ভারতীয় সংস্কৃতিতে প্রদীপ জ্বালানোর রেওয়াজ চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরেই। প্রদীপের সঙ্গে জুড়ে থাকে পবিত্রতার অনুষঙ্গ। আবার মঙ্গলকামনায় বা শ্রদ্ধা জানাতেও প্রদীপ অপরিহার্য উপকরণ। আকাশপ্রদীপ জ্বালানো বাঙালির এক সুন্দর প্রথা, যেখানে মিলেমিশে গিয়েছে এমনই একাধিক কারণ।
আশ্বিনের শেষ দিনে জলবিষুব সংক্রান্তি, আর কার্তিক মাসের শেষ দিন ষড়শীতি সংক্রান্তি। মধ্যবর্তী সময়কাল জুড়ে আকাশের দিকে নিজের আলোটুকু পৌঁছে দেবে একটি প্রদীপ। আকাশপ্রদীপ যার নাম। সৌর কার্তিক মাসে পালনীয় এই বিশেষ ব্রতের কী তাৎপর্য রয়েছে আমাদের জীবনে?
আরও শুনুন: Spiritual: বিদ্বেষ পেরিয়ে দুই সম্প্রদায়ের মিলনের স্বপ্ন দেখেছিলেন সন্ত কবীর
রবীন্দ্রনাথের গানে রয়েছে- ‘আমার এই দেহখানি তুলে ধরো/ তোমার ওই দেবালয়ের প্রদীপ করো’। আকাশপ্রদীপও যেন এক অর্থে এই মানবদেহেরই প্রতীক। ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, ব্যোম- এই পঞ্চভূতে যেমন তৈরি হয় এই নশ্বর শরীর, মাটির প্রদীপটিও তাই! ক্ষিতি অর্থে পৃথিবী বা ভূমি, সেই ভূমি তথা মাটি তার কায়া তৈরি করে। অপ বা জলে তা আকার পায়। তেজ বা আগুন আত্মার মতোই স্থিত হয় তার অন্তরে। সেই আগুনকে জ্বলতে সাহায্য করে মরুৎ বা বায়ু। আর ব্যোম বা অনন্ত শূন্য জেগে থাকে তার গর্ভে। শূন্যের উদ্দেশেই ধাবিত হয় এই প্রদীপের আলো। কারা বাস করেন সেই শূন্যে?
আরও শুনুন: Spiritual: ঠাকুর বলতেন, সংসারে থাকতে হয় পিঁপড়ের মতো হয়ে…
একদিকে স্বর্গলোকে অবস্থান করেন লক্ষ্মী-নারায়ণ। এই পৃথিবীকে পালন করেন বিষ্ণু। আবার শস্যের ঋতুও এই কাল। তাই আবাহন করা হয় লক্ষ্মী দেবীকেও। অন্যদিকে পিতৃলোকে, প্রেতলোকে রয়েছেন যে সকল পূর্বপুরুষ, তাঁদের আত্মার উদ্দেশেও নিবেদিত এই আলো। তাই দেবতার আবাহনমন্ত্রের সঙ্গে উচ্চারিত হয় তাঁদের কথাও। পূর্বপুরুষের আশীর্বাদ কামনায় জ্বালানো হয় আকাশপ্রদীপ, ওই আলো ধরেই তাঁরা নেমে আসেন মর্তলোকে, এমন মত পোষণ করেন কেউ কেউ।।আবার কোনও মত বলে, পিতৃপক্ষে উত্তরপুরুষের দেওয়া জল গ্রহণ করতে পৃথিবীর বুকে নেমে এসেছিলেন যাঁরা, তাঁদের নিজ ভুবনে ফেরার পথ দেখায় আকাশপ্রদীপের আলো।
আবার শীতের শুরুতে মানুষের সভ্যতায় আগুনের যে গুরুত্ব তাও প্রতীক হয়ে জ্বলে এই প্রদীপের মাধ্যমে। জানা যায়, মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের পৃষ্ঠপোষকতায় এই প্রথা ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। বর্তমানে শহরাঞ্চলে না থাকলেও, আজও বাংলার গ্রাম লালন করে চলেছে এই সংস্কৃতিকে।