সারা দেশকে সাক্ষী রেখে মহা সমারোহে উদ্বোধন হয়েছে নতুন সংসদ ভবন। সাধুসন্তের আশীর্বাদ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেখানে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘সেঙ্গল’। রাষ্ট্রনায়কের এই কৃতিত্ব প্রশংসায় ভরিয়েছেন শিল্পীমহল থেকে আরম্ভ করে শিল্পপতিমহলের নক্ষত্ররা। টুইট করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন শাহরুখ-অক্ষয়ও। একা ব্যতিক্রম নাসিরুদ্দিন শাহ। নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন নিয়ে মোদিকে রীতিমতো কটাক্ষ করেছেন তিনি। তুলেছেন একাধিক প্রশ্ন। কিন্তু তাঁর এমন আচরণের নেপথ্যে ঠিক কী কারণ রয়েছে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
আত্মনির্ভর ভারতের সূর্যোদয়। নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনকে, এমনই উপমা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সারা দেশ সাক্ষী ছিল তাঁর রাজদণ্ড প্রতিষ্ঠার ‘অভূতপূর্ব’ কর্মসূচির। ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে এই কাজ কতটা যুক্তি সঙ্গত সেই নিয়ে প্রশ্নও তুলেছিলেন অনেকেই। এমনকি সংসদ ভবনে কেবলমাত্র হিন্দু সন্তদের উপস্থিতিতে, দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার দিকেও আঙুল উঠেছিল। কিন্তু সেসব প্রতিবাদ সোশ্যাল মিডিয়াতেই সীমাবদ্ধ। সেই অর্থে যাঁদের প্রশ্ন সমাজকে ভাবতে বাধ্য করে, তাঁদের এই কাজ নিয়ে কোনও আপত্তি নেই। বরং মোদির এই আচরণ, নতুন সংসদ ভবনের প্রতিষ্ঠা সবকিছু ঘিরেই তাঁদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো।
আরও শুনুন: বয়কট থেকে বাঁচতে সংসদ ভবন নিয়ে টুইট! বিরোধীদের তোপের মুখে বলি বাদশা
এক্ষেত্রে প্রথমেই বলতে হয় শাহ্রুখ খানের কথা। সংসদ ভবনের একটি ভিডিও নিজের টুইটারে শেয়ার করে, প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। তাঁর সঙ্গে যোগ দেন অক্ষয় কুমার, অনুপম খের সহ সিনেজগতের একাধিক কলাকুশলী। এমনকি দেশের বহু লেখক, সাংবাদিক, রাজনীতিকরাও সেই ভিডিও পোস্ট করেন নিজের নিজের টুইটার হ্যান্ডলে। এই ঘটনায় আরও চওড়া হয় গুজরাটের প্রাক্তণ মুখ্যমন্ত্রীর বুক। কিন্তু একা নাসিরুদ্দিন এর ব্যতিক্রম। সংসদ ভবন উদ্বোধন প্রসঙ্গে স্রেফ মোদিকেই নয়, গোটা ভারতীয় জনতা পার্টিকেই তুলোধনা করেছেন তিনি। নাসিরুদ্দিন সরাসরি নতুন সংসদ ভবনকে মোদির বানানো স্মৃতিসৌধ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর দাবি, ‘মোদি নিজেই নিজের জন্য মনুমেন্ট বানিয়েছেন’। শুধু তাই নয়, কেন শুধুমাত্র হিন্দু সন্তরাই সেদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, এই নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন নাসিরুদ্দিন। ‘যেন ইংল্যান্ডের রাজার রাজ্যাভিষেক হচ্ছে’, মোদির সেঙ্গল প্রতিষ্ঠাকেও ঠিক এইভাবে কটাক্ষ করেছেন তিনি। সেইসঙ্গে তাঁর দাবি, প্রধানমন্ত্রীর এহেন আচরণের জেরে অনেকেই সমস্যায় পড়তে পারেন। এখানেই শেষ নয়। নিজের বক্তব্যে সংবিধানের প্রসঙ্গও টেনেছেন নাসিরুদ্দিন। সংসদ ভবনকে সংবিধানের প্রতীক হিসেবে দাবি করেছিলেন মোদি। সে প্রসঙ্গে শাহ-এর আশঙ্কা,আদৌ এখানে সংবিধানের যথেযথ সম্মান মিলবে কি না!
আরও শুনুন: ‘সেঙ্গল’ প্রতিষ্ঠায় মুসলিম ধর্মগুরু নেই কেন? মোদিকে খোঁচা দিয়ে মোক্ষম প্রশ্ন সমাজবাদী নেতার
তবে এই প্রথম নয়। আগেও মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন নাসিরুদ্দিন। এক্ষেত্র কারণ হিসেবে তাঁর সামাজিক দায়িত্বের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। প্রবীন অভিনেতা সমাজ ও সময় নিয়ে সর্বদা সচেতন থাকেন। যা কিছু অন্যায় তাঁর অবশ্যই সমালোচনা করতে শোনা যায় তাঁকে। আর আজ যখন সংসদ ভবন উদ্বোধনকে অনেকাংশেই হিন্দুত্বের মোড়কে মুড়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে, তখনও তিনি চুপ করে থাকেননি। কেন এই জাঁকজমক, এত আড়ম্বরের ঠিক কী প্রয়োজন, ইত্যাদি একাধিক প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করেছেন প্রধানমন্ত্রীকে। অনেকেই এক্ষেত্রে তাঁর ধর্ম পরিচয়ের প্রসঙ্গ টানতে পারেন। তবে স্রেফ ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষ বলে নন, একজন সচেতন শিল্পী হিসাবে এই প্রশ্ন তুলেছেন নাসিরুদ্দিন। তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে এমনটাও দাবি করেছেন ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।