হিন্দু ছেলেকে বিয়ে করেছে বাড়ির মেয়ে। তাতেই হয়েছে চরম অপরাধ! শাস্তি হিসেবে টানা দু-মাস মেয়েকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখল মুসলিম পরিবার। ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়েছে। কোথায় ঘটেছে এমন কাণ্ড? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ভিনধর্মে বিয়েতে আপত্তি, এমনটা নতুন কিছু নয়। সেই কাজকে অপরাধ মনে করেন, এমন মানুষও এ দেশে কম নেই। কিন্তু এর জন্য শাস্তি দেওয়ার অধিকার বোধহয় কোনও সংবিধান দেয় না। কিন্তু তাতে কী! বাড়ির মেয়েকে বাড়ির লোক শাসন করবে, এতে কার আপত্তি কে শুনছে! তাই স্বাধীনতার এত বছর পরেও পাশবিক অত্যাচারের সাক্ষী থাকল ভারত।
ঘটনা মহারাষ্ট্রের। সেখানকার জালনা জেলার প্রত্যন্ত এক গ্রামে শাহনাজ সোনালের বাড়ি। মাত্র ২০ বছর বয়সে বাড়ির অমতে তিনি বিয়ে করেন ভালোবাসার মানুষকে। স্বধর্মে নয়, হিন্দু ছেলেকে বিয়ে করেছিলেন শাহনাজ। সেই অপরাধে মেয়ের মুখ দেখা বন্ধ করে তাঁর পরিবার। সুখে শান্তিতে সংসার করছিলেন শাহনাজ। কিছুদিনের মধ্যে সন্তান হয় তাঁদের। সেই খুদের বয়সও তিন বছর। এতদিনে একবারও বাড়ি যাওয়া হয়নি। দাদু-দিদার সঙ্গে পরিচয় নেই ছোট্ট ছেলেটির। সেই নিয়ে খানিক মনমরা হয়েই থাকতেন শাহনাজ। ভেবেছিলেন এতগুলো দিন পেরিয়েছে, এবার অন্তত বাবা-মা ক্ষমা করে দেবেন। অন্তত নাতির মুখে চেয়ে সবটা মেনে নেবেন তাঁরা। কিন্তু না, বাস্তবে হল ঠিক উলটোটা এবং এতটাই অন্যরকম ঘটনার সাক্ষী থাকতে হল শাহনাজকে, যে এই ঘটনার তুলনা কোনও সিনেমার সঙ্গে করা গেল না। এমনিতে ভিনধর্মে বিয়ে, বাড়িতে সেই বিয়ে মেনে না নেওয়া, ইত্যাদি অনেক কিছুই সিনেমা-সিরিয়ালে আমরা দেখেছি। কিন্তু শাহনাজের সঙ্গে যা ঘটেছে তা সিনেমার গল্পকেও হার মানাবে।
ঠিক কী ঘটেছে?
মাস দুয়েক আগে, ছেলেকে নিয়ে নিজের গ্রামে হাজির হন শাহনাজ। মেয়েকে এতদিন পর দেখে তাঁরাও আপ্লূত হন। সাদরে বাড়িতে নিয়ে যান মেয়ে ও নাতিকে। কিন্তু এরপরই শুরু হয় সমস্যা। শাহনাজকে তাঁরা সাফ জানিয়ে দেন, আর হিন্দু শ্বশুরবাড়িতে ফেরা হবে না। এই দাবি এত সহজে কেন মেনে নেবে শাহনাজ? স্বাভাবিক ভাবেই শুরু হল অশান্তি। একা শাহনাজের কী ই বা করার ছিল! তাও নিজের সবটুকু দিয়ে ফিরে আসার লড়াই চালিয়ে যেতে থাকেন তিনি। এইসময় একপ্রকার জোর করে তাঁর হাতে-পায়ে শিকল পরিয়ে দেন পরিবারের লোকজন। কোনওভাবেই যাতে পালিয়ে যেতে না পারে শাহনাজ, তাই এমন ব্যবস্থা। শুনতে অবাক লাগলেও এমনটা এক্কেবারে সত্যি। মধ্যযুগীয় শাস্তি সহ্য করতে হল শাহনাজকে স্রেফ হিন্দু ছেলেকে বিয়ে করার জন্য। তাও টানা দু-মাস। এদিকে স্ত্রী ফিরছেন না দেখে অস্থির হয়ে শ্বশুরবাড়িতে হাজির হন শাহনাজের হিন্দু স্বামী। তাঁকেও ভিতরে ঢুকতে দিতে অস্বীকার করেন ওই পরিবারের সদস্যরা। রীতিমতো অপমান করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। উপায় না বুঝে পুলিশের দ্বারস্থ হন তিনি। ঘটনায় তৎপরতার সঙ্গে পদক্ষেপ পরে প্রশাসন। এবং দু-মাস পর উদ্ধার হন শাহনাজ। এই নিয়ে পুলিশের কাছে শাহনাজের পরিবারের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে তাঁর স্বামী। আপাতত তদন্ত চলছে। দোষ প্রমাণিত হলে শাস্তি জুটবে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। তবে এই ঘটনা যেন আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, সমাজে মেয়েদের অবস্থাটা ঠিক কেমন! নামেই ডিজিটাল যুগ, নামেই আমরা আধুনিক, এখনও মধ্যযুগীয় বর্বরতা এতটুকু ছেড়ে যায়নি অনেককে। তাই বাড়ির মেয়েকে এমন শাস্তি দেওয়ার আগে দু-বার ভাবেন না কেউ কেউ!