ভোটের কালি আঙুল ছোঁবে প্রথমবার। রাজনীতি সম্পর্কে তেমন জ্ঞান নেই বললেই চলে। প্রত্যেকের কাছে রাজনীতির ধারণাও ভিন্ন। মিল একটাই। সকলের বেড়ে ওঠা মোদি জমানায়। চব্বিশের নির্বাচনে কোনদিকে ঝোঁক ‘মোদি জেনারেশন’ ভোটারদের? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
বেশিরভাগই কলেজ পড়ুয়া। কেউ বা ব্যবসা। কেউ আবার পড়াশোনা করছে সরকারি চাকরির জন্য। কাউকে এখনই পেটের দায়ে ছুটতে হচ্ছে অফিস কিংবা দোকানে। এঁরা সকলেই প্রথমবার ভোট দেবে। রাজনীতি সম্পর্কে যার যেটুকু ধারণা সেই মতোই চাপ পড়বে ব্যালট বাক্সে। আর সেখানেই বড়সর একটা ভূমিকা পালন করছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। ইতিবাচক বা নেতিবাচক যাই হোক, মোদি সম্পর্কে এঁদের প্রত্যেকেরই রয়েছে বিশেষ ধারনা। আর সেইসঙ্গে মিশেছে দেশের কথা। চাকরি থেকে শিক্ষা দেশ কোথায় দাঁড়িয়ে, নতুন ভোটারদের অনেকেই সেই বিচার করছেন নিজের ব্যক্তিগত পরিসরের দিকে তাকিয়ে। কার এলাকায় কোন বিষয়ে কেমন উন্নতি, সেই অনুযায়ী ঠিক হচ্ছে ভোট।
আরও শুনুন: হিন্দু রাজাদের ইংরেজ-প্রীতির নিন্দে, অথচ রাহুলকে মুসলিম-খোঁচা দিতে মোদির হাতিয়ার তাঁরাও
বিগত ১০ বছর ধরে দেশের মসনদে মোদি। মোটেও কম সময় নয়। অধিকাংশ নতুন ভোটার এই সময়টায় শেষ করেছেন হাইস্কুল। কাজেই দেশের রাজনীতির অ আ ক খ শেখা থেকে একেবারে পোক্ত ধারণা তৈরি হওয়া, সবই হয়েছে এই সময়টায়। অবশ্যই সম্পূর্ণ রাজনৈতিক চেতনা তৈরি হয়নি এঁদের বেশিরাভাগেরই। তবু যেটুকু হয়েছে, তার উপর ভিত্তি করেই ভোট দেবেন এঁরা। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, চলতি নির্বাচনে খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারে এই নতুন ভোটাররাই। তা এই ভোটাররা মোদি সম্পর্কে ধারণা রাখেন একথা আর নতুন করে বলার দরকার নেই। প্রশ্ন হচ্ছে সেই ধারণা ঠিক কেমন? আর ভোটবাক্সে তার ছাপ পড়বে কতটা?
আরও শুনুন: প্রথমবার আঙুলে কালি, ভোটের খেলা ঘুরিয়ে দিতে ওস্তাদ নতুন ভোটাররাও
ভোটের আবহে সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম এই নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছিল। ১৮-২৫ বছর বয়সীরাই সেখানে অংশ নেন। প্রশ্নে সরাসরি কোনও দলের উল্লেখ ছিল না। বরং দেশ কোথায় দাঁড়িয়ে বা দেশের অবস্থা কেমন, সেই নিইয়েই জানতে চাওয়া হয়েছিল নতুন ভোটারদের কাছে। তাতে বিভিন্ন উত্তর এসেছে। কেউ বলছেন, এখন সুযোগ সুবিধা অনেক বেড়েছে। কারণ হিসেবে সবার হাতে স্মার্ট ফোন কিংবা তাঁর এলাকায় পরিবহনে উন্নতির কথা বলছেন নতুন ভোটার। কেউ বলছেন, সম্পত্তির কথা। তাঁর দাবি, বিগত কয়েকবছরে রীতিমতো বড়লোক হয়েছেন কয়েকজন। আর যারা গরীব, তাঁরা আরও গরীব হয়েছে। বিভিন্ন কলেজে ফিজ এর বাড়বাড়ন্ত নিয়ে মূল অভিযোগ তাঁর। বেঙ্গালুরুর এক যুবকের দাবি, এই কও বছরে অনেক কমেছে ক্রাইম রেট। ধরে নেওয়া যেতে পারে, উঠেছে চাকরির প্রসঙ্গও। মোদি জমানায় চাকরির হার কমেছে, এই অভিযোগে বারবার সরব হচ্ছেন বিরোধীরা। তবে নতুন ভোটারদের সেই নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। অন্তত বেশ কয়েকজনের তো বটেই। দাবি, চাকরি রয়েছে স্রেফ যোগ্যতার অভাব। আগামীদিনে পড়াশোনা করে যোগ্যতা অর্জন করেই চাকরি পেতে চাইছেন তাঁরা। শুধু পড়াশোনা নয়, বিভিন্ন স্কিল বাড়িয়েও মিলতে পারে চাকরি। এমনটাই মনে করছেন নতুন ভোটাররা। সুতরাং এই চাকরি ইস্যুও যে তাঁদের আলাদাভাবে প্রভাবিত করবে না এমনটা বলাই যায়। তবে চাকরি করতে অনেক দূর যেতে হচ্ছে, এই সমস্যার কথাও বলেছেন কেউ কেউ। এমনকি কারও গ্রামে ১৬ থেকে ৩৫ বছরের কেউ বাড়ি থাকেন না এও উল্লেখ করেছেন। সকলেই কাজের সুবাদে ভিনরাজ্যে। আরও একটা দিন এক্ষেত্রে উল্লেখ করেছেন ভোটাররা। তা অবশ্যই ডিজিটাল উন্নতি। এই মুহূর্তে দেশ যেভাবে ডিজিটাল হয়ে উঠেছে, তাতে নতুন প্রজন্ম বিভিন্ন উপায়ে টাকা রোজগারের পথ খুঁজে পাচ্ছে। কোথাও গিয়ে এর জন্য প্রচ্ছন্নভাবে হলেও মোদি সরকারেই ধন্যবাদ দিচ্ছেন তাঁরা। তবু ভোট মানেই অনিশ্চয়তা। সেখানে নতুন ভোটাররা আদৌ নিজেদের সমস্যার সঙ্গে দেশের সমস্যা এক করে ফেলবেন কি না সে কথা বলা মুশকিল। আবার নিজেরা ভালো রয়েছেন সেদিকে তাকিয়ে গোটা দেশ ভালো রয়েছে সেটাও তাঁরা ভাববেন কি না বলা যায় না। এই দুই ভাবনার উপরই সবটা দাঁড়িয়ে। আগামী দিনে দেশের শাসনভার একই দলের হাতে থাকবে কি না তা ঠিক করবে এই ভাবনাই। এবার সেটা নতুন ভোটারই হোক আর পুরনো, হিসাবটা মোটামুটি এক।