তাঁর হাতের জাদুতে মুগ্ধ গোটা বলিউড। তবে রান্নার নয়, মেক-আপের। বলা যায়, তাঁকে ছাড়া শাহরুখ হয়তো ‘জওয়ান’ হতেন না কিংবা রণবীরকে ‘খিলজি’ হিসেবে তেমন মানাত না। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কখনও ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা খলনায়ক, কখনও আবার একই সিনেমাইয় বাবা-ছেলে একই অভিনেতা। মেক-আপের জোরে সব সম্ভব। ক্যামেরার কারসাজী অবশ্যই রয়েছে, তবে প্রাথমিক ভাবে অভিনেতার চেহারা চরিত্রের সঙ্গে মেলাতেই হয়। আর সেক্ষেত্রে মেক-আপ হতে হবে এক্কেবারে পারফেক্ট।
আরও শুনুন: পুরুষদের ‘দর্দ’ সম্বল করে রাজনৈতিক দল ‘মর্দ’, ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত লোকসভাতে
ভারতীয় সিনেমার একেবারে শুরু দিকে ফেরা যাক। সেসময় নারী-পুরুষ দুই চরিত্রেই ছেলেদের অভিনয় করতে হত। সাজও হতো সেইমতো। দেখে যতই বোঝা যাক, সবাই ধরে নিতেন যিনি নারীর পোশাকে রয়েছেন তিনিই অভিনেত্রী, আর পুরুষের পোশাকে থাকা দাড়িগোঁফ মানেই অভিনেতা। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এমনটা কল্পনা করাও হয়তো কঠিন। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সিনেমা যেমন বদলেছে, তেমনই আলাদা হয়েছে অভিনেতাদের সাজ পোশাক। স্বাভাবিকভাবেই পালটেছে মেক-আপের ব্যাকরণ। ইতিহাসের চরিত্রই হোক বা রূপকথার, অভিনেতাকে এক্কেবারে সেই মতো সাজিয়ে তুলতে পারেন মেক-আপ আর্টিস্টরা। এমনকি একই ছবিতে বাবা-ছেলের দ্বৈত চরিত্রে অভিনয়ের জন্যও নায়ককে সাজিয়ে দেওয়া সম্ভব। বিগত কয়েক বছরের বলি সিনেমায় এমন উদাহরণ কম নেই। পদ্মাবত ছবিতে ‘খিলজি’ চরিত্রে অবাক করেছিলেন রণবীর সিং। অভিনয়ের দাপট তো বটেই, সেইসঙ্গে চেহারার গঠন ছিল এক্কেবারে ইতিহাসের খলনায়কের মতোই। কিংবা গাঙ্গুবাই সিনেয়ায় আলিয়া ভাট। তাঁরও অভিনয় দক্ষতা মুগ্ধ করেছিল সকলকে, কিন্তু সিনেমার কিছু কিছু দৃশ্যে আলিয়াকে এমন অবস্থায় দেখানো হয়েছে যা অবাক করতে বাধ্য। সারা গায়ে ক্ষতের চিহ্ন নিয়ে ডায়লগ বলছেন আলিয়া, সিনেমায় এই দৃশ্য একবার দেখলে বোঝার উপায় ছিল না সমস্ত আঘাতই মেক-আপের কারসাজি। মেক-আপ জাদুতে একেবারে অন্য অবতারে ধরা দিয়েছিলেন দক্ষিণের নায়ক আল্লু অর্জুন। তাঁর অভিনীত পুস্পা সিনেমা নিয়ে যত না চর্চা হয়েছিল তার থেকেও বেশি আলোচনা হয়েছিল সিনেমায় আল্লুর লুক নিয়ে। এক্কেবারে হাল রিলিজের জওয়ানের কথাও ভুললে চলবে না। সিনেমায় বাবা ও ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। কখনও একইসঙ্গে দেখা গিয়েছে দুই শাহরুখকে। সে অবশ্য ক্যামেরার কারসাজী। তবে একই মানুষকে দুই চেহারার্য ফুটিয়ে তোলা মেক-আপ ছাড়া সম্ভব ছিল না। তালিকাটা মোটেও ছোট নয়। বলা ভালো, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে অধিকাংশ সিনামতেই মেক-আপ বিরাট বড় ভূমিকা পালন করছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই সব মেক-আপের নেপথ্যে কারা রয়েছেন?
আরও শুনুন: বায়না ছিল ‘কুড়কুড়ে’ চাই, আনতে বেমালুম ভুলে গেলেন স্বামী! রেগে ডিভোর্স চাইলেন স্ত্রী
অবশ্যই বলিউডে একাধিক প্রতিভাবান মেক-আপ আর্টিস্ট রয়েছেন। তবে খিলজি থেকে জওয়ান কিংবা গাঙ্গুবাই যার হাতের জাদুতে বাস্তব রূপ পেয়েছিল, তিনি একজনই। বর্তমানে মেক-আপ আর্টিস্ট হিসেবে গোটা বলিউডের প্রথম পছন্দ প্রীতিশিল সিং। পাঠানকোটের এই তরুণী ইতিমধ্যেই সেরা মেক-আপ আর্টিস্ট হিসেবে জাতীয় পুরস্কার ঝুলিতে ভরেছেন। শুধু সিনেমা নয়, ওয়েবসিরিজের দুনিয়াতেও প্রীতির অবাধ বিচরণ। একসময়ের শাহরুখ ফ্যান, এখন নিজেই সাজিয়ে দেন পছন্দের অভিনেতাকে। বলা ভালো, কিং খানেরও মেক-আপ আর্টিস্ট হিসেবে তাঁকেই পছন্দ। শুধু কিং খান কেন, অমিতাভ বচ্চনের মতো কিংবদন্তিও তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। মেক-আপের দুনিয়ায় এই মুহূর্তে সবথেকে প্রচলিত প্রস্থেটিক। অর্থাৎ নকল চুল-দাঁড়ি গোফের মতো গোটা মুখের চেহারাই বদলে দেওয়ার কায়দা। ঠিকমতো করতে পারলে আসল লোককেই চেনা দায়। এর জন্য মেক-আপ স্কুলও খুলেছেন প্রীতি। সেখানে মেক-আপের দুনিয়ার যাবতীয় নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার সেখানো হয়। আগামীদিনে এই দুনিয়ায় আরও অনেকে আগ্রহ দেখান সেটাই চাইছেন প্রীতি। একইসঙ্গে নিজের হাতের জাদুতে মুগ্ধ করে চলেছেন, সিনে দুনিয়ার সকলকে।