অযোধ্যার রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগেও বিতর্ক ছিল। প্রতিষ্ঠার পরেও থেকে গিয়েছে হাজার বিতর্ক। উঠেছে তা নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ। তবে, সে সব পেরিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে জায়গা করে নিল সেই রাম মন্দিরই। ঠিক কেন? আসুন শুনে নিই।
অযোধ্যার রামমন্দির। শুধু একটি মন্দির তো নয়; বলা যায়, ভারতবর্ষের রাজনীতির অভিমুখ ঘুরিয়ে দেওয়া বিন্দু। তা নিয়ে দেশের মধ্যে তর্ক-বিতর্কের শেষ নেই। তবে, দেশ পেরিয়ে বিশ্বের দরবারে কিন্তু দেশের জন্য বিশেষ স্বীকৃতি ছিনিয়ে এনেছে অয্যোধ্যার এই মন্দিরই। ২০২৪-এ যা কিছু গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এ জায়গা করে নিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম অযোধ্যার রাম মন্দির।
রামমন্দির প্রতিষ্ঠার নেপথ্যে জড়িয়ে আছে বাবরি-বিতর্কে। বলা যায়, কয়েক দশক ধরেই ভারতবর্ষের রাজনীতি এই নিয়ে আবর্তিত হয়েছে। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি ধ্বসংসের মুহূর্তটিকে, আজও অনেকে সেক্যুলার ভারতবর্ষের কালো দিন হিসাবে চিহ্নিত করে থাকেন। তবে শেষমেশ দেশের শীর্ষ আদালতে সিদ্ধান্ত মেনে নেয় বিবাদী সব পক্ষ। দীর্ঘকালীন এক বিতর্কে যেন ইতি পড়ে। ২০২৪-এ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেন রামলালার। উদ্বোধন হয় অয্যোধ্যার রাম মন্দিরের। তবে, তার পরেও যে মন্দির-রাজনীতিতে ইতি পড়েছে, তা একেবারে বলা যায় না। একাধিকবার বিরোধী দলের রাজনীতিকরা অভিযোগ করেছেন যে, রাম মন্দিরকে সামনে রাখে রাজনীতি করতে চাইছে শাসকদল। প্রত্যাশিত ভাবেই সে অভিযোগ নাকচ করেছে শাসকপক্ষ। রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার সময় সাধারণ মানুষের জমি নেওয়া নিয়েও বিস্তর অভিযোগ জমা পড়েছিল। এমনকী রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা কখনও কখনও বলেছেন যে, দেশের ভোটের হাওয়াও নিয়ন্ত্রণ করেছে রাম মন্দির। বলা যায়, উদ্বোধনের পর থেকেই রাজনীতির ময়দানে রাম মন্দিরের উপস্থিতি ছিল বেশ জোরালো। তবে, দেশের বিতর্ক দেশে থাক। বছরশেষে গিনেসের বিশ্বসেরার তালিকা দেখলে কিন্তু ভারতবাসী গর্ববোধই করবেন। কেননা, সেই সেরার তালিকায় জ্বলজ্বল করছে রামমন্দিরের নাম।
আক্ষরিক অর্থেই, গিনেসের বুকে জ্বলজ্বল করছে অয্যোধ্যার রাম মন্দির। কেননা, প্রদীপের আলোর ঔজ্জ্বলই মন্দিরকে নিয়ে এসেছে স্বীকৃতির তালিকায়। এ বছরই দীপাবলিতে প্রায় ২৫ লক্ষ প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত হয়েছিল মন্দিরে। এত সংখ্যক প্রদীপ দিয়ে আলোর মালা রচনার নমুনা বিশ্বে বিরল। স্বাভাবিক ভাবেই উত্তরপ্রদেশ সরকারের এই আয়োজন নজর কেড়েছে গোটা বিশ্বের। গড়েছে রেকর্ড। পাশাপাশি, একই সঙ্গে প্রায় ১১২১ জন প্রদীপ হাতে নিয়ে যে আলোকবৃত্ত রচনা করেছিলেন, তাও নজর এড়ায়নি গিনেস বুকের। আর সব মিলিয়েই বিশ্বে এবারে যা কিছু আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটেছে, তার তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে অযোধ্যা এবং রাম মন্দির।
রাম মন্দির তৈরি হওয়ার আগে বিতর্ক কম ছিল না। তৈরি হওয়ার পরও কমবেশি বিতর্ক চলছে। সে বিতর্ক যে অনেকাংশেই রাজনৈতিক, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে, সব দ্বন্দ্ব পেরিয়ে আলোর উৎসবে বিশ্বে সেরার যে খেতাব ছিনিয়ে আনল রাম মন্দির, তাতে দেশের নাম উজ্জ্বল হল বলাই যায়।