ছোটবেলায় মি. বিন দেখেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। আট থেকে আশি সকলের পরিচিত এই বিখ্যাত টিভি সিরিজ। আর এই সবটাই সম্ভব হয়েছে রোয়ান অ্যাটকিনসনের অভিনয়ের দাপটে। কিন্তু জানেন কি, প্রথম দিকে এই সিরিজের নাম মি. বিন ছিলই না। ঠিক কী ছিল বলুন তো? আসুন শুনে নিই।
ঢিলাঢালা কোট। হাতে একটা টেডিবিয়ার। সবুজ গাড়ি চড়ে শহরের ইতিউতি ঘুরে বেড়াচ্ছেন এক ভদ্রলোক। কোনও কথা নেই। স্রেফ চোখ মুখের এক্সপ্রেশন। আর তা দেখেই হেসে লুটোপুটি খাচ্ছেন সকলে। নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছেন কার কথা বলছি। ছোটবেলার সেই জনপ্রিয় চরিত্র, মি. বিন। প্রথমে অবশ্য এই চরিত্রের অ্যানিমেশন দেখতেই সকলে অভ্যস্ত ছিল। কিন্তু রোয়ান অ্যাটকিনসন এমনভাবে এই চরিত্র পর্দায় ফুটিয়ে তুলতেন, যা একবার দেখলে বোঝার উপায় ছিল না, এটা অভিনয়।
আরও শুনুন: খেলতে বা হাঁটতে নয়, এই পার্কে হিরে খুঁজতে ভিড় জমান সকলে…ব্যাপারটা কী?
অবশ্য খুব একটা দরকারও পড়ত না বোঝার। মন ভালো থাকুক, খারাপ থাকুক সব পরিস্থিতিতেই আনন্দ দিতে জানতেন মি. বিন। টিভিতে যা দেখানো হত তার পুরোটাই বিদেশের দৃশ্যপট। অথচ যে কোনও দেশের মানুষজন ধরে নিতেন বিন তাঁদের পাড়াতেই হাঁটছেন। খানিকটা চ্যাপলিনের কথা মনা করাতেন বিন। তবে সেখানে যেমন বেশ গভীর কিছু সামাজিক বার্তা লোকানো থাকত, বিন সেই ভাবে কিছু বলতেন না। তাঁর কাছে জীবনটা খুব সহজ। তাই দর্শকরাও যাতে সহজভাবে জীবনটাকে দেখতে পারেন সেটাই মনে করিয়ে দিতেন বিন। কিন্তু সহজ ভাবলেই তো আর সহজ হয়ে যাবে না সবকিছু! অন্তত চারপাশের পরিবেশ তা হতে দেবে না। বিনের জীবনেও তাই হাজারও সমস্যা লেগে থাকতো। আর সেসব কাটিয়ে কীভাবে হাসতে হাসতে বাঁচতে হয়, তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিতেন বিন। কখনও ভুল জায়গায় গাড়ি পার্ক করার সমস্যা, কখনও আবার সামান্য আয়োজনে বিরাট কিছু করার ভাবনা, সবেতেই বেশ গোলমাল পাকাতেন বিন। প্রতিটা এপিসোড হত এমনই কিছু গোলমাল আর সেখান থেকে বেরানোর জার্নিটা নিয়ে। অন্যান্য চরিত্রও ছিল। তবে সব এপিসোডে যে চরিত্র থাকবেই, তা হল বিনের টেডিবিয়ার। একলা জীবনে বিনের সব কিছু ওই টেডিকে ঘিরেই। কান্না পেলেও টেডিকে জড়িয়েই তিনি কাঁদেন, আবার আনন্দ হলেও সেই টেডিই ভরসা। বিনের হাতে থাকলে মনেই হত না, ওই টেডিবিয়ারের আসলে কোনও প্রাণ নেই। তাই হয়তো ছোটরা এত বেশি নিজেদের সঙ্গে বিনকে মেলাতে পারতেন। ছোটবেলায় পুতুলের সঙ্গে খেলা করার, কথা বলার অভ্যাস নিশ্চয়ই আপনারও ছিল!
আরও শুনুন: নেশা ছাড়ানোর ওষুধ! খেলার কাছে হার মানল মাদকের আকর্ষণ, এই গ্রামে সবাই ‘দাবাড়ু’
তবে শুরুর দিকে, এই জনপ্রিয় সিরিজের নাম মি বিন ছিলই না। নাম হিসেবে ঠিক হয়েছিল মি হোয়াইট। তবে সেই নামও টেকেনি। এরপর ঠিক হয়, সিরিজের নাম হবে কোনও চেনা সবজির নামানুসারে। সেইমতো একাধিক সবজির নাম উঠে আসে। শেষমেশ ঠিক হয়, মি কলিফ্লাওয়ার। কিন্তু না, এই নামও বদলে যায়। ঠিক কী কারণে তা জানা যায়নি। এরপর সিরিজের নাম রাখা হয়, মি. বিন। সেই নাম আর বদলায়নি। দেশ বিদেশ সর্বত্র এই নামেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই কৌতুক সিরিজ। আরও একটা কথা না বললেই নয়। সেটা অবশ্য রোয়ান অ্যাটকিনসন সম্পর্কে। পর্দার মি বিন যতই হাস্যকর হন, বাস্তবে তাঁর মতো সিরিয়াস মানুষ নাকি কমই দেখা যেত। পেশায় অভিনেতা হলেও বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়রিং পাশ করেছেন রোয়ান। মি. বিনের পাশাপাশি বিভিন্ন সিনেমাও করেছেন। কোথাও গোয়েন্দা চরিত্র, কোথাও আবার অন্য কোনও সিরিয়াস চরিত্র। তবে মি বিন-এর দৌলতেই তাঁর যাবতীয় পরিচয়।