ধরা যাক কেউ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। এমন সময় অ্যালার্ম বাজল। বা, কেউ ঘুমন্ত ব্যক্তির নাম ধরে ডাকল। একটু সময় লাগলেও, সেই শব্দ ঠিক চলে যায় ঘুমন্তের কানে। এবং, তিনি জেগেও ওঠেন। তাহলে নাক ডাকার শব্দ কেন ঘুমন্তের কানে পৌঁছায় না! কেন নিজের নাক ডাকার শব্দে অন্যে বিরক্ত হলেও দিব্যি ঘুমিয়ে থাকে মানুষ? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ব্যাপারটা বেশ মজারই। কেউ একজন ঘুমিয়ে আছেন আর ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে নাক ডাকছেন। এ তো আকছার ঘটেই থাকে। সেই নাক ডাক শব্দে পাশে যিনি শুয়ে আছেন, তাঁর তো ঘুমের দফারফা। কিন্তু মজা হল, এই এত শব্দ ঘুমন্তের কানে কিছুতেই পৌঁছায় না। তিনি যেমন গভীর ঘুমে মগন ছিলেন তেমনই থেকে যান।
ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুতও। কেননা এই ব্যক্তিকেই যদি তখন তাঁর নাম ধরে ডাকা যায়, বা বাইরে কোথাও খুট করে শব্দ হয়, তবে তিনি অবশ্যই জেগে উঠবেন। তাহলে যে শব্দে বাকিরা জেগে উঠছে, সেই নাসিকাগর্জনের শব্দে তিনি নিজে জাগছেন না কেন?
আরও শুনুন: শীতের শুষ্ক হাওয়ায় জেল্লা হারাচ্ছে ত্বক, যত্ন নেবেন কীভাবে?
এ কথা মোটামুটি আমরা জানি যে, আমরা যখন ঘুমাই অর্থাৎ বিশ্রাম নিই, তখন আমাদের মস্তিষ্কও বিশ্রাম নেয়। শরীরের স্নায়ুসমূহের যে ব্যবস্থা অহরহ চলে, এই সময়টায় সে নিজের নানা প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সেরে নেয়। জাগরণ হেতু যা কিছু ক্ষয়ক্ষতি, এই অবসরে তা হিসেব মিলিয়ে মেরামত করে নিতে থাকে। ফলত এই সময়টা আমাদের মস্তিষ্ক বা ব্রেন একটা জরুরি ব্যবস্থা করে নেয়। জেগে থাকার সময় ব্রেনের যে সমস্ত অংশ ক্রিয়াশীল থাকে, তাদের বিশ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বিশ্রামে আছে মানে যে সে জরুরি কোনও কাজ করবে না, তা নয়। কিন্তু কাজ করার সম্ভাবনাটা এখানে কমে আসে বা নির্বাচিত বিষয়েই কাজ করা হবে- এমনটা ঠিক হয়ে যায়। সহজ করে বলতে গেলে, কী শুনব আর কী শুনব না – তা নির্ধারণের জন্য একটা স্বয়ংক্রিয় ফিল্টার চালু হয়ে যায় অলক্ষ্যেই। মানুষ যখন জেগে থাকে, তখন মস্তিষ্কের থ্যালামাস অংশ মূলত এই ফিল্টারের কাজটা করে থাকে। এর ফলেই আমরা কী শুনব, বা কোন ঘটনায় কী প্রতিক্রিয়া হবে তা নির্ধারিত হতে থাকে।
আরও শুনুন: একই গাছে দশ রকম ফল, তাক লাগানো আবিষ্কারে গিনেস রেকর্ড হুসামের
যখন আমরা ঘুমিয়ে থাকি তখন একটা স্পষ্ট ভাগাভাগি হয়ে যায়। কী কী শব্দ আমাদের ভিতরে পৌঁছাবে তার একটা তালিকা যেন তৈরি হয়। যেমন, কেউ যদি নাম ধরে ডাকে বা অ্যালার্মের শব্দ আমাদের ভিতর অবধি পৌঁছানোর ছাড়পত্র পায় বেশি বেশি। তাই এই সব শব্দে আমাদের ঘুম ভেঙে যায়। আবার অস্বাভাবিক কোনও শব্দ হলেও তা আমাদের জাগিয়ে তোলে। কেননা এই ধরনের শব্দ, ঘুমন্ত অবস্থাতেও আমাদের মস্তিষ্কে পৌঁছানোর সম্ভাবনা বেশি। আবার একটানা ফ্যানের আওয়াজ অনেক সময়ই হয়। গোড়ার দিকে তা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতেও পারে। একসময় শরীর ঠিক করে নেয় যে, এই শব্দকে তেমন গুরুত্ব দেওয়ার দরকার নেই, ফলত শরীরের যে সব অংশ বিশ্রামরত তাদের জাগিয়ে তোলারও প্রয়োজন নেই। এইরকম শব্দের তালিকায় সবথেকে কম পৌঁছানোর সম্ভাবনা যার, সে হল নিজের শরীর থেকে উদ্ভূত শব্দ। মস্তিষ্ক ঠিক করেই নেয় যে, এখান থেকে এমন কিছু ঘটার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে না, যাতে শরীরকে জাগ্রত অবস্থায় ফিরতে হবে। এই তালিকাতেই থাকে নাক ডাকার শব্দ। ফলে বেজায় শব্দ হলেও ওই ফিল্টারের কারণেই তা ঘুমন্ত ব্যক্তির কানে পৌঁছায় না। সেদিক থেকে দেখতে গেলে এটা একরকম স্বাভাবিক ঘটনাই। পুরোটাই শরীরের বা মস্তিষ্কের নিজস্ব নিয়মের উপর নির্ভর করে যে, কোনটা শোনা জরুরি আর কোনটা নয়।
বাকি অংশ শুনে নিন।