হস্তমৈথুন নিয়ে অনেকেরই ছুঁৎমার্গ থাকে। তবে যদি অভ্যাসের কথা ধরা হয়, তাহলে কিন্তু প্রায় কেউ-ই এর বাইরে নন। আসলে আত্মরতি বা যৌনসুখ পাওয়ার এই যে রীতি তা তো আজকের নয়। প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাসেও হস্তমৈথুনের বহু দৃষ্টান্ত মেলে। এমনকী নদীর পারে এসে হস্তমৈথুন করা প্রথাই ছিল এককালে। কোন সময়ে কোন দেশের কথা বলা হচ্ছে? জানালেন চৈতালী বক্সী।
শুধু যৌনসুখ লাভ করাই নয়, মানসিক দুশ্চিন্তা কমানো থেকে শুরু করে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখা-সহ নানা উপকারি দিক রয়েছে হস্তমৈথুনের। এমনটা বলে থাকেন বহু বিশেষজ্ঞই।তবে নিজেকে যৌনসুখ দেওয়ার এই প্রবণতা কতটা যথাযথ? এ নিয়ে তর্ক বিতর্ক চলতেই পারে। অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের খারাপ দিকও আছে, যা সন্তানহীনতার মতো সমস্যাও ডেকে আনতে পারে। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে হস্তমৈথুন একটি স্বাভাবিক এবং স্বতঃপ্রণোদিত প্রক্রিয়া। এমনকী সভ্যতার ইতিহাস ঘাঁটলেও দেখা যায়, হস্তমৈথুনের কিন্তু বিশেষ গুরুত্ব আছে।
আরও শুনুন: ম্যারাথন যৌনতাতেও টানটান পুরুষাঙ্গ, কোন কায়দায় হাসিল করেন পর্নতারকারা?
বিভিন্ন সৃষ্টির ইতিহাসে, পুরাণ বা উপকথায় দেখা যায়, সৃষ্টিতত্ত্বে যোগ আছে হস্তমৈথুনের। বর্তমানে আত্মরতি বা নিজে নিজের যৌন চাহিদা পূরণের বিষয়টিকে আমরা খুবই নীচু নজরে দেখি। কিন্তু পৃথিবীর আদি সভ্যতা মেসোপটেমিয়ার মানুষরা বিশ্বাস করত যে, হস্তমৈথুন পুরুষ এবং নারী উভয়েরই যৌনক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। সেকালের মানুষরা তাই প্রায়ই হস্তমৈথুনে রত হতেন। কথিত আছে, এই সভ্যতার দুই প্রধান নদী- টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিসের সৃষ্টিই হয়েছিল হস্তমৈথুনজাত বীর্যপাত থেকে। সুমেরীয় উপকথা অনুযায়ী, জ্ঞান ও মিষ্টি জলের দেবতা ‘এনকি’-র হস্তমৈথুনের ফলে ওই নদী দুটির সৃষ্টি হয়েছিল।
আরও শুনুন: ৫০ জন পুরুষ ব্যর্থ! অথচ ৫ সেকেন্ডেই চূড়ান্ত যৌনসুখ পেলেন মহিলা, কী সেই ‘সিক্রেট’?
এবার আসা যাক মিশরীয় সভ্যতার কথায়। যেখানকার মানুষ নীলনদকেই বয়ে চলা জীবনের কেন্দ্র মনে করত। আর সেই নীলনদের ধারে এসে হস্তমৈথুন করা তখনকার ফ্যারাওদের কাছে ছিল এক বাধ্যতামূলক প্রথা। দেবতাকে অনুসরণ করে তাঁরা এই অদ্ভুত রীতি পালন করতেন। মিশরীয় উপকথা অনুযায়ী, মিশরীয়দের সর্বশ্রেষ্ঠ দেবতা আতুম, হস্তমৈথুন করে নীলনদ ও তাকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর সৃষ্টি করেছিলেন। আর এই কাজে ব্যবহৃত তাঁর হাতটিকে, পরবর্তীকালে দেবতা আতুমের অন্তর্নিহিত নারীসত্তা হিসেবে, মিশরীয় সভ্যতার অন্যান্য দেবীদের সমান মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
আরও শুনুন: দিনে দিনে কমছে যৌন ইচ্ছা, হস্তমৈথুনের সময় এই ভুল করছেন না তো!
বিশ্বজুড়ে প্রাগৈতিহাসিক কালের, পাথরে আঁকা চিত্রে নারী ও পুরুষদের হস্তমৈথুনের ছবি দেখা যায়। প্রাচীন মিশরে পুরুষদের হস্তমৈথুনকে একটি বিশেষ শিল্প ও সৃজনশীল বিষয় হিসেবে দেখা হত। প্রাচীন গ্রীকরাও হস্তমৈথুনকে, যৌনতৃপ্তি উপভোগের একটি, স্বাভাবিক এবং স্বাস্থ্যকর পদ্ধতিই মনে করত। বলা হয়, গ্রীক সমাজ হস্তমৈথুনের কৌশল রপ্ত করে মেষপালকদের থেকে। উপকথা অনুযায়ী, গ্রীক মেষপালকদের দেবতা প্যান, ইকোর প্রতি কামার্ত ছিল, কিন্তু ইকো তার প্রতি সাড়া দিচ্ছিল না, তখন প্যানকে কামজ্বালা থেকে মুক্তি দিতে দেবপিতা হার্মিস, পুত্রকে হস্তমৈথুনের কৌশল শিখিয়েছিলেন। আর তা পরবর্তীকালে প্যান তরুন মেষপালকদের এই কাজ শেখান। তবে প্রাচীন রোমে হস্তমৈথুনকে মোটেই তেমন ভাল নজরে দেখা হত না।
তাহলেই বুঝতে পারছেন, প্রাচীনকাল থেকেই হস্তমৈথুন মানব সমাজের একটি অঙ্গ হয়ে গেছে। হস্তমৈথুনের ইতিহাস মানব সভ্যতার সঙ্গে একাত্ম হয়েই আছে।