সবাই দেখছে, অবাক হয়ে প্রশংসা করছে, কেউ কেউ ছবির দামও জানতে চাইছে। এমন দৃশ্য অচেনা নয়। যে কোনও প্রদর্শনীতে এমনটাই হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে একটা চমক আছে। যার প্রদর্শনী, সেই শিল্পীর বয়স মাত্র ১। অথচ তার আঁকা ছবির দাম ১৯ হাজার ২০০ টাকা!
দেওয়াল জুড়ে আঁকিবুঁকি। বাদ যায়নি বিছানার চাদর, পর্দা। কোথাও পাহাড়, কোথাও নদী, কোথাও আবার ডাইনোসোর! বিচিত্র সব চেহারা। আলাদা করে কোনটা কী, বোঝা নাও যেতে পারে। তাতে সমস্যা নেই। শিল্পীর বয়স শুনে এসব নিয়ে মাথা ঘামান না তেমন কেউ। কিন্তু এইধরনের আঁকিবুঁকি যদি মোটা টাকায় কিনতে চান কেউ?
নিজের আঁকা ছবি অন্য কারও বাড়ির দেওয়ালে শোভা পাবে এমন শখ অনেক শিল্পীরই থাকে। সেই আশায় নিজের আঁকা ছবির প্রদর্শনীও করেন অনেকে। সকলেই যে সফল হন এমন নয়। বিখ্যাত শিল্পীর ছবি যেমন কোটি টাকায় বিক্রি হয়, তেমনই দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও অবিক্রিত থেকে যায় অনেকের ছবি। কোটি টাকা দূরে থাক, হাজার টাকাও সেই ছবির জন্য খরচ করতে চান না কেউ। এক্ষেত্রে একটা গড় ধারণা বহু শিল্পীর রয়েছে। অনেকে মনে করেন, বয়স না বাড়লে শিল্পী হিসেবে কদর মেলে না। ছবি বিক্রির টাকার অঙ্কটাও নাকি সেভাবেই বাড়ে। কিন্তু এমনটা যে একেবারে ভুল তা বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। বয়স নয়, শিল্পের মূল্য নির্ধারণ করে শিল্পীর দক্ষতা। কমবয়সি শিল্পীর ছবি প্রশংসা কুড়োতে পারে অনায়াসে, আবার অভিজ্ঞ শিল্পীর ছবি তেমন কদর পেল না, এ ঘটনাও অবাক করার মতো নয়। কিন্তু শিল্পীর বয়স মাত্র ১, অথচ তার ছবি বিক্রি হয়েছে প্রায় কুড়ি হাজার টাকায়, এমনটা শুনেছেন?
জাপানের এক প্রর্দর্শনীতে রয়েছে এমনই এক ছবি। যার দাম উনিশ হাজার দুশো টাকা। শিল্পীর বয়স মাত্র ১। বিষয়টা গল্পের মতো শোনাচ্ছে, তাই না? এতটুকু গল্প নয়। পুরোটাই সত্যি। যদিও শিল্পীর আসল নাম বা পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম তাঁদের প্রতিবেদনে এই অদ্ভুত ঘটনার কথা সামনে এনেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই খুদে জাপানের বাসিন্দা। বাবা-মা দুজনেই শিল্পী। তাঁদের প্রেমের গল্পটাও বেশ অন্যরকম। যুদ্ধ্ববিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে কোনওক্রমে প্রাণ হাতে পালানোর সময় দুজনের আলাপ। ছবি আঁকাই দুজনের পেশা এবং নেশা। সেই সূত্রেই প্রেম। তারপর বিয়ে। জাপানে এসে পাকাপাকি বাস শুরু। এরপর তাঁদের জীবনে আসে এই খুদে। প্রতিবেদনে যার পরিবর্তীত নাম বলা হয়েছে থাম্বেলিনা। ছোট বেলায় অনেকেরই আঁকিবুঁকি কাঁটার অভ্যাস থাকে। থাম্বেলিনাও ব্যতিক্রম নয়। সেও যেখানে পারত আঁকা শুরু করত। বয়সটা নেহাতই কম, তাই আলাদা করে খাতা-পেন নিয়ে আঁকতে বসা সম্ভব নয়। কিন্তু সে যেভাবে পেন ধরত বা খাতায় আঁচড় কাটার ধরণ এমন ছিল, যে রীতিমতো অবাক হতেন শিল্পী বাবা-মা।
সেই থেকেই দুজনে আলাদা করে খুদের আঁকার বিষয়টাকে গুরুত্ব দিতে শুরু করেন। তাতেই ম্যাজিকের মতো কিছু বিষয় লক্ষ করেন তাঁরা। প্রতিদিন নিয়ম করে আঁকতে চাইত থাম্বেলিনা। যেমন তেমন আঁকা নয়, একেবারে নির্দিষ্ট ধাঁচে কিছু একটা নকশা। সবসময় যে বিশেষ মানে থাকছে সেই ছবির, এমন নয়। তবে বিষয়টা সাধারণ আঁকিবুঁকিও নয়। কখনও রং নিয়েও বিশেষ অনুরোধ করত এই খুদে। রীতিমতো অবাক হতেন তার শিল্পী বাবা-মা। এভাবেই তৈরি হতে থাকে একের পর এক ছবি। আলাদা করে বলে না দিলে বোঝার উপায় নেই এগুলো যে এঁকেছে তার বয়স মাত্র এক।
এরই মাঝে নিজেদের ছবি নিয়ে একটি প্রর্দশনী আয়োজন করেন দুজনে। সেখানে টাঙিয়ে রাখেন খুদে থাম্বেলিনার আঁকা ছবিটাও। অদ্ভুতভাবে সেই ছবি মনে ধরে অনেকের। একজন তো দামদস্তুর করতেও শুরু করেন। অবাক করার মতো বিষয়ই বটে। শিল্পী হিসেবে অনেকে ঈর্ষান্বিতও হতে পারেন। যেখানে বড় বড় শিল্পীর ছবি বিক্রি হয় না, সেখানে এই খুদের ছবি বিক্রি হল এত টাকায়! তাও কোনও নামী শিল্পীর সন্তান হিসেবে নয়, একজন সাধারণ শিল্পী হিসেবেই থাম্বেলিনার ছবি বিক্রি হয়েছে। আর তাতেই বিষয়টা নিয়ে শুরু হয়েছে চর্চা। খুদের শিল্পী বাবা-মাও বেশ অবাক হয়েছে এই কাণ্ড দেখে। তবে যারপরনায় খুশিও যে হয়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।