট ছাপা যাবে, তা নিয়েও যথাযথ নির্দেশিকা দেওয়া হয় বিশেষ এক নির্দেশিকায়।
আরও শুনুন: একটা ডিমের দাম ৭৮ কোটি! কী এমন গুণ আছে এই ‘বিশেষ’ ডিমের?
কিন্তু ২০১৪ সালে বড় নোটের প্রসঙ্গ আবার ওঠে। ১০ ও ৫ হাজারের নোট ফিরিয়ে আনার দাবি রাখেন তৎকালীন আরবিআই-এর গভর্নর রঘুরাম রাজন। কিন্তু সেই দাবি নাকচ করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুন জেটলি। তাঁর দাবি ছিল, বড় অঙ্কের নোট হলে জাল হওয়ার আশঙ্কা আরও বাড়বে। আরবিআই তরফেও সেই দাবি মেনে নেওয়া হয়। তাই নতুন করে এত বড় নোট চালু হয়নি। যদিও তার কয়েকবছর পর দেশজুড়ে চালু হয় ২হাজারের নোট। অনেকেই দাবি করেছিলেন এই নোটের মধ্যে বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। তাই জাল করা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু এর স্থায়ীত্বও বেশিদিন হয়নি। সম্প্রতি দু-হাজারের নোটও বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু ভাবুন তো, সত্যিই যদি এখনও চালু থাকত দশ হাজার টাকার ওই নোট। পকেটে অতবড় নোট নিয়ে কী নাজেহালই না হতে হত দেশবাসীকে। দু-হাজার টাকার খুচরো করতেই যেখানে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়, সেখানে দশ হাজার কিংবা পাঁচ হাজার টাকার খুচরো! তা যে সকলের জন্যই রীতিমতো সমস্যার কারণ হয়ে উঠত, তা বলাই বাহুল্য।