আলোর উৎসব দীপাবলি। লক্ষ লক্ষ প্রদীপে সেজেছে রামমন্দির। সারা বাড়িতে প্রদীপ জ্বেলেছে দেশবাসী। কিন্তু মুশকিল হল ব্যবহৃত প্রদীপ কী হবে? বিশেষ করে যারা বাড়িতে প্রদীপ জ্বালিয়েছেন তাঁরা কী করবেন ওই প্রদীপ? নিয়ম রয়েছে শাস্ত্রের। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
সন্ধেবেলা প্রদীপ জ্বালানো। গেরস্ত বাড়ির এ নিয়ম প্রচলিত। বলা হয়, এমনটা করলে সংসারে মঙ্গল হয়। তবে দীপাবলির ব্যাপারটা আলাদা। এই সময় বিশেষভাবে গোটা বাড়ি সাজানো হয় প্রদীপ বা মোমবাতির আলোয়। কালীপুজোর আগেরদিন অর্থাৎ ভূত চর্তুদর্শীতে চোদ্দ প্রদীপ জ্বালানো নিয়মের মধ্যেই পড়ে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, জ্বালানো হয়ে গেলে সেই প্রদীপের কী হবে?
আরও শুনুন:
কালীপুজোর দিন লক্ষ্মী আরাধনা, বাঙালির প্রথা বাংলার রীতি
সহজ উত্তর, ফেলে দিতে হবে। অবশ্যই তাই। ব্যবহৃত প্রদীপ রেখে দেওয়ার কোনও নিয়ম নেই। কিন্তু কীভাবে এবং কোথায় ফেলা হচ্ছে সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। এমনিতে পুজোর কাজে ব্যবহার হয়েছে এমন জিনিস গঙ্গায় ভাসানোর নিয়ম রয়েছে শাস্ত্রে। গঙ্গা না থাকলে প্রতিষ্ঠিত পুকুর বা জলাশয়ে ফেলা যেতে পারে। একসঙ্গে অন্যান্য আবর্জনার সঙ্গে প্রদীপ না রাখাই ভালো। বিশেষ করে উচ্ছিষ্ট আমিষ খাবারের সঙ্গে কোনওভাবেই না। এতে রুষ্ট হন দেবী লক্ষ্মী। ঠাকুরের ফুলের সঙ্গে ফেলা হলে সমস্যা নেই। যাঁদের বাড়িতে একসঙ্গে অনেক প্রদীপ জ্বালাতে হয় তাঁরা এমনটা করতে পারেন। তবে বহু জ্যোতিষী পুজোয় জ্বালানো প্রদীপ রেখে দেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে কোনও মন্দিরে গেলে সেখানে জ্বালানো যেতে পারে। তারপর আর বাড়ি নিয়ে আসার দরকার নেই। শাস্ত্রে বলে, যে কোনও পুজোতেই প্রদীপের আরতি বিশেষ কার্যকর। এতে তুষ্ট হন দেবতা। তাই মন্দিরে গিয়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে আরতি করার নিদান দেন পণ্ডিতরা। আর সেক্ষেত্রে দীপাবলি জ্বালানো প্রদীপ নিয়েই আরতি করা যেতে পারে। এমনটাই মত তাঁদের।
আরও শুনুন:
ঠিক যেন জগন্নাথ! পুরীর এই কালী বিগ্রহ দেখে চমকে ওঠেন ভক্তরা
কার্তিক অমাবস্যায় বাঙালি কালীপুজোয় মেতে ওঠে। তবে দেশজুড়ে স্রেফ এই উৎসব একদিনের নয়। বরং অমাবস্যার আগে থেকেই শুরু হয়। চলে ভাইফোঁটা অবধি। ধনতেরস, নরক চতুর্থী, অমাবস্যা, বালি প্রতিপদা এবং ভাই দুজ। এইসমস্ত উৎসবেই রয়েছে আলোর ছোঁয়া। এবং তা কৃত্রিম আলো নয় মোটেই। প্রদীপের আলোতে সাজানো নিয়ম। সেই সুবাদে প্রদীপের রমরমা বাড়ে। বাজারে গেলেই চোখে পড়ে হরেক রঙের প্রদীপ। মজার বিষয় হল, এযুগে দাঁড়িয়েও মাটির প্রদীপের জৌলুস কমেনি সেইভাবে। বরং পরিবেশ বান্ধব প্রদীপ বিক্রিতে উৎসাহ বেড়েছে সকলের। সমস্যা হল ব্যবহারের পর সেইসব প্রদীপ কোথায় ফেলা হবে সেই নিয়ে। যতই হোক দীপাবলির প্রদীপের সঙ্গে পুজোর যোগ রয়েছে। তাই যেখানে সেখানে সেসব ফেলা চলে না। অনেকে না বুঝে তাই করেন। তাতে সংসারে অমঙ্গল হতে পারে বলেই মনে করেন জ্যোতিষরা। তাই নিষ্ঠাভরে সেসব গঙ্গাজলে ফেলে দেওয়াই ভালো। জলের মধ্যে মাটির প্রদীপ গলে যাবে একসময়। এবং তাতে পরিবেশেরও ক্ষতি হবে না।