ঝড়ের গতিতে দৌড়তে পছন্দ করে জেন জেড। ইন্টারনেট স্পিডে টান পড়লেই বিরক্তি। সময়ের মধ্যেই সবকিছু চাই হাতের মুঠোয়ে। কিন্তু ব্যাতিক্রম শুধু প্রণয়ের ক্ষেত্রে, কেন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ঝড়ের গতির আর এক নাম হল জেন জেড। অনেকেই এরকম বলে থাকেন। বলেন, এই জেনারেশন সময়ের আগে চলাই বেশি পছন্দ করে। খাবার থেকে শুরু করে জামা-কাপড় ডেলিভারি, সব কিছুই চাই চটজলদি। যেন সবকিছুর মধ্যেই একটা ধৈর্যহীন-গাড়ি হয়ে ছুটে চলছে অস্থির ভাবে। কিন্তু প্রেম বা সম্পর্কের ক্ষেত্রেও কি তেমনটাই? সেখানেও কি তাড়াহুড়োর ছাপ! খেয়াল করলে দেখা যাবে, অন্যান্য বিষয়ে তড়িঘড়ি করলেও, প্রেম-প্রণয়ে ধীরে চলো নীতিই নিয়েছে জেন-জেড।
এককালে প্রেম বা সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো ব্যাপারটাই ছিল না। সেই সময়টাও যেন ছিল খানিক শ্লথ। ফলত একটি প্রেমপত্র থেকে আর একটি প্রেমপত্রে পৌঁছতে সময় লেগে যেত অনেকখানি। আজও পুরনো গল্প কিংবা সাদা-কালো সিনেমা সে সবের সাক্ষ্য দেয়। তারপর সময়ের বদল ঘটেছে দ্রুত। ঘরের কোণে বন্দি ফোনের বদলে হাতে হাতে এসেছে মোবাইল। ইন্টারনেট এসে গোটা বিশ্বকে জুড়ে রেখেছে প্রতি মুহূর্তে। এই দ্রুততার সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেন বদলে গিয়েছে সময়ের চাহিদাও। চাইলেই যদি সবকিছু হাতে চলে আসে, তাহলে আর অপেক্ষা কীসের! জেন জেড-কে প্রায়শই এই বদনাম গায়ে মাখতে হয়। তারা নাকি সবকিছুতেই চায় ইনস্ট্যান্ট গ্র্যাটফিকেশন। এই অভিযোগ অবশ্য ভ্রান্ত নয়। সোশ্যাল মিডিয়ার দাদাগিরির এই যুগে তাৎক্ষণিক চাহিদাপূরণ নয়া প্রজন্মকে যথেষ্ট কবজাই করে ফেলেছে বটে। সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এক সময় তাই দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার রেওয়াজ এসেছিল। সম্পর্ক হত যেমন দ্রুত, তেমন ভেঙেও যেত। তবে সময়ই শিক্ষা দেয়। আর তাই বোধহয় দ্রুততার বিষ সম্পর্কে আর ঢালতে নারাজ নতুন প্রজন্ম।
এমনিতে এই প্রজন্ম, যাদের জেন জেড বলা হয়ে থাকে, তারা বেশ চালাকচতুর, বুদ্ধিমন্ত। সামাজিক নানা বিষয়ে তাঁরা সচেতন, তাই তাঁদের বলা হয় ওক জেনারেশন। প্রেমের ক্ষেত্রেও তাড়াহুড়োয় যে ভাঙনের সূত্রপাত, তা তারা বুঝে নিয়েছে অল্প সময়েই। অতএব চালু হয়েছে ধীরেসুস্থে সমস্তটা বুঝে নেওয়ার প্রক্রিয়া। বলা হচ্ছে, এ হল সিমার ডেটিং। সিমার কথাটার অর্থ হচ্ছে ধীরে ধীরে কোনও একটা কিছু গরম হওয়া। ধরে নেওয়া যাক, জল গরম হওয়া। তা তো হুট বললেই হয় না। সময় লাগে। নির্দিষ্ট সময় পরে তবে তা ফুটতে শুরু করে। সম্পর্ক পাকা করার আগে তাই সেই সময় নেওয়ার পক্ষপাতী এই প্রজন্ম। প্রথম মেসেজ করা থেকে, পাশের মানুষটিকে বুঝে নেওয়া, নিজেকে বুঝিয়ে দেওয়া, এবং তারপর পরবর্তী ধাপে এগোনো। এই পুরো পথ-চলা যাতে উপভোগ্য হয়ে ওঠে, সেদিকেই নজর তরুণ প্রজন্মের। অথচ যুগটা নাকি সোশ্যাল দুনিয়ায় ভ্যালিডেশনের। সেখানে স্বীকৃতি না পেলে কিছুই নাকি হয় না। তবে, অন্যান্য ক্ষেত্রে তাকে গুরুত্ব দিলেও, প্রেমে নৈব নৈব চ। বরং তড়িঘড়ি সামাজিক স্বীকৃতির জন্য না দৌড়ে, রয়েসয়ে প্রণয়ের ফুল ফোটাতেই তারা আগ্রহী।
যে জেন জেড ঝড়ের বেগে ছুটতে ভালোবাসে, ইন্টারনেটের স্পিড কমে গেলে বিরক্ত হয়, প্রেমে তাঁদের এই ধীরে চলো নীতি বেশ কৌতূহলই জাগায়। আর মনে করিয়ে দেয়, অতীতকে এই প্রজন্ম একেবারে ঝেড়ে ফেলে দেয়নি। বরং যেখানে যেমন সেখানে তেমন হওয়াই তাঁদের মন্ত্র। আর তাতে অতীতের ধীরস্থির সম্পর্কের রসায়নে পৌঁছনো প্রক্রতিয়া মেনে নিতে তাঁদের বিন্দুমাত্র অসুবিধা নেই।