সেকালে চল হয়েছিল একরকম শাড়ির, যার সঙ্গে নাম জড়িয়ে আছে স্বয়ং পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের। আপাতভাবে বিদ্যাসাগরের সঙ্গে শাড়ির যোগসূত্রটি খুঁজে পাওয়া বেশ দুরূহ। তবে এর নেপথ্যে থেকে গেছে এক সামাজিক আন্দোলনের ইতিবৃত্ত। কেন সমাদর পেয়েছিল ‘বিদ্যাসাগর পেড়ে’ শাড়ি? আসুন শুনে নিই।
নারীশিক্ষা ও নারী স্বাধীনতার ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে স্মরণীয় যিনি, তিনি পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর যেমন অবদান, তেমনই সমাজ সংস্কারেও তিনি ছিলেন সময়ের থেকে এগিয়ে। আর তাই যখন তিনি বিধবাদের বিবাহ প্রচলনের কথা বললেন, তখন চারিদিকে একেবারে হুলস্থুল পড়ে গেল।
আরও শুনুন: কালীপুজো মানেই ছিল ‘বুড়িমার চকলেট বোম’, কে এই বুড়িমা?
শোনা যায়, একবার এক বালিকা বিধবার দুঃখের কথা বলে বিদ্যাসাগরের মা নাকি তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর তো শাস্ত্রজ্ঞান অগাধ। কোথাও কি এমন কোনও বিধান নেই, যার মাধ্যমে বিধবাদের দুর্দশা মোচন সম্ভব হয়? বস্তুত হিন্দু বিধবাদের তখন দিন কাটত নিদারুণ কষ্টে। শাস্ত্রকে সামনে রেখেই এমন এমন বিধান তাঁদের জন্য নির্ধারিত ছিল, যাতে বেঁচে থাকাই যেন দায় হয়ে উঠেছিল। নারীসমাজকে এমন কোণঠাসা করে রাখলে যে আখেরে সমগ্র সমাজেরই উন্নতির পথ বন্ধ হয়ে যায়, সে কথা জানতেন বিদ্যাসাগর। আর তাই বিধবা বিবাহ প্রচলনের ব্যাপারে সর্বতোভাবে সচেষ্ট হয়ে উঠলেন।
আরও শুনুন: মামলায় অভিযুক্ত খোদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শেষমেশ কী হল পরিণাম?
তৎকালীন সমাজকেও অবশ্য হাড়ে হাড়েই চিনতেন বিদ্যাসাগর। জানতেন, সাধারণ যুক্তি দিয়ে এর প্রতিবিধান সম্ভব নয়। যে শাস্ত্রের দোহাই দিয়ে নারীদের লাঞ্ছিত করা হয়, সেই শাস্ত্রের কথা দিয়েই তাঁর মত গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হবে। সেই সময়টা দিনরাত নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছেন অধ্যয়নে। তন্নতন্ন করে শাস্ত্র খুঁজে দেখছেন, কোথাও এরকম কোনও বিধান আছে কি না। শেষ পর্যন্ত ‘পরাশরসংহিতা’য় পেলেন সন্ধান। আরও বহু শাস্ত্র ঘেঁটে তিনি তখন একটি বই লিখলেন। সেখানে যুক্তি দিয়ে তিনি বোঝালেন কেন বিধবাদের পুনরায় বিবাহ হওয়া উচিত। একই সঙ্গে তাঁর মতের সপক্ষে শাস্ত্র থেকে উদ্ধৃতি তুলেও দেখালেন। এবার তো সমাজ হল দ্বিধাবিভক্ত। একটা অংশ বিদ্যাসাগরকে সমর্থন জানাল। অন্য অংশ থেকে তাঁর দিকে ধেয়ে এল তীব্র আক্রমণ, ব্যঙ্গ, বিদ্রূপ। বলা বাহুল্য, এই শেষের অংশটাই ছিল জোরালো। কী-না-কী অপমান, লাঞ্ছনা তখন সহ্য করতে হয়েছে বিদ্যাসাগরকে! বিদ্যাসাগর যেহেতু বিধবা বিবাহের পক্ষে বই লিখেছেন, তাই কিছু পণ্ডিত এর বিপক্ষে বেশ কয়েকখানা বই লিখে ফেললেন। শোনা যায়, শোভাবাজারের রাজা রাধাকান্ত দেবও শেষমেশ বিদ্যাসাগরের বিরুদ্ধতাই করেছিলেন। কিন্তু বিদ্যাসাগর ছাড়বার পাত্র নন। তিনি আরও কঠোর ভাবে সাজালেন তাঁর যুক্তি। বিরোধীদের মত খণ্ডন করে প্রকাশ করলেন এবিষয়ে তাঁর দ্বিতীয় বই।
বাকি অংশ শুনে নিন।