বাহুমূলে কি তৈরি হচ্ছে আরও একটি স্তন? এমনই সন্দেহ দানা বাঁধছিল এক মহিলাকে ঘিরে। নইলে শরীরের ওই অংশ থেকে কীভাবে স্তনদুগ্ধ নিঃসৃত হওয়া সম্ভব? পরীক্ষানিরীক্ষা করে কী জানা গেল শেষমেশ?
নানারকম অদ্ভুত রোগ কিংবা বিচিত্র শারীরিক বৈশিষ্ট্য দেখার অভিজ্ঞতা কমবেশি সব ডাক্তারেরই থাকে। কিন্তু পর্তুগালের কয়েকজন ডাক্তার যেমন রোগিণী পেলেন, তেমন অভিজ্ঞতা কারোরই সচরাচর ঘটে না। মহিলার বাহুমূল থেকে নাকি নিঃসৃত হচ্ছে স্তনদুগ্ধ! আরও আশ্চর্যের কথা হল, মহিলার শরীরের সেই অংশটিতে হদিশ পাওয়া গেল একটি শক্ত, গোল মাংসপিণ্ডের। সেটি কি আরও একটি স্তন? কিন্তু কীভাবে তা সম্ভব হতে পারে?
আরও শুনুন: ৪২ লিটার স্তনদুগ্ধ দান হাসপাতালে, ছকভাঙা কাজে কুর্নিশ আদায় করলেন ভারতীয় মহিলা
মাত্র দুদিন আগেই সন্তানের জন্ম দিয়েছেন পর্তুগালের ওই মহিলা। তারপরই তিনি চিকিৎসকদের জানান, ডান বাহুমূলে ব্যথা অনুভব করছেন তিনি। সেইমতো তাঁকে পরীক্ষা করা হলে সেখানে ওই মাংসল অংশটির সন্ধান পান চিকিৎসকেরা। অংশটিতে চাপ দিলে নিঃসৃত হচ্ছিল একপ্রকার সাদা রঙের তরল পদার্থ। পর্তুগালের রাজধানী শহর লিসবনের ডে সান্তা মারিয়া হাসপাতালে কর্মরত দুই ডাক্তার ডঃ ক্রিশ্চিয়ানা মারিনহো-সোয়ারেস এবং ডঃ মারিয়া পুলিদো-ভ্যালেন্তে ধারণা করেন, ওই তরল পদার্থ আদতে স্তনদুগ্ধ ছাড়া আর কিছুই নয়। পরীক্ষানিরীক্ষা করে তাঁরা যে সিদ্ধান্তে পৌঁছন, নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন’-এ সেই রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
আরও শুনুন: সঙ্গীকে কেন ধোঁকা দেয় পুরুষ! গবেষণা বলছে, নাটের গুরু এক বিশেষ হরমোন
তাঁদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ওই মহিলা পলিম্যাস্টিয়ার শিকার। পলিম্যাস্টিয়া হল এমন এক বিশেষ শারীরিক পরিস্থিতি, যেখানে ভ্রূণ অবস্থাতেই অতিরিক্ত ব্রেস্ট টিস্যু তৈরি হয়। প্রায়শই এই কোশগুলি আশ্রয় নেয় বাহুমূলেই। আর সেখানে স্তনগ্রন্থি গঠন করে তারা। কোনও কোনও ক্ষেত্রে সেখানে স্তনবৃন্ত পর্যন্ত তৈরি হয়। কিন্তু বৃন্ত তৈরি না হলেও এই কোশ থেকেই দুগ্ধ ক্ষরণ সম্ভব বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। সমস্যা হল, এর ভেতরে স্তনদুগ্ধ তৈরি হয় বলে তা বের না করলে ওই মহিলার মতোই যন্ত্রণা হয়। ১৯৯৯ সালে মায়ো ক্লিনিক্যাল প্রসিডিংস জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র জানিয়েছিল ১৮ বছরের এক মায়ের কথা। এই যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য তাকে বাহুমূল থেকে পাম্প করে স্তনদুগ্ধ বের করতে হত। গবেষণা বলছে, ২ থেকে ৬ শতাংশ মহিলা এই অতিরিক্ত কোশ নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁদের ক্ষেত্রে ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে, ফলে নিয়মিত পরীক্ষা করা জরুরি।