রথযাত্রা ভারতের প্রাচীন উৎসব। শুধুমাত্র হিন্দু নয়। অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যেও রথযাত্রার প্রচলন রয়েছে। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে সে উল্লেখ মেলে। তবে রথযাত্রায় মুসলিমদের অংশগ্রহণ সচরাচর দেখা যায় না। ব্যতিক্রম দশের এই গ্রাম। এখানে রথে আসীন মহাপ্রভুর যাওয়ার রাস্তা ঝাঁট দিয়ে পরিষ্কার করেন মুসলিমরাই। কোথায় রয়েছে এমন গ্রাম? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
রথে আসীন মহাপ্রভু জগন্নাথ। গণধর্মের গণদেবতা এগিয়ে চলেছেন গুণ্ডিচা মন্দিরের উদ্দেশে। ব্যাকুল হয়ে তাঁর সঙ্গে এগিয়ে চলেছেন ভক্তরা। কেউ দু-হাত তুলে নৃত্য করেছেন, কেউ আবার প্রভুর নামে জয়ধ্বনি দিচ্ছেন। সবার আগে ঝাড়ু হাতে রাস্তা সাফ করছেন এক মুসলিম।
আরও শুনুন:
আকারে বহরে টেক্কা দেবে পুরীকেও! বিশ্বের বৃহত্তম রথ কোথায় তৈরি হয় জানেন?
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। এই দেশে এমনও এক রথযাত্রা উৎসব পালিত হয় যেখানে ধর্মের ভেদ মুছে যায় জগন্নাথের নামে। প্রভুর রথ যাওয়ার রাস্তা ঝাড়ু হাতে পরিষ্কার করেন মুসলিমরাই। কথা বলছি, ওড়িশার রেমান্দা গ্রাম সম্পর্কে। পুরীর মতো এখানেও বিশেষ ভাবে মহাপ্রভুর রথযাত্রার আয়োজন করা হয়। তবে সারা দেশে রথযাত্রা হিসেবে যে দিনটিকে পালন করা হয়, এখানে রথ উৎসব পালিত হয় ঠিক তার একদিন পরে। শুধু তাই নয়, এই রথযাত্রার আরও কিছু নিয়ম দেশের অন্যান্য মন্দিরের সঙ্গে মেলে না। প্রথমেই বলতে হয় এই রথ উৎসবের সঙ্গে মুসলিম যোগের বিষয়টি। আপাতভাবে রথযাত্রা হিন্দু উৎসব। সেখানে অন্য সম্প্রদায়ের মানুষ থাকলেও সরাসরি তাঁরা রথের সঙ্গে যুক্ত থাকেন না। তবে এই গ্রামের নিয়ম একেবারেই আলাদা। এখানে প্রভুর রথ যাওয়ার রাস্তা পরিস্কারের দায়িত্ব মুসলিমদের।
আরও শুনুন:
বিনামূল্যে তীর্থদর্শনের দায়িত্ব নিল সরকার, কোন রাজ্যে চালু নয়া প্রকল্প?
শোনা যায়, এই গ্রামের রথ উৎসব চালু হয়েছিল ১৯০০ । সেই থেকেই উৎসবে কোনও ধর্মের ভেদ নেই। প্রতি বছর হিন্দু-মুসলিমরা একইসঙ্গে অংশ নেন রথযাত্রায়। রথের রশিতেও টান দেন সকলে মিলেই। এতে কারও কোনও আপত্তি থাকে না। এমনকি মুসলিমরাও একইরকম ভক্তি নিয়ে প্রভুর রথযাত্রা উৎসবে শামিল হন। তবে রথযাত্রার বিশেষ অংশ হল রাস্তা ঝাঁট দেওয়া। পুরীতে সেই কাজ করনে সেখানকার মহারাজ। সোনার ঝাড়ু হাতে জগন্নাথের রথের সামনে ঝাঁট দিয়ে পরিষ্কার করে দেন তিনি। আর সেই পথ ধরেই এগিয়ে চলে রথ। রেমান্দা গ্রামে এই রাস্তা ঝাঁট দেওয়ার কাজই করেন মহম্মদ আখতার। তাঁর আগে এই কাজ এক মুসলিম ব্যক্তিই করতেন। বিগত কয়েক বছর রাস্তা পরিস্কারের দায়িত্ব তাঁর। গলায় মালা, কপালে চন্দনের টিকা পরেই সেই কাজ করেন আখতার। রথের দিন তাঁর সাজসজ্জা দেখে বোঝার উপায় নেই। বাকিরাও অবশ্য একইভাবে জগন্নাথের টানে ধর্মের ভেদ ভুলে শামিল হন উৎসবে।