প্রায় সারা বছরই পর্যটকে মোড়া থাকে ইংল্যান্ডের এই শহরটি। তাকে ঘিরে রোমাঞ্চের শেষ নেই। গন্ডোলায় ভাসতে ভাসতে সেই স্বপ্নসফর রূপোলী পর্দায় দেখে ইতালিতে পৌঁছে যেতে চাননি, এমন মানুষ বোধহয় হাতে গোনা। কিন্তু সেই স্বপ্নের শহরেই রয়েছে একটি অভিশপ্ত দ্বীপ। যেখানে একবার গেলে, ফেরে না আর কেউ। আসুন, শুনি সেই অভিশপ্ত দ্বীপের গল্প।
শুনলে কোন ভূতের গল্প বলেই ভুল হতে পারে। তবে ইটালির এই গাইওলা দ্বীপের গল্প হার মানাবে তাকেও। ইটালির নেপলেস উপকূল থেকে ৯০ ফুট দূরে অবস্থিত এই গাইওলা দ্বীপ, যাকে ঘুরে আরও আবর্তিত হয় হাজার রকম ভৌতিক গল্পমালা।
এই দ্বীপ জুড়ে রয়েছে একটি সুবিশাল ভিলা। যেখানে সব মৃত্যুই নাকি অস্বাভাবিক। আর সেই অপঘাতে মৃত্যুর তালিকা এতটাই লম্বা যে সে দ্বীপের নামই হয়ে গিয়েছে অভিশপ্ত দ্বীপ। ১৯ শতকে সেখানে থাকতেন লুইগি নেগরি নামে এক ব্যক্তি। তাঁর ছিল বিশাল মাছের ব্যবসা। তবে এসবের আড়ালে তিনি একজন যাদুকর ছিলেন বলেও মনে করতেন নিন্দুকে। তা আঠারো শতকের শেষের দিকে লুইগিই তৈরি করান সুবিশাল ওই ভিলা। তবে তার পরেই হঠাৎ ভয়াবহ আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে পড়তে শুরু করেন তিনি। আস্তে আস্তে বেচে দিতে হল সবকিছুই। ঘটিবাটির সঙ্গে গেল দ্বীপও। নুইগির থেকে দ্বীপ-সহ গোটা ভিলাটি কিনে নিলেন হান্স ব্রাউন নামে এক সুইস ব্যক্তি। ভিলায় থাকতেও শুরু করেওছিলেন তাঁরা। তবে ভোগ করা হল না শেষপর্যন্ত। একদিন হান্সের দেহ মিলল কার্পেটে পেঁচানো অবস্থায়। স্বল্প দিনের মাথায় তাঁর স্ত্রীও মারা গেলেন জলে ডুবে। কীভাবে ঘটল দু-দুটি মৃত্যু, তার কিনারা পেল না কেউ।
আরও শুনুন: পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম বসতি! গোটা দ্বীপে থাকে একটিই মাত্র পরিবার
এরপর সেই ভিলার মালিকানা গেল ওটো গ্রানব্যাক নামে এক ব্যক্তির কাছে। না, তার কপালেও ভোগ লেখা ছিল না। ভিলায় ছুটি কাটাতে এসে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল তাঁর। এর পরে বেশ কয়েকটি হাত ঘুরে ভিলাটি গেল মিউরিক ইভস স্যান্ডোজ নামে এক লেখকের হাতে। তবে আশ্চর্য কাণ্ড, ওই ভিলাটি কেনার পরে পরেই উন্মাদ হয়ে গেলেন মিউরিক। দিনে দিনে অবস্থা এতটাই খারাপ হল, যে অ্যাসাইলামে রেখে আসা হল তাঁকে। আর শেষমেশ সেখানেই আত্মঘাতী হলেন ওই লেখক।
তাঁর পরে আরও এক জার্মান শিল্পপতি ওই ভিলাটি কিনেছিলেন। কিন্তু এই ভিলার ইতিহাসেই যে লেগে রয়েছে অভিশাপ। অল্পদিনের মাথায় দেউলিয়া হয়ে গেল তাঁর সংস্থা। অন্য এক শিল্পপতিকে দ্বীপ-সহ ভিলাটি বেচে পরিত্রাণ পেলেন তিনি। তাঁর হাত থেকে ভিলাটি যিনি কিনেছিলেন, তিনি ছিলেন সেসময়ে ফিয়াট সংস্থার প্রধান। তবে দ্বীপটি হস্তান্তরের কিছুদিনের মাথায় জিয়ানি অ্যাগনেলি নামে সেই শিল্পপতির জীবনেও নেমে আসে অন্ধকার। হঠাৎই পথদুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তাঁর পরিবারের বেশ কয়েকজন। ভয়ঙ্কর ভয় পেয়ে গেলেন জিয়ানি। তড়িঘড়ি দ্বীপটি এক মার্কিন শিল্পপতিকে বেচে ইটালি ছাড়লেন তিনি। তবে সেই শিল্পপতিও বাঁচলেন না ভিলার অভিশাপ থেকে। কিছুদিনের মাথায় আত্মঘাতী হলেন তাঁর বড় ছেলে। অস্বাভাবিক মৃত্যু হল তাঁর ছোটো ছেলেরও। দুষ্কৃতীদের হাতে অপহৃত হতে হল তাঁর একমাত্র নাতিকেও। ভয়ে, আতঙ্কে ওই দ্বীপ ছেড়ে পালালেন তিনিও। ওই দ্বীপের সর্বশেষ যে মালিক তাঁরও জীবনটা অন্ধকারে ভরিয়ে তুলেছিল ওই ভিলা। পথদুর্ঘটনায় মারা যান তাঁর স্ত্রী। আর তাঁর নিজের বাকি জীবনটা কেটেছিল গরাদের পিছনে।
আরও শুনুন: পাঁচ হাজার শীত-বসন্ত দেখেছে এ গাছ! খোঁজ মিলল পৃথিবীর প্রাচীনতম বৃক্ষের
দ্বীপটি যে অভিশপ্ত, স্বাভাবিক ভাবেই এ কথা চাউর হতে খুব বেশিদিন লাগেনি। ১৯৭৮ সাল থেকে সরকারি অধীনে রয়েছে এই গাইওলা দ্বীপটি। এখন অবশ্য গাইওলা আন্ডার ওয়াটার পার্ক বলেই এখন বেশি খ্যাত জায়গাটি। তবে ওই দ্বীপকে ঘিরে আজও ঘোরাফেরা করে একগাদা ভৌতিক গল্প। এখনও ওই দ্বীপে রাত কাটানোর কথা ভাবতেও শিউরে ওঠেন স্থানীয়রা। ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে জনবসতিহীন পড়ে রয়েছে দ্বীপখানা। সেখানে অপদেবতার নিশ্চিত অভিশাপ রয়েছে বলেই বিশ্বাস বাসিন্দাদের। ফলে খুব প্রয়োজন না-হলে জায়গাটিকে এড়িয়েই চলেন তাঁরা। সব মিলিয়ে আজও বেশ ভয় ধরানো কিন্তু ইটালির এই দ্বীপ।