অর্থের প্রয়োজন। তার জন্য নিজের সন্তানকে বিক্রি করতেও দুবার ভাবেননি। অবশ্য বাধ্য হয়েছেন বলা যায়। সম্প্রতি এমনই এক ঘটনায় শোরগোল পড়েছে যোগীরাজ্যে। ঠিক কী ঘটেছে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ন’মাস গর্ভে ধারণ করেছেন। প্রসব যন্ত্রণা সহ্য করে জন্মও দিয়েছেন। অথচ সেই সন্তানকে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন মা। বদলে পেয়েছেন অর্থ। তাই দিয়ে বিপদের মোকাবিলা করেছেন। সামলেছেন অন্য এক সন্তানকে। কিন্তু কী এমন অবস্থা হয়েছিল, যার জন্য নিজের সন্তানককে অবধি বিক্রি করতে হল?
একসময় গঙ্গাসাগরে সন্তান বিসর্জনের চল ছিল। অনেকে মানত করতেন, প্রথম সন্তান সুস্থভাবে জন্ম নিলে তাকে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেবেন। এমনটা করলে পরবর্তীকালে জন্ম নেওয়া সব সন্তান সুস্থ হবে। নেহাতই কুসংস্কার ছাড়া কিছু নয়। নিয়ম করে এই প্রথা বন্ধ করা হয়। সম্প্রতি এমনই এক ঘটনার কথা সামনে এসেছে। সন্তান বিসর্জন নয়, সন্তান বিক্রি। ঘটনা যোগীরাজ্যের। সেখানকার কুশিনগর জেলার দাসওয়া গ্রামের বাসিন্দা লাক্ষ্মীনা পাটেল খুদের মা। স্বামী হর্ষের সঙ্গে মিলে নিজেদের সন্তানকে বিক্রি করেছেন তিনি। বদলে ২০০০০ টাকা পেয়েছেন। তবে এই টাকার লোভে নয়, এমনটা তাঁরা করেছেন একপ্রকার বাধ্য হয়েই। ঘটনার তদন্তে নেমে এমন কিছু তথ্য উঠে আসে, যা দেখে অবাক হন পুলিশরাও।
ঘটনার সূত্রপাত লক্ষ্মীনাকে দিয়ে। কদিন আগে প্রসবযন্ত্রনা নিয়ে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি হন লক্ষ্মীনা। স্বামীর আর্থিক অবস্থা একেবারেই শোচনীয়। বাড়িতেই প্রসবের ব্যবস্থা করা যেত। কিন্তু হঠাৎ যন্ত্রণা শুরু হওয়ায় সহ্য করতে না পেরে স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেন স্বামী হর্ষ। যথাসময়ে ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন লক্ষ্মীনা। গল্পের মোড় ঘোরে এখান থেকেই। স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি শুরু করতেই হাসপাতালের তরফে তাঁকে বাধা দেওয়া হয়। তক্ষুনি ৪০০০ টাকা না দিলে ছাড়া হবে না লক্ষ্মীনাকে। এমনটাই সাফ জানায় কর্তৃপক্ষ। মাথায় আকাশ ভেঙে পরে হর্ষের। এমনিতেই ঋণের দায়ে জর্জরিত অবস্থা তাঁর। ৪০০০ হাজার টাকা যোগাড় করা কোনওভাবেই সম্ভব ছিল না তাঁর পক্ষে। বাধ্য হয়ে গ্রামে ফিরে সকলের কাছে একপ্রকার ভিক্ষা চাইতে শুরু করেন হর্ষ। কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নি। একটি টাকাও সাহায্য হিসেবে বাড়িয়ে দেননি কেউ। নতুন করে ঋণ নেওয়ার কথা ভাবেন হর্ষ। তাতেও কোনও সাড়া পাননি কারও থেকে। এমন সময় তিনি খোঁজ পান এক ব্যক্তির। যিনি টাকা দিতে রাজি হন। কিন্তু বদলে হর্ষ-লক্ষ্মীনার অন্য এক সন্তানকে চেয়ে বসেন। সোজা কথায় এক সন্তানকে বিক্রি করেই অন্য সন্তানকে ঘরে আনতে পারবেন হর্ষ, এমনই শর্ত রাখা হয় তাঁর সামনে। এক নয়, বাড়িতে আরও তিন সন্তান রয়েছে। তার মধ্যে সবথেকে ছোটটির বইয়স ২ বছর একটু বেশি। এদের মধ্যে একজনকে বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন হর্ষ। যেমন ভাবা তেমন কাজ। বুকে পাথর চেপে কোলের সন্তান অন্যের হাতে তুলে দেন। বদলে পান ২০০০০ টাকা। তার থেকেই ৪০০০ টাকা দিয়ে স্ত্রী ও সদ্যোজাতকে ঘরে ফেরান।
এরপর শুরু হয় অন্য সমস্যা। সন্তান বিক্রির কথা জানাজানি হতেই প্রতিবেশিরা রীতিমতো দোষারোপ করতে শুরু করেন লক্ষ্মীনা ও তাঁর স্বামীকে। পুলিশের কাছেও পৌঁছয় সে খবর। বিষয়টা যে বেআইনি তা নিয়ে সন্দেহ নেই। পুলিশ তদন্ত শুরু করে। গ্রেপ্তার করা হয় হাসপাতালের মালিককে, যে ব্যক্তি হর্ষের সন্তানকে কিনেছেন তাঁকেও জেলে পোরে পুলিশ। ছাড় পাননি হর্ষ এবং লক্ষ্মীনাও। যতই বাধ্য হয়ে করুন, কাজটা ভুল তাই গ্রেপ্তার করা হয় তাঁদেরও। ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বিজেপি নেতা। পালটা কটাক্ষ করেছে বিরোধী শিবিরের নেতারাও। যোগীরাজ্যে এমন ঘটনা কীভাবে প্রশ্রয় পেল, সেই প্রশ্নই উঠছে। তবে সবকিছুর নেপথ্যে হর্ষের ঋণের বোঝাকেই দায়ী করা হচ্ছে। বছরখানেক আগে এক সংস্থার থেকে ২ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন হর্ষ। সুদের অঙ্ক এমনই বিপাকে ফেলেছে তাঁকে, যে সেই টাকা আজও শোধ হয়নি। জমি-বাড়ি সব গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যোজনা থেকে পাওয়া ১ লক্ষ টাকাও এই খাতেই দিয়েছেন। তাও শেষ হয়নি দেনা। কেন, এত টাকা সুদ বা এর নেপথ্যে বড় কোনও চক্রান্ত রয়েছে কি না খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে সন্তান বিক্রির বিষয়টি কোনওভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। তাই অপরাধের উপযুক্ত শাস্তি পেতেই হবে দোষীদের। এমনটাই জানাছে যোগীরাজ্যের প্রশাসন।