গোটা দ্বীপে একমাত্র মহিলা তিনিই। বাকি যারা এই দ্বীপের বাসিন্দা, তারা কেবল পুরুষই নয়, সকলেই ভয়ংকর অপরাধী। কিন্তু কোনোরকম ভাবে বাধ্য হয়ে নয়, একেবারে স্বেচ্ছাতেই এই দ্বীপে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওই মহিলা, জিউলিয়া মানকা। কেন এমন কাজ করেছেন তিনি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
এই দ্বীপের কুখ্যাতি রয়েছে ভূতুড়ে বলে। সেই কারণেই এই দ্বীপে পাকাপাকিভাবে বাস করেন না কোনও মানুষই। একসময় কেবল ভয়ংকর বন্দিদেরই এখানে নির্বাসন দেওয়া হত। আর এখন নাকি সেই দ্বীপেই থাকেন এই মহিলা। তাঁর সঙ্গী কেবল একদল অপরাধীই। কিন্তু যাদের সংস্রব এড়িয়ে চলতেই চান অধিকাংশ মানুষ, এই মহিলা তাঁদের সঙ্গেই থাকেন কেন? তবে কি অপরাধীদের হাতে বন্দি তিনি? কিন্তু জানা গিয়েছে, আদৌ তেমন কোনও ঘটনা ঘটেনি এক্ষেত্রে। বরং এই দ্বীপে বেড়াতে এসে একেবারে স্বেচ্ছায় এখানে থেকে গিয়েছেন ওই মহিলা।
আরও শুনুন: পাটনা স্টেশনের পর্ন-কাণ্ডের পরই ‘রহস্যময়’ টুইট, নিজের ভিডিও চিনতে পারলেন তারকা?
আসলে নিজের সঙ্গে একান্তে সময় কাটানোর জন্যই এহেন নির্জন দ্বীপটিকে বেছে নিয়েছিলেন ওই মহিলা। নাম তাঁর জিউলিয়া মানকা। ২০১১ সালে ইতালির পিয়ানোসা নামে এই দ্বীপটিতে বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। এই দ্বীপে একটিমাত্র হোটেল রয়েছে। সেই ‘হোটেল মিলেনা’-র সব কর্মীই দাগি অপরাধী। মূল সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ওই দ্বীপে রাখা হয়েছে তাঁদের। তবে তাঁদের যাতে সংশোধন করা যায়, সেই কারণেই হোটেলের সবরকম কাজ সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ওই অপরাধীদের। বেড়াতে গিয়ে এমন কাণ্ড দেখে আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলেন জিউলিয়া। আর তার পরই সেখানে পাকাপাকি ভাবে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনি। বর্তমানে ওই হোটেলটিরই ম্যানেজার তিনি। হোটেলে রয়েছে ১১টি ঘর। যেখান থেকে আশেপাশের দুর্দান্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন পর্যটকেরা। আর রান্না থেকে সাফাইয়ের কাজ, সবটাই সামলান ১০ জন পুরুষ, সমাজের চোখে যাঁরা প্রত্যেকেই অপরাধী। তাঁদের জন্য মোতায়েন থাকেন এক জন কারারক্ষী। আর হোটেলের যাবতীয় দায়িত্ব রয়েছে গোটা দ্বীপের একমাত্র মহিলা জিউলিয়ার উপরেই।
আরও শুনুন: দুর্ঘটনা যেন কারও প্রাণ না কাড়ে! ১৫০০ জনের সাইকেলে আলোর ব্যবস্থা করলেন তরুণী
ওই মহিলা যখন টুরিস্ট হিসেবে দ্বীপে আসেন, হোটেলের সেই সময়কার ম্যানেজার তাঁকে জানিয়েছিলেন, অর্থাভাবে যে কোনও দিন বন্ধ হয়ে যেতে পারে হোটেলটি। কিন্তু যে হোটেলকে ঘিরেই মূল স্রোতে ফিরে আসার একটা সুযোগ পাচ্ছেন অপরাধীরা, তা না থাকলে তো সেই সুযোগটাও বন্ধ হয়ে যাবে। এমনটা হোক, চাননি ওই মহিলা। আগে ট্যুরিস্টদের এজেন্ট হিসাবে কাজ করতেন তিনি। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েই এই হোটেলের ভার তিনি তুলে নেন নিজের হাতে। প্রথম দিকে কোনও পারিশ্রমিকও নিতেন না তিনি। নিজের হাতেই এই হোটেলের অনেকখানি উন্নতি ঘটাতে পেরেছেন ওই মহিলা। শুধু তাই নয়, হোটেল সামলানোর পাশাপাশি দ্বীপে আসামিদের জন্য যে পুনর্বাসন কেন্দ্র রয়েছে, তার তদারকিও করেন তিনি। ভয়ংকর অপরাধীদের সঙ্গে তাঁকে থাকতে দেখে ভয় পেয়েছিলেন অনেকেই। কেউ কেউ তো তাঁকে পাগল বলতেও ছাড়েননি। বিশেষ করে সকলেই যেখানে পুরুষ, সেখানে তাঁর উপরে যৌন নির্যাতন হওয়ার আশঙ্কাও ছিল। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই ঘটেনি। বরং বাইরের দুনিয়ার থেকে এখানেই নিজেকে বেশি সুরক্ষিত মনে করেন তিনি, এমনটাই জানিয়েছেন জিউলিয়া মানকা।