ভালোবেসে ঘর বাঁধা আর সঙ্গে থাকার সাধ সকলের পূরণ হয় না। কখনও ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মনের মানুষটির সঙ্গে সারা জীবন পথ চলার অধিকার মেলে না; কখনও বা উল্টোদিকের মানুষটাই সমূলে উপড়ে দেয় বহু বছরের সম্পর্ক। পুরনো স্মৃতির রেশ বারেবারে ফিরে আসা আটকানো না গেলেও, প্রাক্তন সঙ্গীর রেখে যাওয়া যা কিছু উপহার, তার থেকে এবার চাইলে রেহাই পাওয়া যাবে। এমনই বন্দোবস্ত করেছে ভারতের একটি ডেটিং-অ্যাপ সংস্থা।
‘ইমোশনাল অত্যাচার’ তো শোনা কথা। কিন্তু তাই বলে ‘ইমোশনাল ব্যাগেজ’ (Emotional Baggage) ! হয়, তা-ও হয়। ভেঙে যাওয়া সম্পর্কের পর যা কিছু পিছনে পড়ে থাকে, যে জট সম্পর্কে থেকে শুধরোতে পারেনি মানুষ, তারই পোশাকি নাম ‘ইমোশনাল ব্যাগেজ’। কিন্তু সে তো নেহাতই মেটাফর মাত্র, তা কি আবর্জনার মতো সবসমেত ধরে-বেঁধে ঘর থেকে বের করে দেওয়া যায়? নাকি চাইলেও পারা যায়? সত্যি বলতে, পুরনো স্মৃতির রেশ বারেবারে ফিরে আসা আটকানো না গেলেও, প্রাক্তন সঙ্গীর রেখে যাওয়া যা কিছু উপহার বা ব্যবহারের জিনিস, তার থেকে এবার চাইলে রেহাই পাওয়া যাবে। সম্প্রতি এমনটাই বন্দোবস্ত করে দিয়েছে ভারতের এক ডেটিং অ্যাপ সংস্থা। তা কিরকম এই বন্দোবস্ত? শহর জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে উজ্জ্বল গোলাপি একখানা গাড়ি। তাই-ই নাকি বয়ে নিয়ে চলেছে ‘ইমোশনাল ব্যাগেজ ইনসাইড’! গাড়িটির ভিতর থেকে উঁকি দিচ্ছে পেল্লায় সাইজের টেডি-বিয়ার। গয়নাগাঁটি, জামাকাপড়, চিঠিপত্র, আরও হরেক সামগ্রীতে ঠাসা! এসবই নাকি প্রাক্তন সঙ্গীদের দেওয়া উপহার, যা বিচ্ছেদের পর ফেলে যাচ্ছে মানুষ। এমন অভিনব ট্রাকটিকে ঘোরানোর উদ্যোগ নিয়েছে জনপ্রিয় ডেটিং অ্যাপ। যে-অ্যাপ গত বছর পনেরো ধরে প্রেমের পাঠ দিয়ে ভালোবাসার রাজপাট তৈরি করেছিল, তাই-ই এবার বুকে করে নিয়ে বয়ে বেড়াচ্ছে ‘মায়ার জঞ্জাল’।
আরও শুনুন: বয়স মোটে ১, একরত্তির প্রদর্শনী ঘিরে হইচই, ১৯ হাজার টাকা দাম উঠল ছবির
ভালোবাসা চিরন্তন। তবে ভালোবেসে ঘর বাঁধা আর সঙ্গে থাকার সাধ সকলের পূরণ হয় না। কখনও ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মনের মানুষটির সঙ্গে সারা জীবন পথ চলার অধিকার মেলে না; কখনও বা উল্টোদিকের মানুষটাই সমূলে উপড়ে দেয় বহু বছরের সম্পর্ক। সিনেমা হোক বা বাস্তব, এমন ঘটনার দেখা মেলে হরহামেশা। ভালোবাসা পেলে সব লন্ডভন্ড করে চলে যাওয়া যায়, আবার কখনও ভালোবাসাও তো চলে যায়। গল্পের প্রেম-জীবন আর জীবনের প্রেমের গল্পের মধ্যে তাই বিস্তর ফারাক। এদিকে, ভালোবাসা মানুষকে ছেড়ে গেলেও, মানুষ ভালবাসার অভ্যেস ছাড়তে পারে না সহজে। ‘মুভ-অন’ করবার পরেও স্মৃতি আগলে বাঁচার ইন্ধন খোঁজে। রং চটে যাওয়া, ভেঙে যাওয়া, মলিন হয়ে যাওয়া উপহারের (Emotional Baggage) কাছে ফিরে গিয়ে কখনও মানুষ শান্তি খোঁজে। কখনও বা ছুড়ে ফেলে দিয়ে মুক্তি পেতে চায়। কিন্তু কোথাও যেন বাধে। মানুষ হন্যে হয়ে ভাবে, ওসব জলাঞ্জলি দেওয়ার একটা অজুহাত যদি পাওয়া যেত কোনওভাবে!
তারই ব্যবস্থা করেছে এই ডেটিং-অ্যাপ। মনে মনে মিল ঘটানোরই কথা ছিল এই সংস্থার। ডেটিং কালচার ডানা মেলেছিল এর দৌলতে। ক্রমশ ‘বেঞ্চিং’, ‘সিচুয়েশনশিপ’, ‘হুক আপ’ ইত্যাদি অভিনব শব্দ ঢুকে পড়েছে প্রেমের অভিধানে। পশ্চিমি ডেটিং কালচারের খুঁটিনাটি এতটাই মিশে গিয়েছে ভারতীয় সমাজে, যে তা আর আলাদা কিছু নয়। সেই অ্যাপের এই উদ্যোগ জানাচ্ছে, মন যত জোড়া লাগে, তত ভাঙেও। জোড়া লাগার উদযাপন হয়, কিন্তু ভাঙার যন্ত্রণা এককের। অতএব তা থেকে মুক্তিই খুঁজছে তরুণ প্রজন্ম। সন্দেহ নেই যে, এ-ও এক ধরনের অ্যাপের প্রোমোশোন। তবে সেই প্রমোশোনের ভিতর দিয়ে ভারতীয় তরুণ সমাজের প্রেমের সুখ-অসুখের গল্পটিও বেশ স্পষ্ট।
আরও শুনুন: চটুল বিনোদন নয়, কৃষিকথার আসর বসিয়ে ইনফ্লুয়েন্সারের সংজ্ঞা পাল্টে দিচ্ছেন রাম
কিছু প্রশ্ন অতএব থেকেই যায়। এতদিন যে মানুষ প্রাক্তনের দেওয়া উপহার (Emotional Baggage)ফেলে দিত না, এমন নয়। কিন্তু এবার ঢাকঢোল পিটিয়ে সেসব উপহার ফেলে দেওয়ার ব্যবস্থা করে কি ভারতীয় ‘ট্র্যাডিশনাল’ প্রেমের ধারণায় একেবারে শেষ পেরেক পুঁতে দেওয়া নয়! ভালোবাসাকে কি কখনওই এত সামান্য হিসেবে দেখা যায়! অথচ দেখা যে হচ্ছে, তাই-ই দেশের পরিবর্তনশীল মানসিকতার হদিশ দিচ্ছে। মায়ার জঞ্জাল কেউ হয়তো লালন করেন। তবে ফেলে দিতে চান অনেকেই। সম্পর্কের ভাঙা-গড়ার চিরন্তন প্রবাহে যা কিছু আড়াল ছিল, তা আর আড়ালে রাখতে চায় না এই প্রজন্ম। এটাই বাস্তবতা। ঘুরতে থাকা ট্রাক তাই অস্ফুটে যেন বলে বলেই এগিয়ে যায়- যাক, যা গেছে তা যাক…।