দীর্ঘ ১০০ বছর ছিল না মন্দিরে ঢোকার অধিকার। এতদিন আলাদা জায়গায় প্রার্থনা সারতেন এই গ্রামের দলিতরা। তবে সাম্প্রতিক এক ঘটনা ভেঙে দিয়েছে সেই নিয়মের বেড়াজাল। কড়া পুলিশি পাহাড়ায় প্রথমবার গ্রামের মন্দিরে পা রেখেছেন শয়ে শয়ে দলিত। কোন ঘটনার জোরে এল এই পরিবর্তন? আসুন শুনে নিই।
ভারতীয় সংবিধানে স্পষ্ট উল্লেখ করেছে ‘সমতা’-র কথা। যা ইঙ্গিত করে, এই দেশের সমস্ত নাগরিক সমান। সেক্ষেত্রে জাতিগত বৈষম্য কখনই সমর্থন যোগ্য নয়। কিন্তু স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংবিধানের এই শর্তটি মানা হয় না বললেই চলে। যার অন্যতম উদাহরণ তামিলনাড়ুর এই মন্দির। বিগত ১০০ বছর ধরে সেখানে পা রাখার অধিকার ছিল না কোনও দলিতের।
আরও শুনুন: মুসলিম মহিলাদের রাখিতে জড়াতে চান প্রধানমন্ত্রী, সম্প্রীতির রাখিবন্ধন এবার ভোটের অস্ত্র?
কথা বলছি তামিলনাড়ুর তিরুভান্নামালাই জেলার চেলানকুপাম গ্রামের এক মন্দির সম্পর্কে। সেখানকার মারিয়াম্মা মন্দির স্থানীয়দের কাছে যথেষ্ট প্রসিদ্ধ। দক্ষিণের অন্যান্য রাজ্য থেকেও এখানে পুজো দিতে আসেন অনেকেই। তবে স্রেফ উচ্চবর্ণের মানুষরাই এতদিন এই মন্দিরে প্রবেশাধিকার পেতেন। প্রায় ১০০ বছর মন্দিরে পা রাখার অধিকার ছিল না কোনও দলিতের। কিন্তু এভাবে আর কতদিন চলতে পারে! এই গ্রামের দলিত সম্প্রদায়ভুক্ত যুবকদের অনেকেই এখন উচ্চশিক্ষিত। চাকরির জন্য গ্রামের বাইরেও পা রখেছেন তাঁদের অনেকেই। কিছুদিন আগে, এমনই এক দলিত যুবক মন্দিরে ঢোকার অধিকার নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছিলেন। সেখানে উচ্চ বর্ণের এক যুবকের সঙ্গে এই ইস্যুতে বচসায় জড়ান তিনি। সেই মুহূর্তে দুজনেই গ্রামের বাইরে ছিলেন। কিন্তু গ্রামে ফিরেই দুজনে মুখোমুখি বচসায় জড়ান। উত্তেজনার পারদ আরও বাড়ে। ঘটনায় বেশ কয়েকদিন অশান্তির পরিবেশ ছিল তামিলনাড়ুর ওই গ্রামে। এরপরই গ্রামের দলিত সম্প্রদায়ের মানুষজন প্রশাসনের কাছে মন্দিরে ঢোকার আর্জি জানিয়ে চিঠি পাঠান। তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন সকলে মিলে মন্দিরে ঢুকবেন। সেইমতোই দীর্ঘ ১০০ বছরের নিয়ম ভেঙে এদিন মন্দিরে ঢোকেন তাঁরা। পুলিশের তরফে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়েছিল ঘটনায় গ্রামের উচ্চবর্ণের মানুষজন আপত্তি জানাবেন। অশান্তির আশঙ্কা থেকে আগেভাগেই বিশাল পুলিশি পাহারায় ব্যবস্থা করা হয় মন্দিরের বাইরে। কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি। নির্বিঘ্নে এদিন মারিয়াম্মা মন্দিরে পুজো দেন তামিলনাড়ুর ওই গ্রামের দলিতরা।
আরও শুনুন: স্মৃতির অতলে ৭৫০০ শহিদ, তাঁদের গ্রাম থেকে আনা মাটিতেই সাজবে ‘কর্তব্য পথ’
মন্দিরটি মূলত পোঙ্গল উৎসবের জন্য প্রসিদ্ধ। প্রতিবছর বার্ষিক উৎসবে এখানে ভিড় হত চোখে পড়ার মতো। কিন্তু সেখানে অংশ নেওয়ার অধিকার পেতেন না দলিতরা। স্থানীয় বিশ্বাস, এই মন্দিরে পুজো দিলে নব বিবাহিতদের জীবন সুখ সমৃদ্ধিতে ভরে ওঠে। কিন্তু সেইসবকিছু থেকেই এতদিন বঞ্চিত হতেন এই গ্রামের দলিতরা। তাঁরা নিজেদের মতো অন্য জায়গায় প্রার্থনা সারতেন। কিন্তু আর কোনও বাধা থাকল না। এবার থেকে গ্রামের সকলেই এই উৎসবে অংশ নেবেন। এই ঘটনায় যারপরনায় খুশি গ্রামের দলিত সম্প্রদায়ের সকলেই। অনেকেই ভেবেছিলেন জীবদ্দশায় আর মন্দিরে পা রাখার সুযোগ পাবেন না। তাঁদের প্রত্যেকেই মন্দিরের ঢোকার অনুমতি পেয়ে আবেগে ভেসেছেন। ।