ধরে নিন একটাই গাছ। তার এই ডালে আম, তো ওই ডালে আনারস। এই ডালে কলা, তো ওই ডালে কাঁঠাল। ধরুন ন্যাসপাতি খাবেন না, তো চেখে দেখুন আপেল। কী বলছেন? আজগুবি? আজ্ঞে না মশাই, এমনই গাছ দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার এক ব্যক্তি। একটাই গাছে দশ রকম ফল ধরিয়ে ইতিমধ্যে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নামও তুলে ফেলেছেন। শুনে নিন তাঁর কথা।
বৃক্ষ তোমার নাম কী? ফলেই পরিচয়। তবে যদি একই গাছে ফলে দশ রকমের ফল, তখন গাছ চিনবেন কী করে? অনেকে বলবেন, যাহ, এমন আবার হয় নাকি! কিন্তু এমন আজগুবি কাণ্ডই ঘটিয়ে ফেলেছেন অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়ার বাসিন্দা হুসাম সরাফ। ২০০৯ সালে ইরাক ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ায় চলে আসেন হুসাম। ছোট থেকেই বাগান করতে ভাল লাগত তাঁর। প্রথম চেষ্টায় কলম করে তিনি ফলিয়েছিলেন পাঁচ রকমের ফল, একটি গাছেই। তবে সেখানেই থেমে থাকেননি। এ বারের লক্ষ্য ১০টি ফল। শুরু করলেন কলম করা। সফলও হলেন।
আরও শুনুন: একই গাছে ফলবে বেগুন আর টম্যাটো, বিস্ময়কর আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের
শুনবেন কী কী ফল ধরিয়েছেন হুসাম? হোয়াইট নেকটারিন, অনেকে একে হোয়াইট সাটিনও বলেন। পিচ জাতীয় ফল এটি। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে এটি কলম করে বসান হুসাম। ২০২০ সালের মে-তে বসান ব্লাড প্লাম, সে বছরই অক্টোবরে কলম করেন পিচকট ও ইয়োলো প্লাম। নভেম্বরে হয় হোয়াইট পিচ, ২০২১-এর এপ্রিলে অ্যাপ্রিকট ও অক্টোবরে কলম করেন আমন্ড, চেরি ও ইয়োলো নেকটারিনের।
গিনেস বুক রেকর্ডে পাঠিয়ে ভয়ে ভয়ে ছিলেন হুসাম। ভেবেছিলেন, খারিজ হয়ে যাবে তাঁর আবেদনপত্র। একই ফলের বেশ কয়েক প্রকার রকমভেদ এ বছর ফলিয়েছেন হুসাম। সে সব গিনেস কর্তৃপক্ষ আদৌ মান্যতা দেবেন কি না তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন তিনি।
তবে শেষ পর্যন্ত পরিশ্রমের ফল পেয়েছেন হুসাম হাতেনাতে। গিনেস বুক ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান পেয়েছে তাঁর এই অসামান্য কীর্তি।
বছর পাঁচেক আগে নিজের বাগানখানা জনসাধারণের জন্য খুলে দেন হুসাম। বহু গাছপালা-প্রিয় মানুষ সেখানে আসতেন, মিলত নানারকম পরামর্শও। হুসাম তাঁদের খাওয়াতেন নিজের গাছের ফল। হুসাম জানান, এটা তো শুধু একটা বাগান নয়, একটা যৌথ পরিবার বলা চলে। যেখানে নানা ধরনের, নানা সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে আদানপ্রদান চলে।
আরও শুনুন: নরওয়েতে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বীজের ব্যাংক, যা রসদের ভরসা দেয় গোটা দুনিয়াকে
নিজের এই বহুফলি গাছটিকেও তেমন ভাবেই ভাবতে চান হুসাম। এ-ও যেন এক সম্প্রীতির বৃক্ষ, যেখানে বহু ধর্ম, বহু সংস্কৃতি, বহু ঐতিহ্য এসে মিলেছে। এই যে এতগুলো ফলের এতরকম রং, স্বাদ, গন্ধ, এতগুলো গাছের এত রকম পাতা, এও কি এক বিবিধের মাঝে মহান মিলন নয়! নতুন প্রজন্মের মধ্যে সেই শিক্ষাটুকু ছড়িয়ে দিতে চান হুসাম। ইনস্টাগ্রামে তাঁকে ফলো করেন অসংখ্য তরুণ-তরুণী। তাঁর কাছে বাগান করাও আসলে তেমনই। এ যেন এক বৃহত্তম মেলা। যেখানে গাছেদের সঙ্গে গাছেদের, মানুষের সঙ্গে মানুষকে মিলিয়ে দিতে ভালবাসেন হুসামের মতো দিলখোলারা।