মা-ঠাকুমার কোলেপিঠেই বেড়ে ওঠে বাচ্চা-কাচ্চারা। এ তো আমাদের জানা কথাই। দুজনের স্নেহের স্পর্শে আলো হয়ে ওঠে যে কোনও শিশুর শৈশব। কিন্তু এই মা আর ঠাকুমা যদি একজন ব্যক্তি হন! এমনটা কি আদৌ হতে পারে! শুনতে অবাকই লাগে বটে, তবে সত্যি বলতে সেরকমই এক বিরল ঘটনার সাক্ষী থাকল বিশ্ব। বউমাকে মাতৃত্বের স্বাদ দিতে নিজের নাতনিকেই গর্ভে ধারণ করেছেন এক মহিলা। আসুন শুনে নিই তাঁদের কথা।
মা হতে চান পুত্রবধূ। অথচ বাধ সেধেছে শারীরিক সমস্যা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নানা জটিলতায় তরুণী আর পাবেন না মাতৃত্বের স্বাদ। এই দুঃখ যে কতখানি প্রাণে বাজে, তা বোধহয়য় একজন নারীই উপলব্ধি করতে পারেন। পুত্রবধূর সেই কষ্ট অনুভব করছিলেন শাশুড়িমা। আর তাই পুত্রবধূর সন্তানকে নিজের গর্ভে ধারণ করারই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। গোটা বিশ্বেই এই ধরনের ঘটনা প্রায় বিরলই বলা যায়।
আরও শুনুন: মৃত্যুর পরেও থাকবেন স্ত্রীর সঙ্গেই, দেড় লক্ষ টাকা ব্যয়ে দুজনের সমাধিস্থল বানালেন বৃদ্ধ
বধূটি এই যে প্রথমবার মাতৃত্বের স্বাদ পেতে চাইছিলেন, তা কিন্তু নয়। মার্কিন মুলুকের ক্যামব্রিয়া বছর ছয়েক আগে যমজ সন্তানের মা হয়েছিলেন। খুশির আলো ছড়িয়ে পড়েছিল ঘর-দুয়ারে। কিন্তু আবার যখন তিনি সন্তানধারণের সিদ্ধান্ত নিলেন, তখনই দেখা দিল সমস্যা। যমজ সন্তানের জন্ম দেওয়ার কারণেই নানারকম শারীরিক জটিলতার মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে। সে কারণেই তাঁর পক্ষে নিজের গর্ভে সন্তানধারণ আর সম্ভব ছিল না। অর্থাৎ মা হওয়ার ইচ্ছে থাকলেও, ক্যামব্রিয়া নিরূপায়। এই পরিস্থিতিতেই তাঁর কাছে উপায় হয়ে এলেন তাঁরই শাশুড়িমা ন্যান্সি। বয়স ৫৬ বছর। এই বয়সে তিনি যে এমন একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তা বোধহয় কল্পনাও করতে পারেননি ক্যামব্রিয়া। তবে ন্যান্সি ছিলেন নিজের সিদ্ধান্তে অটল। জানিয়ে দিয়েছিলেন, পুত্রবধূর মাতৃত্বের স্বাদ তিনি পূরণ করবেনই। আর সে জন্য নিজের নাতি কিংবা নাতনিকে গর্ভে ধারণ করতে তাঁর দ্বিধা নেই। সহায় হল চিকিৎসাবিজ্ঞান। সারোগেসির মাধ্যমে এ কাজ যে করা যায়, তা জানতেন ন্যান্সি ও ক্যামব্রিয়া দুজনেই। আর একবার যখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েই গিয়েছে, তাহলে আর দেরি করে কী লাভ! অতএব পুত্রবধূর সন্তানকেই গর্ভে ধারণ করলেন ন্যান্সি। নির্দিষ্ট সময়কাল পরে জন্ম দিলেন নবজাতকের। সম্পর্কের নিরিখে এই সদ্যোজাতের তিনি ঠাকুমা, আবার একটু অন্যরকম ভাবে দেখলে মা-ও বটে। সবকিছু সুষ্ঠুভাবে মেটার পর সপরিবারে একটি ছবি প্রকাশ করেছেন ক্যামিব্রিয়া। যেখানে আন্তরিক ভাবে ন্যান্সিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। নবজাতকের নাম রাখা হয়েছে ‘হ্যানা’। ভালোবেসে নাতনির এই নাম রেখেছেন ন্যান্সি নিজেই।
আরও শুনুন: কী কাণ্ড! মাছ খেতে গিয়ে বিপত্তি, কাঁটাচামচ কামড়ে ধরল ‘জ্যান্ত মাছ’
ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর নেটিজেনরা যেমন অবাক হয়েছেন, তেমন আপ্লুতও হয়ে পড়েছেন। ন্যান্সির মহানুভবতার প্রশংসা শোনা গিয়েছে তাঁদের মুখে। একজন নারীর মাতৃত্বের অপূর্ণ ইচ্ছে পূরণ করতে পারেন আর-এক নারীই। এ তো জানা কথাই। তবে ক-জন আর অন্যের ইচ্ছেপূরণে এভাবে এগিয়ে আসেন! ন্যান্সি-ক্যামব্রিয়ার জীবনের এই গল্প তাই শাশুড়ি-বউমার প্রচলিত দ্বন্দ্বমুখর গল্পগাছার মধ্যে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম হয়েই থাকল।