আর জি করের ঘটনা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, নারীদের সামগ্রিক বিপন্নতা। দোষীদের শাস্তির দাবিতে দেশজুড়ে চলছে আন্দোলন, বিক্ষোভ। এর মধ্যেই সামনে এসেছে আরও অনেক নারকীয় ঘটনার ছবি। তাতে বারে বারে একটাই প্রশ্ন উঠে আসছে, বাঁচার উপায় কি? তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। কেউ বলছেন ধর্ষকদের চরম শাস্তি দেওয়া হোক, কেউ বা অন্যকিছু। তবে মেয়েদের আত্মরক্ষার উপায় শেখার বিষয়টি অনেকের মুখেই ফিরছে। সত্যিই কি এমন কিছু শিখে আত্মরক্ষা সম্ভব? এমন কোনও কৌশল কি রয়েছে যা শিখলে একসঙ্গে ৫-৬ জন ঘিরে ধরলেও আত্মরক্ষা হবে? উত্তর দিলেন কারাটে প্রশিক্ষক শিহান শিবায়ণ গাঙ্গুলী এবং অভিনেতা, মার্শাল আর্টিস্ট কোলাজ সেনগুপ্ত। শুনলেন শুভদীপ রায়।
হাসপাতালের ভিতর তরুণী চিকিৎসকের খুন-ধর্ষণ। মহারাষ্ট্রে স্কুলের মধ্যেই দুই খুদে পড়ুয়াকে যৌন নির্যাতন। মাথায় বন্ধুক ঠেকিয়ে সন্তানের সামনেই মা কে ধর্ষণ। তালিকায় পর পর জুড়তে পারে এমন একাধিক ঘটনা। যা স্পষ্ট করবে, ঘরে-বাইরে মহিলারাই কীভাবে নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন। প্রত্যেকটা ঘটনার পর বিচারের দাবি উঠছে। প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। বিচার হচ্ছে না বলা ভুল। স্রেফ অপরাধীর তেমন যাচ্ছে আসছে না। অপরাধের তালিকায় প্রতিদিন জুড়ছে নতুন কিছু। এই আবহে অনেকেই বাঁচার একমাত্র উপায় হিসেবে ধরে নিচ্ছেন আত্মরক্ষার কৌশল রপ্ত করা। তাঁদের মতে, কারাটে কিংবা মার্শাল আর্ট শিখলেই সমস্যা থেকে সুরাহা মিলবে। সত্যিই কি তাই?
সেলফ ডিফেন্স কেন প্রয়োজনীয়?
এ বিষয়ে কোলাজ সেনগুপ্ত বলছেন, এটা একটা পদ্ধতি। একদিনে সবটা শেখা সম্ভব নয়। অভ্যাসের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে তৈরি করতে হয়। তাতে যে কোনও পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রাখার কৌশল রপ্ত করা যাবে। প্রায় একই মত শিহান শিবায়ণ গাঙ্গুলীর। অভ্যাসের মাধ্যমেই বাড়বে রিফ্লেক্স, সেইসঙ্গে তৈরি হবে মানসিক স্থিরতা।
ঠিক কী শিখতে হবে?
শিবায়ণ জানালেন, মার্শাল আর্টের বিভিন্ন ধরনের কথা। যেমন কিক বক্সিং, ফিলিপিনো মার্শাল আর্ট, ফুল কনট্যাক্ট কারাটে, এইসবই সেলফ ডিফেন্সের জন্য জরুরী। তবে শিখতে হবে সঠিক জায়গায়।
শিক্ষা নাহয় মিলল। সঠিক জায়গা থেকেই মিলল। তাও প্রশ্ন উঠতেই পারে পরিস্থিতি নিয়ে। ধরে নেওয়া যাক, একসঙ্গে ৫-৬ জন দুষ্কৃতি ঘিরে ধরেছে। কোন কৌশলে সেই পরিস্থিতি থেকেও বেঁচে ফেরা সম্ভব?
উত্তরে কোলাজ বলছেন, সবার আগে বুঝে নিতে হবে কোন কোন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ফাঁকা রয়েছে। মাথা, কনুই, হাতের আঙুল প্রয়োজন হলে কাঁধের ঝটকা, বা শরীরের ওজনকে বুদ্ধি করে কাজে লাগাতে হবে। তবে সবথেকে বেশি জরুরী প্রত্যুৎপন্নমতিত্ত্ব। সেই মুহূর্তে কতটা মাথা ঠাণ্ডা থাকছে। সেই কৌশল অবশ্যই রপ্ত হবে নিয়মিত অভ্যাসে। এ বিষয়ে শিবায়ণ জানালেন ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা। পরিস্থিতি বুঝে নিজেকে সজাগ রাখতে পারলেই বিপদ এড়ানো সম্ভব। তবে খেয়াল রাখতে হবে ট্রেনিং-এর বিষয়টিও। এর সঙ্গে অঙ্কের তুলনা টেনে শিবায়ণ বললেন, ঠিকমতো অভ্যাস করলে স্টামিনা বাড়বে, মাথা ঠাণ্ডা থাকবে, ফলত বেঁচে ফেরার সম্ভাবনাও অনেকটাই নিশ্চিত হবে।
অনেকেরই ধারণা, ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের গায়ের জোর কম। মহিলা মহলেও অনেকেই একথা বিশ্বাস করেন। সত্যিই কি মার্শাল আর্ট বা সেলফ ডিফেন্সের ক্ষেত্রে গায়ের জোর প্রাসঙ্গিক?
কোলাজ বলছেন, গায়ের জোরের সঙ্গে এর সম্পর্ক সমান নয়। তাঁর কথায় আবারও ফিরেছে অভ্যাসের প্রসঙ্গ। নিয়মিত সঠিক পদ্ধতি মেনে অভ্যাস করলে গায়ের জোর বাড়বে বলেই জানাচ্ছেন কোলাজ। একইসঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে নিজেকে সবল বা দুর্বল ভাবা, নিতান্তি মানসিক। সবার আগে এই ধরনের ভাবনা বন্ধ করার পরামর্শ দিচ্ছেন কোলাজ। এদিকে শিবায়ণও বলছেন, গায়ের জোর বাড়াতে হবে। সেইসঙ্গে মনের জোর বাড়াতে হবে। কোনও পরিস্থিতিতেই হাল ছাড়লে চলবে না। তবে বিপদ থেকে রক্ষা মিলতে পারে বলে মনে করছেন কারাটে প্রশিক্ষক।
কিন্তু কীভাবে শুরু করা উচিত?
কোলাজ বলছেন, শারীরিক ফিটনেসের কথা। প্রতিদিন শরীরচর্চা করলেই তা সম্ভব। শুধু শারীরিক নয়, মানসিক ভাবেও নিজেকে মজবুত করতে হবে। ধীরে ধীরে এই অভ্যাস করতে পারলেই সেলফ ডিফেন্স শেখা যাবে।
নিজে শিখে অন্যদের শেখানো সম্ভব?
কোলাজ বলছেন, অবশ্যই সম্ভব। তবে খেয়াল রাখতে হবে শুধুমাত্র কৌশল নয়, এর সঙ্গে বিশেষভাবে জড়িয়ে স্পিরিচুয়ালিজম। সেক্ষেত্রে সবকিছু শেখালেই হবে না, দরকার নিয়মিত অভ্যাস।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে সেলফ ডিফেন্স প্রয়োজনীয় একথা বোঝা গেল। কিন্তু এই প্রশিক্ষণ কতটা বদল আনতে পারে সমাজে?
কোলাজের মতে এই প্রশিক্ষণ সবার আগে মানসিকতার বদল আনবে। অন্যদিকে শিবায়ণ বললেন, নির্যাতিত যারা তাঁদেরই অস্ত্র তুলতে হয়, তবেই বিপ্লব সম্ভব। স্বাধীনতার প্রসঙ্গ ধরে বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন কারাটে প্রশিক্ষক।