সরকারি বাংলোর চত্বরে থাকবে না মন্দির। এমনটাই দাবি নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতির। ইতিমধ্যেই তাঁর নির্দেশে ওই মন্দির সরানো হয়েছে, এমনটাই শোনা যাচ্ছে। এতেই বেজায় আপত্তি আইনজীবীদের। প্রতিবাদে, সুপ্রিম বিচারপতিকে চিঠিও পাঠালেন তাঁরা। কোথায় ঘটেছে এই কাণ্ড? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
দেশের প্রায় সব রাজ্যেই একাধিক জনপ্রিয় মন্দির রয়েছে। তার মধ্যে কিছু মন্দির বেশ প্রাচীন। সাধারনত এই ধরনের মন্দিরের বিশেষ গুরুত্ব থাকে স্থানীয়দের কাছে। কোনওভাবে এইসব পুরনো মন্দিরের ক্ষতি হলে, রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায়। অথচ এমনই এক পুরনো হনুমান মন্দির সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি। স্বাভাবিক ভাবেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এমনকি ঘটনার বিহিত চেয়ে সুপ্রিম বিচারপতির কাছেও চিঠি পাঠানো হয়েছে।
ঘটনা মধ্যপ্রদেশের। মাস খানেক আগে সে রাজ্যের হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন জাস্টিস সুরেশ কুমার কাইত। নিয়ম অনুযায়ী তাঁর থাকার ব্যবস্থা হয়েছে বিচারপতিদের জন্য নির্মিত সরকারি বাংলোয়। হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির থাকার জায়গা তো আর যেমন তেমন হতে পারে না! এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। বিশেষভাবে সাজানো হয়েছিল বাংলো চত্বর। এই পদে আসীন সকলেই ওই বাংলোতে থাকার সুযোগ পান। যাতে কোনওরকম অসুবিধা না হয়, তাই বাংলো দেখাশোনা করার জন্য নিযুক্ত রয়েছে একাধিক কর্মী। এঁরাও অনেকেই বাংলো চত্বরে থাকেন। এবার এতজন যেখানে রয়েছেন সেই জায়গায় মন্দির হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। এই বাংলোর চত্বরেঅ ছিল হনুমানের এক মন্দির। আগের বিচারপতিরা তো বটেই, ওই মন্দিরে নিয়মিত পুজো করতেন বাংলোর কর্মীরাও। স্থানীয়দের মতে, এই মন্দির বেশ পুরনো। কাজেই বাইরে থেকেও অনেকে দেবদর্শনে হাজির হতেন। এতদিন সবকিছু ঠিক ছিল, কিন্তু সমস্যা হল নতুন বিচারপতি আসার পর। বৌদ্ধধর্মে বিশ্বাসী জাস্টিস সুরেশ আসামাত্র ওই মন্দির সরানোর নির্দেশ দেন। সেইমতো কাজও হয়। কিন্তু বিচারপতির এই পদক্ষেপ মোটেও ভালোভাবে নেননি আইনজীবীরা। এই নিয়ে বার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। মন্দিরের প্রাচীনত্বের কথা তুলে তাঁদের দাবি, এখানে অনেকেই নিয়মিত পুজো দিতে আসতেন। সুতরাং এই মন্দির সরানো তাঁদের ভাবাবেগে আঘাত দিতে পারে। স্রেফ প্রতিবাদ জানিয়েই ক্ষান্ত হননি আইনজীবীরা, বরং ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছেন তাঁরা। এই মর্মে সুপ্রিম বিচারপতির কাছে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। সেখানে বেশ অদ্ভুত কিছু কারণ উল্লেখ করেছেন আইনজীবীরা।
ঠিক কেমন?
প্রথমত এই মন্দির স্থানীয়দের কাছে কতটা গুরুত্ব বহন করে তা জানানো হয়েছে। সেইসঙ্গে জাস্টিস সুরেশকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, কেউ বৌদ্ধধর্মে বিশ্বাসী হতেই পারেন, কিন্তু তার জন্য মন্দির সরানোর নির্দেশ দেওয়া যায় না। এখানেই শেষ নয়, চিঠিতে আরও একটা বিষয় উল্লেখ করেছেন তাঁরা। দাবি, এর আগে যে বিচারপতিরা এখানে থেকে তাঁরা কেউ মন্দির নিয়ে আপত্তি তোলেননি। বরং নিজেরাও সেই মন্দিরে যেতেন। এমনকি মুসলিম বিচারপতিও এই নিয়ে আপত্তি তোলেননি কখনও, দাবি আইনজীবী সংগঠনের। জানা গিয়েছে, এর আগে মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন একজন মুসলিম। তাঁকে ইঙ্গিত করেই এমন মন্তব্য আইনজীবীদের। বিষয়টা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আলোচনা হতে পারে বলেই মনে করছেন তাঁরা। তবে মুসলিম বিচারপতি প্রসঙ্গ যেভাবে উল্লেখ করছেন ওই আইনজীবীরা তাতে অন্যরকম এক ইঙ্গিত খুঁজে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। অনেকেই মনে করছেন, ওই মুসলিম বিচারপতি এ বিষয়ে আপত্তি তোলেননি তাঁর কারণ তিনি ভেবেছিলেন আপত্তি জানিয়ে কোনও লাভ হবে না। দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি মাথায় রেখেই এমন আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি এই ঘটনার জল আরও অনেকদূর গড়াবে বলেই ধারণা অনেকের।