যুদ্ধক্ষেত্রে যেমন তাঁর পরাক্রম, বিছানাতেও তিনি তেমনই প্রবল। নিত্যনতুন নারীর শরীর তাঁকে আরও, আরও উত্তেজিত করে তোলে। আগ্রাসী কামনা নিয়ে সঙ্গমে লিপ্ত হন তরুণ সম্রাট। তাই তাঁকে ঘায়েল করার জন্য নারীদেরই হাতিয়ার বানিয়েছেন শত্রু রাজারা। যে নারীদের ওষ্ঠে অধরে, সারা শরীরে বয়ে চলে তীব্র বিষ। কী হল তারপর?
খাঁচায় বন্দি মেয়েটির দিকে ফিরে তাকালেন রানি। স্বল্প বসনের আড়াল থেকে উপচে পড়ছে তার যৌবন। ভরাট স্তন, সরু বিভাজিকার দিকে তাকালে শ্বাস রোধ হয়ে আসে। এলো চুল তার যেন সাপের ফণা। মনে মনে হাসলেন রানি। সাপই বটে! তিনিই জানেন, সাপের মতোই বিষাক্ত এই রমণী। ওর যে রূপ পুরুষকে কামনার আগুনে জ্বালিয়ে দিতে পারে, সেই রূপই বিষে নীল করে দিতে পারে একই পুরুষকে। এক শত্রুকে বিনাশ করার জন্যই তিনি এতদিন ধরে পালন করে চলেছিলেন এই কন্যাকে। এতদিনে সে সময় এসেছে। কারণ তাঁর রাজ্যের গা ঘেঁষেই এবার তাঁবু ফেলেছেন সেই পরাক্রমশালী বীরপুরুষ। সুদূর গ্রিস থেকে একের পর এক রাজ্য জয় করতে করতে যিনি এই মধ্য এশিয়ায় পৌঁছে গিয়েছেন। এই রাজ্যের দিকে লালসার হাত বাড়ানোর আগেই সে হাতে পৌঁছে দিতে হবে লালসার অন্য উপকরণ। ভাবতে ভাবতে আরও একবার খাঁচাবন্দি মেয়েটির শরীর মেপে নিলেন রানি।
আরও শুনুন: নাচের ছন্দে খসে পড়ত পোশাক, গুপ্তচর মাতা হারির শরীরী আগুনে পতঙ্গের মতো ঝাঁপ দিত শত্রুরা
কিন্তু কে সেই বীরপুরুষ, যাঁর জন্য এত ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন রানি? আসলে কেবল এই রানিই নন, তাঁর ভয়ে এখন কাঁপছে গোটা পৃথিবীই। লোকে তাঁকে বলে অলীকসুন্দর। বয়স অল্প, কোঁকড়া চুলে ঘেরা ফরসা সুন্দর একখানা মুখ। কিন্তু যুদ্ধের গন্ধ পেলে নিমেষে বদলে যায় এই সুন্দর মুখই। আর যুদ্ধের ময়দানে সেই মুখের দিকে তাকালে বুক কেঁপে ওঠে তাবড় তাবড় যোদ্ধাদের। সকলেই জানে, রণক্ষেত্রে অপরাজেয় এই তরুণ রাজা, নিজের দেশ গ্রিসে যাঁর নাম আলেকজান্ডার। উত্তরাধিকার সূত্রে গ্রিসের একটা ছোট্ট রাজ্য ম্যাসিডনের রাজা এই যুবক। আততায়ীর হাতে আগের রাজা খুন হওয়ার পর সকলে ধরেই নিয়েছিল, এবার শত্রুর হাতে ছারখার হয়ে যাবে দেশ। আলেকজান্ডারের বয়স তখন মোটে বছর কুড়ি। সেই বয়সেই সিংহাসনে বসতে হল তাঁকে। ঘরে বাইরে শত্রুর ভয়। রাজদরবারে গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে দ্বন্দ্ব। শক্ত হাতে সেইসব বিদ্রোহের টুঁটি টিপে ধরলেন তরুণ রাজা। কঠোর হাতে সামলে নিলেন গোটা রাজ্যকে। কিন্তু তাঁর রক্তে যে নতুনের নেশা। নারীই হোক কি দেশ, সবই তাঁর কাছে জয় করার এক একটি ক্ষেত্র। এই বয়সেই একের পর এক নারীর সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হতে দ্বিধা নেই তাঁর। আর সেইভাবেই এবার নতুন দেশ জয় করার দিকেও নজর দিলেন আলেকজান্ডার। গ্রিসের অন্যান্য রাজ্য, এমনকি অপরাজেয় এথেন্সও চলে এল তাঁর হাতের মুঠোয়। গোটা পৃথিবীকে জয় করবেন তিনি, এই স্বপ্নে বিভোর তরুণ সম্রাট। আর এইবার তাঁকে ভয় পেতে শুরু করলেন অন্যান্য রাজারা। আলেকজান্ডারকে রুখতেই হবে, উপায় খুঁজতে শুরু করলেন তাঁরা। আর সেই উপায় হয়ে দেখা দিল একের পর এক নারী।
আরও শুনুন: স্তনে-নখে মাখানো বিষ, সম্মোহনে সুন্দরী বিষকন্যাকে স্পর্শ মাত্র মৃত্যু অবধারিত পুরুষের
নারীই কেন? আসলে আলেকজান্ডারের নারীপ্রীতির কথা যে সকলেরই জানা। তাই প্রথমেই এই পথ নিয়েছিলেন পারস্যের সম্রাট দারায়ুস। কিন্তু সেই নারী যে আদতে বিষকন্যা, সে কথা তো জানেন না আলেকজান্ডার। উপহারে পাওয়া সুন্দরী নারীকে দেখেই কামনা জেগে উঠল তাঁর। ছুটে গেলেন সেই নারীর দিকে। কিন্তু সেখানে উপস্থিত ছিলেন পণ্ডিত অ্যারিস্টটল, আলেকজান্ডারের কিশোরবেলার শিক্ষক তিনি। রাজাকে বাধা দিয়ে তিনি ওই নারীর দিকে ঠেলে দিলেন দুই ভৃত্যকে। কয়েক মুহূর্ত মাত্র। ওই নারীকে চুম্বন করার সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল তারা।
সেবার বেঁচে গিয়েছিলেন আলেকজান্ডার। কিন্তু গুপ্তহত্যার ছক কষা বন্ধ হয়নি। পারস্য, মিশর, ব্যাকট্রিয়া জয় করে মধ্য এশিয়ার দিকে এগিয়ে চলেছেন আলেকজান্ডার। সেই পথেই এই সিজিরি নামের রাজ্যটির কাছাকাছি শিবির ফেলেছেন সম্রাট। বিশাল গ্রিক বাহিনী দেখে ভয়ে কাঁটা রাজ্যের বাসিন্দারা। এই সময় উপায় বাতলে দিলেন সে রাজ্যের রানি। তিনি নাকি অনেক আগেই ভবিষ্যৎ গণনা করে জানতে পেরেছিলেন এই বিপদের কথা। আর তাই আলেকজান্ডারকে ধ্বংস করার জন্যই ওই মেয়েটিকে লালন করেছেন তিনি। রাজ্যের চারদিকে ঘন বন, সেখানে বিষধর সাপের বাস। সদ্যোজাতা মেয়েটিকে নিয়মিত সাপের বিষ গ্রহণ করান রানি। ক্রমে সে নিজেই হয়ে ওঠে বিষাক্ত, যার সংস্পর্শে গেলেই অবধারিত মৃত্যু। এখন তার শরীর ভরা যৌবন। রানি তাকে অভ্যাস করিয়েছেন যাবতীয় মোহিনী ছলাকলা। এতদিনে সময় এসেছে সেই অস্ত্র ব্যবহারের।
আরও শুনুন: অস্ত্র যখন যৌনতা! শরীরের ‘টোপ’ দিয়েই অসংখ্য নাৎসি সৈন্যকে ঘায়েল করেছিল এই কিশোরী
গ্রিক শিবিরে তখন যুদ্ধের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। এমন সময় আলেকজান্ডারের কাছে এসে পৌঁছল রানির দূত। আত্মসমর্পণ করতে চায় সিজিরি, জানিয়েছেন রানি। বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে পাঠিয়েছেন নানা মহার্ঘ উপহার। আর তার সঙ্গেই রয়েছে সেই রূপসি নারী। যথারীতি, আলেকজান্ডারের ভুলতে সময় লাগল না। কিন্তু এবারও তাঁকে বাধা দিলেন সেই অ্যারিস্টটলই। এক ওষধি লতার নির্যাস দিয়ে তিনি বৃত্ত আঁকলেন মেয়েটিকে ঘিরে। এরপরে সেই বৃত্তের ভিতরেই ছেড়ে দেওয়া হল একটি বিষধর সাপ। সবাই স্তম্ভিত হয়ে দেখলেন, মেয়েটির চারপাশে ঘুরতে ঘুরতেই মরে গেল সাপটি। এরপরেও, এক যুদ্ধবন্দিকে নির্দেশ দেওয়া হল মেয়েটিকে চুম্বন করতে। সেই চুম্বনের সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যু হল বন্দির। আর এবারেও, বিষকন্যার গ্রাস থেকে বেঁচে গেলেন সম্রাট আলেকজান্ডার।