ভারতীয় দর্শনের যে কোনও শাখায় সূত্রপাত অংশেই বলা হয়েছে, ‘আছে দুঃখ’। অবশ্য জিজ্ঞাসা ‘দুঃখ কীসে যায়?’ শোনাচ্ছেন সতীনাথ মুখোপাধ্যায়।
মহাভারতের যুদ্ধ শেষ হয়েছে। চারিদিকে স্তব্ধ নীরবতা। রক্তক্লেদময় যুদ্ধভূমি। চারিদিকে শবের সারি। পুত্র-স্বামী-স্বজনহীনা নারীদের ক্রন্দন বিলাপে আকাশ-বাতাস উন্মত্ত ধ্বনিজাগরে জর্জরিত, মুখর। এই ঘটনা মহাভারতের স্ত্রী পর্বের। সেখানে বিদুর এক গল্প বলেন। গল্পের মূল কুশীলব দেহধারী মানুষ। যে মানুষ সাধক নন। একেবারেই ছাপোষা সংসারবদ্ধ জীব। সেই মানুষের জীবনের দুর্বিপাক কেমন হয়! কি তার প্রত্যাশা! কি সে চায়, আর পায় কি! সেই সবের মধ্যে সমতা রক্ষা করে কি করে! এ বিষয়ে বিদুর এক গল্প বলেছিলেন, গল্পটি খানিক রূপক আকারে বর্ণিত। কিন্তু তার মধ্যে অন্য তাৎপর্য রয়েছে।
আরও শুনুন – Spiritual: হিন্দু ধর্মে কি সত্যিই আছে ৩৩ কোটি দেবতা?
এক ব্রাহ্মণ হিংস্র পশু-আকীর্ণ শ্বাপদসংকুল এক জঙ্গলে বেপথু হলেন। সে অরণ্যে পশুদের তর্জন এবং চিৎকারে মৃত্যুর দেবতা স্বয়ং যমরাজ অবধি ভয় পেয়ে যান। পথ হারিয়ে প্রথমেই সে এসে পড়ল এক নারীর সামনে। জঙ্গলের মধ্যে নারী এলেন কোথা থেকে! এই নারী যদিও রমণীয় নন, বরং ভীষণ মূরতি, তিনি একটি বিকট একটি হরিণ ধরার জাল বিস্তার করে তাকে ভয় দেখাচ্ছেন। এই অরণ্যকে ঘিরে রেখেছে পাঁচ ফণাওয়ালা বিশালাকায় সব সাপ। একটি ঘাস বেছানো লতাগুল্মে আচ্ছাদিত অন্তরালে থাকা এক কুয়োর মধ্যে ব্রাহ্মণটি তড়িঘড়ি পালাতে গিয়ে উল্টে পড়ল। হেটমুণ্ডউর্দ্ধপদ হয়ে একটি সরু লতাকে অবলম্বন করে সে যা হোক করে ঝুলতে লাগল। এক ভয়াল বিষধর কেউটে সাপ কুয়োর তলদেশে হিস্ হিস্ করছে। কুয়োর বাইরে দাপাদাপি করছে একটি উন্মত্ত হাতি, যার ছ খানা শুঁড় এবং বারোটি পা। যে লতা ঘিরে ব্রাহ্মণটি ঝুলছে তার চারিপাশে মৌচাক। সেখানে বাস বিষাক্ত হুল যুক্ত মৌমাছি ভীমরুলের ঝাঁকের। তারা উপর্যুপরি দংশন করছে ব্রাহ্মণকে।
আরও শুনুন – Spiritual: কপটতা থাকলে হয় না, সরলতাই ঈশ্বরলাভের উপায়
এই অবস্থাতেও মৌচাক থেকে যে বিন্দু বিন্দু মধু ঝরছে ব্রাহ্মণটি চেষ্টা করছে সেই মধু পানের। এইসময় ব্রাহ্মণ দেখতে পেল যে লতাকে অবলম্বন করে সে ঝুলে আছে, সেই লতাটি খুদে খুদে দাঁত দিয়ে অত্যন্ত দ্রুত এবং সুনিপুণ ভাবে কেটে চলেছে দুটি ইঁদুর। একটির রং সাদা অন্যটির রং কালো। অতয়েব মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী, শুধু সময়ের অপেক্ষা। সে ওপরে যেতে পারবে না, তাহলে হাতির মুখে পড়বে। নীচে পড়লে সাপের দংশনে মরবে আর এখানে ঝুলে থাকা অবস্থায় বিষাক্ত ভীমরুল মৌমাছি বোলতা কামড়ে হয়তো তার মৃত্যু আরও খানিক দীর্ঘায়িত হবে। এই অবস্থাতেও ঝুলে থেকে শেষ কয়েক বিন্দু মধু পানের জন্য, বোকা-লোভী ব্রাহ্মণ জিভ বাড়িয়ে, চেটে নিতে চাইছে শেষ চুইয়ে পড়া বিন্দুটা। এই যে ব্রাহ্মনের কথা এতক্ষণ শুনলেন, এই অবস্থা বিদুরের মতে আমাদের সকলেরই। অর্থাৎ সংসারবদ্ধ সকল মানুষরেই।
বাকি অংশ শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।