কে বলে আইন আদালত এসব শুধু মানুষের জন্য। বন্য জীবজন্তুদেরও রয়েছে আইনি অধিকার। মাঝেমধ্যে হাইকোর্ট দেখানোর ক্ষমতা রয়েছে তাদেরও। অন্তত এই দেশে তো রয়েইছে। সম্প্রতি ইকুয়েডরে স্বীকৃত হয়েছে বন্য জীবজন্তুদের আইনি অধিকার। যা বিশ্বে সম্ভবত প্রথম। ব্যাপারটা ঠিক কেমন? আসুন, শুনে নিই।
বন্যপ্রাণ আইন তো শুনেছেন। বন্যপ্রাণীদের আইনি অধিকারের কথা শুনেছেন কি? তবে সেই ব্যাপারটাই এবার হাতেনাতে করে দেখিয়ে দিল ইকুয়েডর। বিশ্বে প্রথমবার কোনও দেশে স্বীকৃত হল বন্যপশুদের আইনি অধিকার।
কত সময়েই তো জ্ঞাতে বা অজ্ঞেতে বন্যপ্রাণীদের মৌলিক অধিকার খর্ব করে থাকি আমরা। গাছ কেটে ফেলি। কেড়ে নিই পাখিদের বাসস্থান। বনজঙ্গল সাবাড় করে গড়ে ওঠে অট্টালিকা। উৎসব-আনন্দের মরসুমে পাড়ার কুকুরের ল্যাজে কালিপটকা বেঁধে মজা দেখে কত বিকৃতমনস্ক মানুষ। কিন্তু পশুপাখিদের তো আইন-আদালত নেই। তারা নালিশ জানায় কাকে? সব চেয়ে বড় কথা, পশুদের তো আইনে অধিকারই নেই। পশু সুরক্ষা আইন আছে বটে। কিন্তু তাতেই যে সবটা হয় তা তো নয়। তবে এবার বন্যপ্রাণীদের অধিকার নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিল সে দেশের প্রশাসন। সম্প্রতি দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডরে স্বীকৃত হয়েছে প্রাণীদের আইনি অধিকার। এ কথা ঘোষণা করেছে সে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
আরও শুনুন: মানুষ প্রায় নেই বললেই চলে! এই দ্বীপে বসবাস কয়েক হাজার বিড়ালের
ঘটনার সূত্রপাত একটি বাঁদরকে নিয়ে। এস্ট্রেলিটা নামে রোমশ সেই বাঁদরটি আঠারো বছরের বেশি সময় ধরে ছিল অ্যানা বিয়াত্রিজ নামে এক মহিলার সঙ্গে। পেশায় লাইব্রেরিয়ান অ্যানার প্রিয় পোষ্য ছিল এস্ট্রেলিটা। প্রায় এক মাস বয়স থেকেই সে রয়েছে বন থেকে বিচ্ছিন্ন। সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল। গোল বাধল অন্য জায়গায়। বন্যপ্রাণীদের বাড়িতে পোষা বারণ বলে ২০১৯ সালে বাঁদরটিকে বাজেয়াপ্ত করে ইকুয়েডরের বনদপ্তর। তবে অ্যানার থেকে আলাদা হয়ে বেশিদিন বাঁচেনি বাঁদরটি। চিড়িয়াখানায় রাখার কদিনের মধ্যেই মারা যায় এস্ট্রেলিটা।
ঘটনায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে বনদপ্তরের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়ে মামলা ঠুকে বসেন অ্যানা। সেই মামলা চলেও বেশ কয়েকদিন। শেষমেশ এস্ট্রেলিটার পক্ষেই রায় দিয়েছে ইকুয়েডরের আদালত। তবে সেখানে বিপাকে পড়েছেন খোদ মামলাকারীও। কারণ বিচারপতি জানিয়েছেন, অ্যানার থেকে বাঁদরটিকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে প্রশাসন যেমন তার আইনি অধিকার খর্ব করেছে। তেমন ভাবেই জঙ্গল থেকে বাঁদরটিকে বাড়িতে নিয়ে এসেও একরকম ভাবে তার অধিকার কেড়ে নিয়েছিলেন অ্যানা।
আরও শুনুন: সেনাবাহিনীতে চাকরি পেল পেঙ্গুইন, মিলল ‘স্যার’ উপাধিও
আর এই মামলার পরেই বন্যপ্রাণীদের অধিকার নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে সেদেশের সংবিধান। বাঁদরটির সঙ্গে যা হয়েছে, তা অনভিপ্রেত জানিয়ে পশুপাখিদের আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠার উপরে জোর দিয়েছেন বিচারপতি। ইকুয়েডরের সংবিধানে ‘প্রকৃতির অধিকার’ ব্যপারটি আগেও ছিল। বন্যাপ্রাণী ধরা, আটকে রাখা বা পোষা কিংবা পাচার, এসব নিয়ে আগেও বিধিনিষেধ ছিল যথেষ্টই। তবে আদালতের এই বক্তব্য সব ধরনের জীবজন্তুর ক্ষেত্রেই তাদের সুরক্ষার ব্যাপারটি আরও জোরালো করে তুলল। এ ব্যাপারে কড়া পদক্ষেপ নিতে পরিবেশমন্ত্রককেও পাশে চেয়েছে আদালত। আর শেষমেশ সেই আইন স্বীকৃতও হয়েছে ইকুয়েডরে। প্রাণী অধিকার নিয়ে এখনও পর্যন্ত সে দেশে পাশ হওয়া আইনগুলির মধ্যে এটিই সম্ভবত সর্বোচ্চ। ফলে আপনি বলতেই পারেন, বিশ্বে প্রথম এত বড় একটা আইনের লড়াই অবলিলায় জিতে ফেলেছে কোনও একটি দেশের পশুপাখিরা।