বয়সের ভারে প্রাচীনতম। ইতিহাসের দলিল অনায়াসে বলা যায়। এখনও জীবিত রয়েছে এমনই কিছু গাছ। দূর-দুরান্তের পর্যটকরা ভিড় করেন সেসব দেখতে। কোনওটা আবার ধর্মীয় কারণে বিশেষ। তালিকায় কোন কোন বৃক্ষ-দলিল রয়েছে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
খুব সম্ভবত ক্লাস সিক্স। ভৌত বিজ্ঞান বইয়ের অন্যতম কঠিন চ্যাপ্টার, মাধ্যাকর্ষণ। সেখানেই নিউটনের সঙ্গে পরিচয়। ইনিই আবিষ্কার করেছেন মাধ্যাকর্ষণ শক্তি। সেই আবিষ্কারের গল্পও বেশ মজার। কোনও এক আপেল গাছের তলায় বসে আপেল পড়ার দৃশ্য দেখে এমন ধারণা বিজ্ঞানির মাথায় আসে।
:আরও শুনুন:
বিদ্যুতের তার নয়, গাছের পাতা ছুঁলেই শক লাগে! ‘সুইসাইড প্ল্যান্ট’-এর কথা জানেন কি?
এখন অবশ্য বিষয়টা অনেক বদলেছে। সোশাল মিডিয়ার দৌলতে নিউটন নানাভাবে ধরা দিচ্ছেন। আপেল পড়ার গল্পটাও মিমের আড়ালে কৌতুক হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ বিষয়টা এতটাই রসিকতার পর্যায় নিয়ে গিয়েছেন, যে বিষয়টার গুরুত্বই হারিয়েছে। তবে একটা বিষয় অস্বীকারের উপায় নেই, এভাবে নিউটন আর তাঁর মাথায় আপেল পড়ার কাহিনি সবার জানা হয়ে গিয়েছে। অনেকে বলেন, বিষয়টা আদৌ এমন নয়। অর্থাৎ বাস্তবে এমন কোনও আপেল গাছ ছিলই না, যার তলায় নিউটনকে বসতে হয়েছিল। এতবড় বিজ্ঞানি, অন্য কোনও ভাবে মাধ্যাকর্ষণের তত্ব্ব আবিষ্কার করেছেন। কিন্তু সত্যিই কি তাই?
:আরও শুনুন:
গাছ কাটতে গেলেই রক্ত ঝরে, কোথায় রয়েছে এমন ‘ব্লিডিং ট্রি’?
ইংল্যান্ডের উলসথোর্পে হাজির হলেই মিলবে উত্তর। সেখানেই রয়েছে ঐতিহাসিক আপেল গাছ। যা নিউটনের স্মৃতি বিজড়িত। বলা হয়, এই গাছের নীচে বসেই মাধ্যাকর্ষণ আবিষ্কার করেছিলেন বিজ্ঞানী। কিন্তু এত বছর ওই গাছ জীবিত আছে কিভাবে? সেখানেও অদ্ভুত এক কাহিনি শোনা যায়। ১৮২০ সালে কোনও এক ঝড়ে গাছটার মারাত্মক ক্ষতি হয়েছিল। কিন্তু ম্যাজিকের মতো ফের মাথা তুলে দাঁড়ায় এই আপেল গাছ। সেই থেকে একভাবে দাঁড়িয়ে আছে। সংরক্ষণ অবশ্যই হয়। তাও বেঁচে থাকার জন্য গাছটির জীবনিশক্তিও একান্ত প্রয়োজন। যা এই গাছের রয়েছে। বাস্তবে নিউটন সত্যিই এই গাছের নীচে বসেই মাধ্যাকর্ষণ আবিস্কার করেছিলেন কি না, সেটা তর্কের বিষয়। তবে ইতিহাসের দলিল হিসেবে এই আপেল গাছকে গণ্য করা যেতেই পারে। ২০০ বছরেরও বেশি টিকে থাকা তো আর মুখের কথা নয়!
:আরও শুনুন:
‘গেছো মেয়ে’! লোকে যাই বলুক, গাছে চড়েই পুরুষদের মতো উপার্জন তরুণীর
একইভাবে মাসাচুসেটাসের হেমলক গাছটিও বেশ বিখ্যাত। এর উদাহরণ অবশ্য বিজ্ঞানে নয়, সাহিত্যে মেলে। বিভিন্ন কবিতায়, গল্পে, নাটকে এই গাছের উল্লেখ রয়েছে। যার বাস্তব অস্তিত্ব আমহার্স্ট অঞ্চলে। বয়সের ভারে এর অভিজ্ঞতাও কম নয়। তাই অনেকেই স্রেফ হেমলক গাছ দেখবেন বলে হাজির হন। শুধু যে বিদেশের মাটিতেই এমন আশ্চর্য গাছ রয়েছে তা নয়। ভারতেও এমন আশ্চর্য গাছ রয়েছে। বৌদ্ধগয়ার বোধিবৃক্ষের কথা এক্ষেত্রে সবার আগে বলতে হয়। এই গাছের নীচে বসেই গৌতম বুদ্ধ বোধিলাভ করেছিলেন। এখানেই শিষ্যদের ধর্মের পাঠ দিতেন তিনি। তবে সেই ঘটনা বেশ প্রাচীনকালের। এতদিন ওই গাছটিই জীবিত আছে তা বিশ্বাস করা কঠিন। তবে ওই স্থানে যে গাছটি রয়েছে তা পুরনো গাছটির থেকে জন্ম নেওয়া বা তার শাখা বলাই যায়। পবিত্র এই গাছ যত্ন করে সংরক্ষণ করা হয়েছে সরকারের তরফেও। বয়সের ভারে এই গাছও যে কম নয়, তা দেখলেই বোঝা যায়। এখানেও পর্যটক বা বৌদ্ধ সন্নাসীদের ভিড় লেগেই থাকে। আবার গুজরাতের বাহ্রুচ অঞ্চলে সুপ্রাচীন এক বটগাছ রয়েছে। স্থানীয় বিশ্বাস এই গাছে ১৫ শতকের। এতদিন ধরে জীবিত। প্রায় ৪ একর জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে আছে ওই একটিই গাছ। না দেখলে তার দৈত্যাকার চেহারা বিশ্বাস করা যায় না। মনে করে হয় এটিই ভারতের সবেচেয়ে বড় বটগাছ। এই তকমা অবশ্য শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনের একটি বটগাছেরও রয়েছে। এখানেও পর্যটকদের ভিড় জমে রীতিমতো। নানা ইতিহাসের সাক্ষী এই গাছ মনে করিয়ে দেয় প্রাচীনত্বের কথা। প্রায় সাড়ে ৪ একর জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই গাছটি বিশ্বরেকর্ডের খাতাতেও নাম তুলেছে। এমনই আরও কতশত প্রাচীন গাছ ছড়িয়ে আছে বিশ্বের নানাপ্রান্তে তার ইয়ত্তা নেই। তার মধ্যে বিশেষ কিছু ঘটনার জন্যই বিখ্যাত হয়ে আছে কয়েকটি।