নমস্কার, আমারে চিনতে পারলেন? আমি হলাম গিয়ে সিনেপিসি। না না, পিএনপিসি নয়, কুমড়ো দিয়ে ক্রিকেট খেলা বোম্বাগড়ের রাজার পিসিও নয়… আমি হলাম সিনেপিসি… বেশি কথা বুঝি না, ছবি দেখতে ভালবাসি / কথা বলতে ইচ্ছে করে, তাই তো ছুটে আসি…
তা, যে কথাটা বলতে এই ছুটতে ছুটতে এলুম… সেটা হল, কাল অনেক রাত জেগে, চোখের তলায় কালি ফেলে, গ্যাঁটের কড়ি ইন্টারনেটে ঢেলে একখানা সিনিমা দেখলুম… সিনেমাটার নাম – ‘হাসিন দিলরুবা’।
জওয়ানি জানেমন হাসিন দিলরুবা / ছেড়ে দে কেঁদে বাঁচি ও মা ও বাবা!… আরে হে… আরে হো.. এ কেমন সিনেমা, বাবা গোওও!
ভাবছেন তো, সিনেপিসির কী এমন হল যে, এইসব কতা বলচে! আচ্ছা বেশ, তাহলে সিনেমার গপ্পোখানাই নাহয় একটু বলচি। তাহলেই বুঝবেন। ঋষু, মানে বিক্রান্ত মাসের বিয়ের জন্য মেয়ে দেখা হচ্ছে। প্রথমবার দেখাশোনা কী করে যেন কেঁচে গেছে। সেকেন্ড টাইম দেখল তো দেখল একেবারে তাপসী পান্নুকে মানে ছবির রানিকে। দেখামাত্র ফ্ল্যাট। মা বেচারি ভালোমন্দ যাই বলুক না কেন, ছেলে এই মেয়েকেই বিয়ে করবে। তা মিয়া বিবি রাজি তো ক্যায়া করেগা কাজি! কী আবার করবে! কুছ নেহি করেগা, বিয়ে দিয়ে দেগা। তা হল তাদের বিয়ে। রানি এল জ্বলাপুরে, শ্বশুরবাড়িতে। যত দিন যায় দেখে বর মিনসে কিছুতেই আর খোলস ছেড়ে বেরোয় না। কেমন যেন মিয়োনো পাপড় হয়ে থাকে। আ মোলো যা! বিয়ের পর পুরুষমানুষ এমন ন্যাতানো গেঞ্জি হয়ে থাকলে কোন মেয়ের মন উঠবে গা! রানিও বরে বোর হয়ে গেল দুদিনেই।
আরও শুনুন : Sach Kahun Toh : আত্মজীবনীর খোলা পাতাতেও Bold নীনা
আর শাশুড়িটা তো বউটাকে রান্নাঘরে ঢোকাতে পারলে বাঁচে। বলি, তিনকাল গিয়ে এককাল ঠেকল, এখনও কি একটু চোখ খুলবে না গা! সেই বাড়ির বউকে রেঁধে বেড়ে তবে মন পেতে হবে! পরিচালক ভিনিল ম্যাথু আর প্রযোজক আনন্দ এল রাই, দুজনকেই আমার একটা কতা বলার আচে। বলি চাদ্দিকে মেয়েরা যখন একটু করে দরজা জানলা খুলছে, তখন সেই এক ঢোল এক কাঁসি বাজানোর খুব দরকার ছিল! ইচ্ছে করে শুকনো লংকায় ঝাঁজ তুলে দুটোকেই হাঁচিয়ে কাশিয়ে একশা করি!
এর মধ্যেই ছবিতে তড়কা। এসে হাজির হর্ষবর্ধন রানে। ছবিতে তার নাম নীল। কী তার চেহারা! যেন কুমোরটুলিতে অর্ডার দিয়ে বানানো। সেই অসুরের গায়ে তেল মাখালে যেমন চকচক করে, ঠিক তেমনটা। এবার একদিকে বিক্রান্ত মাসের মতো ভাঙা-বিস্কুট বর, অন্যদিকে হর্ষবর্ধনের মতো ডাকাত পুরুষ। বুঝতেই পারছেন, রানির এবার কী হাল হবে! নীল রং ছিল ভীষণ প্রিয়… বলে সে তো দিলে ঝাঁপ। তারপর বাপরে বাপ! কত কী যে হল! খুন, জখম, বিস্ফোরণ, তদন্ত… বলি হ্যাঁ গা পরিচালক, ফ্রিজে যত সবজি আছে সব কি এক তরকারিতেই দিয়ে দিতে হয়! তাও যদি ফোড়নটা দিত! এমন বিটকেল ঘ্যাঁট কোন আক্কেলে কেউ বানায় বলো দেখি!
বুঝতেই পারছেন। বড় আশা করে ছবি দেখতে বসে আমার কী হাল! তাপসী পান্নু – সেই ‘পিংক’ করার পর থেকে মেয়েটারে কী ভালই না লাগে! এদিকে বিক্রান্ত মেসি ছোঁড়াটাকেও যত দেখি, ভালই লাগে। ওরা দুজন আছে বলেই সিনেমাখানা দেখতে বসেছিলুম। দুজনে মিলে এ কী আলুনি তরকারি বানালি রে! মনটা ভেঙে খানখান হয়ে গেল!
আরও শুনুন : Dilip Kumar : আদালতে দাঁড়িয়ে মধুবালাকে জানিয়েছিলেন, ভালবাসি…
তা শুধু ওরা আর কী করবে! বিক্রান্ত মাসে একা কত করবে! তাপসীও বা অভিনয়ের শাক দিয়ে ঢিলেঢালা স্ক্রিপ্টের মাছ আর কত ঢাকবে! ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি দশা। এদিকে যেই না দু-একজন বলেচে, ছবিতে টক্সিক ম্যাসকুলিন লাভ মানে বিষাক্ত পুরুষালি প্রণয়কে গ্যাস খাইয়ে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বেলুন করা করা হয়েছে, অমনি নায়িকা তো খচে লাট। যাক, আমি আর সেসব কিছু বলচি না। মনটা আমার এমনিতেই ভেঙে গেছে৷ ভাঙা কাচ, ভাঙা মন জোড়া দেওয়া যায় না গো। শুধু একটাই কথা বলচি, ভেবেছিলুম বিক্রান্ত আর তাপসী, ছেলেমেয়ে দুটোকে এত ভাল লাগে যে, দেখা হলে ভালোমন্দ রেঁধে খাওয়াব। কিন্তু এ যা তিতো গেলালে বাপু, সিনেপিসির আর রাঁধাবাড়ায় মন নেই। কত সাধ করেই না ছবি দেখতে বসেছিলুম! তা বাড়া ভাতে এমন ছাই দিলে কার আর ভাল লাগে বলো দেখি!
আজ আর কিছুই ভাল লাগচে না। সিনেপিসির ঝাঁপ আপাতত বন্ধ। দেখি, কবে একটা ভাল সিনেমা দেখতে পাই।