ভারতের অন্যতম উপজাতি হল ‘অসুর’ সম্প্রদায়। নবরাত্রী তাঁদের কাছে শোকযাপনের দিন। এই সময় অরন্ধন পালন করেন ওঁরা। ঘরে দরজা দিয়ে বসে থাকেন, যাতে করে আর্যদের উৎসবের শব্দ তাঁদের কান অবধি না পৌঁছায়। কান্নার সুরে গান গেয়ে ঘুরে বেড়ান গ্রামে গ্রামে। কয়েক হাজার বছরের এই প্রথা কেন শুরু হয়েছিল জানেন?
আনন্দের না, দুর্গাপুজোর দিনগুলো ওঁদের কাছে শোকপালনের সময়। কারণ এই সময়েই যে ওঁদের রাজা মহিষাসুরকে ছলনা করে হত্যা করা হয়েছিল। হত্যা করেন আর্যদের দেবী দুর্গা। আজও সেই শোক ভুলতে পারেননি ওঁরা। তাই নবরাত্রি জুড়ে শোকপালনের নিয়ম ‘অসুর’ উপজাতিদের মধ্যে!
‘অসুর’ আসলে ভারতের একটি আদিবাসী উপজাতি। পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহার- এই তিন রাজ্যের উপজাতিদের তালিকার একেবারে প্রথম নামটিই হল অসুর। পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহার, ছত্তিশগড়ের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে আজও ‘মহান অসুর সম্রাট হুদুড় দুর্গা স্মরণসভা’র আয়োজন হয়। আসলে হিন্দুদের বিশ্বাস মতে, যে দেবী মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন, তাঁর নাম দুর্গা। যদিও আদিবাসী সমাজ মনে করে, ‘দুর্গা’ আসলে তাঁদের ‘সম্রাট মহিষাসুর’-এরই নাম, তিনিই হলেন ‘হুদুড় দুর্গা’। আদিবাসীদের লোককথা অনুযায়ী, মহিষাসুর ছিলেন অত্যন্ত বলশালী এবং প্রজাবৎসল এক রাজা। এক গৌরবর্ণা নারীকে দিয়ে তাঁদের সেই রাজাকে হত্যা করা হয়েছিল। এক গৌরবর্ণা নারীই যে মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন, তা কিন্তু হিন্দু পুরাণেও আছে। দেবী দুর্গার যে প্রতিমা গড়া হয়, সেখানে তিনি গৌরবর্ণা, তাঁর টিকালো নাক। যা আসলে আর্যদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য। দুর্গার আরেক নাম সেই কারণেই গৌরী। অন্যদিকে মহিষাসুরের যে মূর্তি গড়া হয়, তার গায়ের রঙ কালো, কোঁকড়ানো চুল, পুরু ঠোঁট। এগুলো সবই অনার্যদেরই বৈশিষ্ট্য।
আরও শুনুন: থিমের দৌড়ে হেরে ভূত সাবেকিয়ানা, অবলুপ্তিই ভবিষ্যৎ বাংলার চালচিত্রর?
হিন্দু পুরাণে যেমন মহিষাসুর আর দেবী দুর্গার যুদ্ধের কাহিনি রয়েছে। আদিবাসী লোককথাতেও সেই কাহিনি রয়েছে। তবে কিনা দুটি কাহিনির দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ বিপরীত। আদিবাসী লোকগাথা অনুযায়ী, রাজা মহিষাসুর নারীদের অত্যন্ত সম্মান করতেন। তিনি কোনও নারীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতেন না। মনে করা হয়, এই সুযোগটাই নিয়েছিল আর্যরা। তাই তারা কৌশলে দুর্গাকে ব্যবহার করে প্রবল প্রতাপশালী মহিষাসুরকে বধ করতে। যদিও হিন্দু শাস্ত্রে সেই মহিষাসুরই ভিলেন!
আরও শুনুন: লটারি কেটে পুজো হল দেবী দুর্গার, চমকে দিয়েছিল সেকালের বাংলা
এককালে আর্য ও অনার্যদের সংঘাত নিয়ে গবেষণা করেছিলেন ড. বি.আর. আম্বেদকর। পুরাণ ও লোককথা বিশ্লেষণ করে তিনি দাবি করেছিলেন, দানব, রাক্ষস, দৈত্য, কিন্নর, নাগ, যক্ষ এরা সকলে মিলে যে ‘অসুর’ সম্প্রদায়, তাঁরা আসলে মানুষই ছিলেন। তবে কিনা তাঁরা ছিলেন অনার্য। আর্যরা ভারত দখল শুরু করলে এঁদের সঙ্গেই সংঘাত বাধে। সেই সংঘাত বা যুদ্ধের পরিণতিই মহিষাসুরের মৃত্যু। বহু যুগ আগের সেই ঘটনার শোকপালন হবে এবারের পুজোতেও, অসুর উপজাতি অধ্যুষিত ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের গ্রামগুলিতে। কিন্তু ঠিক কীভাবে শোকপালন করেন ওঁরা?
শুনে নিন বাকি অংশ।