পুরনো কলকাতা। আরও অনেক কিছুর সঙ্গে সেখানে ছিল বাবুয়ানির সংস্কৃতিও। আর বাবু থাকলে তার বাইজি তো আসবেই। তাঁরা নৃত্যগীতে পটিয়সী। কিন্তু সেই সঙ্গে কি বাবুদের যৌন চাহিদাও মেটাতে হত তাঁদের?
কলকাতায় বাইজিরা এলেন কবে! এই প্রশ্নের সঠিক সালতামামি দেওয়া মুশকিল। যতদূর জানা যায় নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ্-এর হাত ধরেই কলকাতা শহরে বাইজিদের আগমন। নবাবের মনোরঞ্জনের জন্যই তাঁরা কলকাতায় এসেছিলেন। বাইজিরা থাকতেন চিৎপুরে। নবাবই তাঁদের এখানে থাকার বন্দোবস্ত করেছিলেন।
সেকালের বাইজিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন—গওহর জান, নূরজাহান, নিকি বাই, মালকা জান, সিদ্ধেশ্বরী, জানকি বাই, অসরুন জিন্নাত, হীরা বুলবুল।
আরও শুনুন – যেমন Breast তেমন Tax, প্রথার নামে দেশের মেয়েদের সইতে হত যৌন হেনস্তাও
কীরকম ছিল এই বাইজিদের মেহফিলের নমুনা? একটা ছোতট ঘটনা তার সাক্ষ্য দেবে। ব্রিটিশ অভিযাত্রী এবং স্মৃতিকথা লেখিকা ফ্যানি পার্কস গিয়েছেন বাবু রামমোহন রায়ের বাড়িতে, সেখানে তিনি দেখেছিলেন নিকি বাইয়ের নাচ। দারুণ গরম তখন। প্রাসাদের চওড়া দালান আলোর মালায় সাজানো, আতসবাজির মায়াময় রোশনাই সঙ্গে বাইনাচ। বাইদের ঘাঘরা একশো গজ চওড়া। সাদা আর রঙিন মসলিনে তৈরি– সোনার জরির কাজ করা, পা অবধি মোড়া সাটিনের কামিজ, ফুলকারি করা দোপাট্টা। বিপুল গয়নায় ঢাকা। এই ছিল সেকালে বাইজিদের বিলাস-ব্যসনের নমুনা।
আরও শুনুন – নগ্নতাই যখন পেশা, কেমন কাটে ন্যুড মডেলদের দিন?
বাইজিরা অনেকেই বাবুদের নয়নের মণি হতেন, কিন্তু সামাজিক স্বীকৃতির ক্ষেত্রে তাঁদেরকে খুব একটা ছাড় দেওয়া হত না। বাইজি মানেই যে তাঁরা যৌনপেশায় যুক্ত ছিলেন, এমন নয়। মারাঠি ভাষায় ‘বাই’ অর্থে মা বা বড় বোন, এর সঙ্গে হিন্দুস্থানি ‘জি’ যুক্ত হত সম্ভ্রম জানানোর উদ্দেশ্যে। তবে বাস্তব ঠিক সেরকম ছিল না। জীবনধারণের জন্য বহু বাইজিকেই যৌনপেশা অবলম্বন করতে হত। বাঁধা বাবুদের মনোরঞ্জনেই ছিল তাঁদের জীবীকা।
আরও শুনুন – একঘেয়েমি না-পসন্দ, কীরকম পর্ন পছন্দ করে মেয়েরা?
১৮৫৬- সালে প্রকাশিত স্ট্রিট ডাইরেক্টরি থেকে জানা যায়, হাড়কাটা লেনের তিন থেকে ৯৪ নম্বর বাড়িগুলির সব কটি ছিল, Bengali Dancing Girl-দের দখলে। কাশিমবাজারের রাজা হরিনাথ রায় বাহাদুরের হিসেবের খাতা থেকেও জানা যায়, বউবাজারে অন্য অনেক জাতির গণিকাদের সঙ্গে ছিল বাইজিদের সহবস্থান। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন বিবি নিকি, বিবি রোশনেইয়া, বিবি ইজাবান, বিবি জানা, বিবি পানি, বিবি প্যায়ারি প্রমুখ। কাশিমবাজারের রাজা হরিনাথ রায়ের ‘মোকাম কলিকাতা সরকার’ হিসেবের খাতা থেকে জানা যায় বাইজিদের আবাস ছিল মোটের ওপর বউবাজার-কেন্দ্রিক। এই বউবাজারেই ছিল নিষিদ্ধপল্লিও। সেখানে দুটি কোঠার মালিক ছিলেন প্রিন্স টেগর। অর্থাৎ দ্বারকানাথ ঠাকুর। তাই পতিতা আর বাইজি সমার্থক হয়ে যেতেও সময় লাগেনি।
বাইজির সমার্থক হিসেবে খেম্টাওয়ালি, তওয়াইফ, নাচওয়ালি ইত্যাদি শব্দ বলা হত। জানা যায়, অষ্টাদশ শতকে কলকাতা শহরে বেশ্যা এবং বাইজিরা পাশাপাশিই থাকতেন।
বাকিটা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।