অ্যাডলফ হিটলার। ইতিহাসের কুখ্যাত চরিত্র। গণহত্যাকারী। হিটলার আর হত্যার ইতিহাস যেন সমার্থক হয়ে আছে। সেই হিটলারের সঙ্গে হ্যান্ডশেকের কারণেই প্রাণ বেঁচেছিল এক অ্যাথলিটের। শুনে নেওয়া যাক সেই গল্প।
গ্রিসে তখন গৃহযুদ্ধ চলছে। ঠিক আগের বছরেই শেষ হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, তার আঁচ এসে পড়েছিল এ দেশের গায়েও। এমনকী, কিছুদিন নাৎসিদের দখলেও চলে গিয়েছিল গ্রিস। সব মিলিয়ে দেশে এখন নেমে এসেছে নিদারুণ দুর্ভিক্ষ। পোকামাকড়ের মতো মারা যাচ্ছে মানুষ। স্রেফ না খেতে পেয়ে।
আরও শুনুন: Refugee Olympic Team: দেশ নেই যাঁদের, অলিম্পিকের মঞ্চে তাঁরাই যেন আস্ত একটা ‘দেশ’
আর এই সময়েই, ১৯৪৬ সালে, শুরু হচ্ছে বস্টন ম্যারাথন। সেখানেই নাম দেবেন ঠিক করলেন এক গ্রিক ভদ্রলোক। নাম তাঁর স্টাইলিয়ানোস কিরিয়াকিডেস (Stylianos Kyriakides)।
যে দেশটা দুর্ভিক্ষে ধুঁকছে, সেখানে ম্যারাথন প্রতিযোগীর জন্য প্রয়োজনীয় ডায়েট মিলবে কোথা থেকে? তার ওপর লোকটি বেজায় গরিব। আধপেটা খেয়ে, না খেয়ে কঙ্কালসার চেহারা। দৌড়োনোর জুতোটাও তো নেই। তার ওপর লন্ডন যাওয়ার রাহাখরচ! তাই বা আসবে কোথা থেকে? সবাই বারণ করল এককথায়। এর আগেও তো ম্যারাথনে যোগ দিয়েছিলেন মানুষটা। কিস্যু করতে পারেননি। এক্কেবারে গো-হারা হেরে দেশের মুখ পুড়িয়েছিলেন। দৌড় শেষ করেছিলেন নাকি এগারো নম্বরে থেকে! হ্যাঁ, সেই ম্যারাথনের দৌলতে একটা কাজের কাজ হয়েছিল বটে, খোদ ফুয়েরারের সঙ্গে হাত মেলানো। ১৯৩৬ সালের বার্লিন অলিম্পিক ছিল তো সেটা। আরে, ফুয়েরার মানে, হিটলার আর কি। অ্যাডলফ হিটলার। পৃথিবীকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে এক গোপন বাঙ্কারে যিনি নিজেও শেষ হয়ে গেছেন। যখন বেঁচেবর্তে ছিলেন, একের পর এক হত্যা, গণহত্যার আদেশ। কত মানুষ যে শেষ হয়ে গেছে তাঁর সেনাদলের হাতে। স্টাইলিয়ানোস-ও বাঁচতেন নাকি! গ্রিসে যখন নাৎসিরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, ওঁদের গোটা গ্রামটাকেই দাঁড় করিয়েছিলেন বন্দুকের মুখে। একটা লোককেও ছাড়েননি। কেবল স্টাইলিয়ানোসের কাছে ভাগ্যিস সেই ছবিটা ছিল, যেখানে তিনি হিটলারের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন। সে ছবি দেখে নাৎসি ব্যাটাদের চক্ষু চড়কগাছ। সুড়সুড় করে ছেড়ে দিল। ম্যারাথনের দৌলতে প্রাণটা বেঁচে যাওয়া কি কম কথা!
আরও শুনুন: Olympics: ফুটবলে এশিয়ার প্রথম হ্যাটট্রিকের রেকর্ড ভারতেরই
যদিও প্রাণ বাঁচলেও মান বাঁচল না। তাই ফের ম্যারাথনে নামতে ভদ্রলোক নাছোড়বান্দা। পাথেয় জোগাড় করতে ঘটিবাটি বেচতে হল, তাতেও তার তোয়াক্কা নেই। দৌড়নোর জুতোটার বন্দোবস্ত করে দিলেন বন্ধু, জন কেলি। তিনিও ম্যারাথনে দৌড়োবেন এবার। সেসব ঝামেলা যদি বা মিটল, বেঁকে বসলেন ডাক্তাররা। এই হাড়জিরজিরে লোকটাকে দেবেন ফিট সার্টিফিকেট? তাও ম্যারাথনে নামার যোগ্য ঘোষণা করে? শেষে খুনের দায়ে হাতে হাতকড়া পড়ুক আর কি! কিন্তু এই লোকটি যে ম্যারাথনের দেশের লোক! যে দেশের একজন মানুষ নিজের দেশের জন্য ছুটে অতিক্রম করেছিলেন ২৫০ কিলোমিটার, মরে গিয়েছিলেন কিন্তু লক্ষ্যে না পৌঁছে থামেননি। স্টাইলিয়ানোস জেদ ধরেই এসেছেন, সুতরাং হাতে পায়ে ধরে কোনওমতে ম্যারাথনে নামার অনুমতিটুকু জোগাড় করে ফেললেন তিনি।
বাকি গল্প শুনে নিন প্লে-বাটনে ক্লিক করে।