এলাকার উঠতি মস্তানকে একদিন ফিরিয়ে দিয়েছিলেন প্রেমিকা। কিন্তু ডনকে ফেরানো তো কেবল মুশকিলই নয়, না-মুমকিন। তাই শোনা যায়, দাউদের সঙ্গে পালিয়ে যেতেও দ্বিধা করেননি এক বলি নায়িকা। ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ ডনের প্রেমজীবনেও কম রোমাঞ্চ নেই! শুনে নেওয়া যাক সে গল্প।
পুলিশ কনস্টেবলের স্কুলছুট ছেলে থেকে আন্ডারওয়র্ল্ডের ডন। দাউদ ইব্রাহিমের জীবন হার মানাবে যে কোনও থ্রিলারকেও। তবে সেই থ্রিলারে কেবল রোমাঞ্চই নেই, তাতে মাখামাখি হয়ে আছে রোমান্সও। সে গল্পে প্রেম ভাঙা আছে, প্রেমে ঘা খাওয়া আছে, আবার তুমুল প্রেমে পালিয়ে যাওয়ার গল্পও সগৌরবে হাজির।
আরও শুনুন: পুলিশের ঘুম ছুটিয়েছিল কলকাতার প্রথম মহিলা সিরিয়াল কিলার
হ্যাঁ, প্রেমে প্রত্যাখ্যানের গল্প কেবল আমার আপনার জীবনেই থাকে না, ডনের জীবনেও থাকে। দাউদের গল্প অন্তত সে কথাই বলে। যদিও তখন ডন হয়ে ওঠেননি দাউদ ইব্রাহিম কাসকর। স্কুল পালিয়ে দাদার হাত ধরে অন্ধকার জগতের পথ চেনা শুরু হয়েছে। এলাকায় উঠতি মস্তানদের মধ্যে জায়গা করে ফেলেছেন। সেই সময়েই মুম্বইয়ের মুসাফিরখানা এলাকায় নাম কা ওয়াস্তে একটা দোকান ছিল তাঁর। আর সেখানেই দেখা সুজাতা কওরের সঙ্গে। কাছাকাছিই বাড়ি সুজাতাদের। ফলে বাজার দোকান করতে বাইরে বেরোলেই সুন্দরী পাঞ্জাবি তরুণীটিকে দেখতে পান দাউদ। যাতে অন্যজনের চোখেও পড়েন, তাই সিনেমার নায়কদের মতো পোশাকআশাকে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করেন। কার্যত ফলো করেন সুজাতাকে। সবুরে মেওয়া ফলল একসময়। দেখা গেল, বাড়ির লোকদের ফাঁকি দিয়ে দাউদের বাইকে চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সুজাতা। কিন্তু লোকের চোখকে ফাঁকি আর কতদিন দেওয়া যায়! দাউদ একে ধর্মে মুসলিম, তায় তোলাবাজ মস্তান হিসেবেই তখনই তাঁর কুখ্যাতি ছড়াতে শুরু করেছে… ফলে প্রেমের কথা জানাজানি হতেই সুজাতার বাড়ি থেকে প্রবল আপত্তি উঠল। মেয়ের বাড়ি থেকে বেরোনো বন্ধ করলেন মা-বাবা। এদিকে শুধু প্রেম নয়, প্রেমিকাকে না পাওয়া হবু ডনের অহংকেও আঘাত করছিল। ক্ষুব্ধ প্রেমিক সরাসরি হানা দিলেন প্রেমিকার বাড়িতে। রুদ্রমূর্তিতে চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন, সুজাতা তাঁকে বিয়ে করতে রাজি কি না। বাড়ির চাপে সেই প্রস্তাবে না বলতে বাধ্য হন সদ্যতরুণী।
দাউদের ঘনিষ্ঠ মহলে কান পাতলে শোনা যেত, প্রথম প্রেমের ধাক্কাই দাউদকে ভিতর থেকে বদলে দিয়েছিল অনেকটা। সুজাতার জন্য যে দাউদ ক্রমশ রোমান্টিক হয়ে উঠছিলেন, তিনি নাকি আরও বেশি করে নিষ্ঠুর হয়ে ওঠেন এই ব্যর্থ প্রেমের জ্বালায়।
আরও শুনুন: নেশা বিকৃত যৌনতার, খুন করে অন্তর্বাস জমিয়ে রাখার শখ সিরিয়াল কিলারের
তবে ডন হিসেবে যখন দেশ কাঁপাচ্ছেন দাউদ, সেই সময়েও ফের দেশজুড়ে সাড়া ফেলেছিল তাঁর প্রেমের ঘটনা। একটিমাত্র ছবি থেকে যে জল্পনার সূত্রপাত। ১৯৯৪ সালে সব মিডিয়ায় প্রকাশ পায় সেই ছবি, যেখানে দেখা যায় দাউদের পাশে বসে আছেন সেসময়ের বলিউডের হার্টথ্রব মন্দাকিনী। ‘রাম তেরি গঙ্গা মইলি’ ছবিতে তাঁর সাদা স্বচ্ছ শাড়ি পরে ঝরনার জলে নাচ পুরুষদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। অভিনয়ের চেয়েও অনেক বেশি করে আলোচনায় ছিল নায়িকার দেহসৌন্দর্যের কথা। এহেন মন্দাকিনী ‘৯৩-এর মুম্বই হামলার মূল চক্রী দাউদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখছেন, এ খবর দাবানলের মতোই ছড়িয়ে পড়েছিল। আর তাতে ঘি ঢালে মুম্বই পুলিশের সূত্রে পাওয়া আরও একটি খবর। জানা গিয়েছিল, ব্যাঙ্গালোরের উপকণ্ঠে একটি বিশাল বাগানবাড়ি তৈরি করাচ্ছেন দাউদ, যার মালিকানা মন্দাকিনীর নামে। দাউদের সঙ্গে মন্দাকিনী দুবাইয়ে চলে গিয়েছেন, দুজনে মিলে সেখানে থাকছেন বলেও শোনা গিয়েছিল। এর মধ্যেই ১৯৯৫ সালে মন্দাকিনীর অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ার খবরও সামনে আসে। মন্দাকিনী যতই বিষয়টি নাকচ করুন না কেন, সব মিলিয়ে ডনের সঙ্গে সুন্দরীর প্রেম একরকম মান্যতা পেয়েই যায়। যদিও এই জল্পনার জালেই গুটিয়ে যায় মন্দাকিনীর কেরিয়ার। পরে দুজনের কোনও যৌথ ছবি আর প্রকাশ্যে আসেনি, এমনকি পরবর্তী কালে বিয়েও সেরেছেন মন্দাকিনী। তবে রয়ে গিয়েছে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সম্রাটের সঙ্গে বলিউডের সুন্দরীর প্রেমের গল্প।