মন্দির প্রবেশে পুরুষদের ঊর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃত করে রাখার প্রথা বাতিল হোক। কেরলের শিবগিরির মঠের প্রেসিডেন্ট স্বামী সচ্চিদানন্দের মত প্রকাশ। বিতর্ক হিন্দু সংগঠনগুলোর। প্রথা বদলে সরকারের কোনও ভুমিকা থাকা উচিত নয়।
দীর্ঘদিনের সংস্কার। এবার তা বন্ধ হওয়া উচিত। মন্দিরে ঢোকার সময় পুরুষদের ঊর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃত করে রাখার প্রথা বাতিল হোক। সম্প্রতি এমনই মত প্রকাশ করেছিলেন কেরলের শিবগিরির মঠের প্রেসিডেন্ট স্বামী সচ্চিদানন্দ। তাঁকে সমর্থন জানিয়েছিলেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রীও। তবে সেই সংস্কারের মত নিয়েই এবার আড়াআড়ি ভেঙে গেল হিন্দু সংগঠনগুলো। কেউ কেউ সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রথা বাতিলের পক্ষে। তবে বিরুদ্ধ মত-ই প্রবল।
:আরও শুনুন:
রাম মন্দির নিয়ে বিতর্ক কম নেই, তবু অযোধ্যাই ছিনিয়ে নিল গিনেসের স্বীকৃতি
সমাজে যখনই নতুন সংস্কারের প্রস্তাব আসে, গোড়াতে এই বিরুদ্ধমত জোরদার হয়ে ওঠে। ইতিহাস সে সাক্ষ্যই দেয়। তবে সেই প্রতিরোধের মুখেই বদলের ফুল ফোটান সংস্কারকরা। এবার যখন পুরুষদের ঊর্ধাঙ্গ অনাবৃত করে রাখার রীতি বদলের প্রস্তাব এল, তখনও দেখা যাচ্ছে একই মতপার্থক্য। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, প্রাচীন এই সংস্কারের প্রস্তাব উঠেছে কেরলে। কেননা এর নেপথ্যে আছে বর্ণবাদী ভারতের ছায়া। মন্দিরে ঢোকার ক্ষেত্রে যে শুধু মহিলাদেরই নানা নিয়ম মানতে হয়, তা নয়; নিয়ম মানতে হয় পুরুষদেরও। যেমন এই ঊর্ধাঙ্গের পোশাক খুলে রাখার নিয়ম। এক কালে যাতে পইতা দেখা যায়, সেই হেতু এই নিয়মের অবতারণা। তবে, আজকের দিনে তা কি জরুরি? স্বামী সচ্চিদানন্দের মতে, এখন এই প্রাচীন প্রথা বয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনও মানে নেই। এক ধাপ এগিয়ে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, যদি অন্যান্য ধর্মপ্রতিষ্ঠানও এই প্রথা তুলে দেয়, তবে তা এক বৃহত্তর সামাজিক সংস্কারেরই রূপ নেবে। তবে, এই প্রস্তাবে মোটেও সায় নেই শ্রীনারায়ণা ধর্ম পরিপালন যোগম সংস্থার সেক্রেটারির। তাঁর মতে, হিন্দুদের মধ্যেও নানা ক্ষেত্রে এরকম ভিন্ন ভিন্ন প্রথা পালনের রেওয়াজ আছে। তবে তা তো সম্প্রদায়গত কোনও বিভেদ তৈরি করে না। অর্থাৎ তিনি এই প্রথা তুলে দেওয়ার পক্ষপাতী নন। একই সুর অন্যান্য হিন্দু সংগঠনগুলোরও। কেউ বলছেন, প্রতিটি মন্দিরের পৃথক কিছু নিয়মাবলি আছে। তা এমন রাতারাতি তুলে দেওয়া যায় না। আবার কেউ বলছেন, এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। ফলত কী পালটাবে আর পালটাবে না, তা সরকার ঠিক করে দিতে পারে না। তাঁদের সাফ কথা, সবার সঙ্গে আলোচনা না করে এরকম সর্বজনীন কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যায় না।
:আরও শুনুন:
মুসলিম বিচারপতি আপত্তি তোলেননি, নতুন বিচারপতি সরালেন সরকারি বাংলোর হনুমান মন্দির
যথারীতি এই সংস্কারের পদক্ষেপ নিয়ে শুরু হয়েছে মতপার্থক্য। তা অস্বাভাবিক নয়। তবে যাঁরা সামাজিক সংস্কারের প্রয়াসী, তাঁরা এই প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সদর্থক পরিবর্তন এনেছেন। এবারও কি তা সম্ভব হবে? আপাতত সংগঠনগুলোর সহমত হওয়ার উপরই তা নির্ভর করছে।