আমাদের কান এবং শ্রবণ ক্ষমতার প্রতি যত্নশীল ও সচেতন করার জন্য প্রতি বছর ৩রা মার্চকে World Hearing Day বা বিশ্ব শ্রবণ দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এবছরের থিম – “Ear and hearing care for all!” অর্থাৎ ‘সকলের কান এবং শ্রবণ ক্ষমতার যত্ন’। এই নিয়ে আলোচনায় চৈতালী বক্সী।
একটু যদি পুরনো দিনে ফিরে যাই, কেমন লাগবে? কলকাতায় তখন হামেশাই লোডশেডিং হত। আর তারপর? পাড়া জুড়ে কারও আফসোস তো কারও আনন্দের একটা মিলিত কলরোল উঠত। মুহূর্ত কয়েকের। তারপর টিভি-রেডিও কোনও কিছুর কোনও আওয়াজ নেই। পড়াশুনোরও পাট চুকিয়ে গা ছমছমে ভূতের গল্প শোনার সেই লোডশেডিংয়ের সন্ধে-রাতগুলোর কথা মনে পড়ে? শুনতে শুনতে আপনার কল্পনায় গজিয়ে ওঠা ভূত দেখে চোখ বড় বড় হয়ে যাচ্ছে। ভয়ে গায়ে কাঁটা দিয়ে যাচ্ছে। কিংবা ধরুন কিশোর কুমারের সেই গানটি, ‘তারে আমি চোখে দেখিনি, তার অনেক গল্প শুনেছি/ গল্প শুনে তারে আমি অল্প অল্প ভালবেসেছি।‘ শুনতে শুনতে এমন ভালবাসাও কি আমাদের কম হয়েছে?
আরও শুনুন: Audio Blog: ঘড়িতেই প্রেশার-সুগার মাপছেন! প্রযুক্তিতে ভরসা করে হিতে বিপরীত হচ্ছে না তো?
ছোট থেকে বুড়ো, আমরা ‘শুনতে’ বড় ভালবাসি। অডিওবুক হোক, অরিজিৎ সিংয়ের গান হোক, পিএনপিসি হোক, খবর হোক, বা ‘কেমন আছিস’-এর উত্তর। কেউ কেউ বা শোনার অপেক্ষাতে থাকতেও ভালবাসি। তাই ব্যবহার হোক না হোক কানে পরে থাকি ইয়ারবাডস।
দিন দিন এই কানে যন্ত্র পরে থাকার অভ্যাস আমাদের বাড়ছে, খেয়াল করেছেন হয়তো। সেদিন আর খুব বেশি দূরে নেই যখন ইয়ারবাডসের সঙ্গেই অ্যাটাচড হিয়ারিং এইডও পাওয়া যাবে বাজারে। এবং সেটা আমাদের দরকারও হবে। আমরা হিসেবই করি না, দিনের মধ্যে কতক্ষণ বা কত ঘণ্টা হেডফোন বা ইয়ারফোনের ব্যবহার করছি আমরা! এটা যে বদভ্যাস সেটাও আমাদের কাছে অজানা নয়। অতিরিক্ত ব্যাবহারে শ্রবণ ক্ষমতা যে কমে বধির পর্যন্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সে সতর্কতা ডাক্তার আর গবেষকরা বহু আগেই দিয়েছেন। অবশ্য এমন অনেকেই আছেন যাদের রুজি রোজগারের তাগিদেই বেশ কয়েকঘন্টা কানে হেডফোন দিয়ে কাজ করতে হয়। কল সেন্টার বা ভিডিও, অডিও এডিটিংয়ের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত। কিন্তু উল্টোদিকে যাঁরা আছি, যাঁরা শুনছি? তাঁরাও তো একদিনে সমস্তটা শুনে শেষ করার মাইলস্টোন ছোঁয়ার চেষ্টায় আছি। কেউ ভিড়ের মাঝে নয়েজ ক্যান্সেলেশন-যুক্ত হেডফোন পরে ভিড়ের মধ্যেও আলাদা হয়ে থাকতে চাই।
আরও শুনুন: একবার শুনলে সারাদিন মাথায় ঘোরে একই গানের কলি! কেন হয়? মুক্তিই বা কীসে?
কিন্তু নিজের খেয়াল রাখি ক’জন? আমাদের কান এবং শ্রবণ ক্ষমতার প্রতি যত্নশীল ও সচেতন করার জন্য প্রতি বছর ৩রা মার্চকে World Hearing Day বা বিশ্ব শ্রবণ দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এবছরের থিম – “Ear and hearing care for all!” অর্থাৎ ‘সকলের কান এবং শ্রবণ ক্ষমতার যত্ন’।
শ্রবণক্ষমতা কমে যাওয়া বা বধির হয়ে যাওয়ার ঘটনাগুলো কমাতে আমাদের সামগ্রিকভাবে আমাদের শরীরের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে হার্ট ও হাই ব্লাড প্রেসার ঠিক রাখা, তামাক ও মাদক সেবন বন্ধ করা সবার আগে প্রয়োজন। শরীরচর্চাও করে যেতে হবে নিয়মিত।
বয়ে চলা জীবনে অনেক ভাল লাগার বদভ্যাস আমাদের করতে হয়। সময়ের সঙ্গে তাল রেখে করে নেই আমরা। কিন্তু বয়স একটু একটু করে বাড়ার সাথে সাথে কিছু ভাল অভ্যাসও তো করে ফেলা জরুরি। আসুন এবছর বিশ্ব শ্রবণ দিবসে না হয় একটা একটু কষ্ট করে একটা ভাল অভ্যাস করি। নাহলে যে এই ভাললাগাগুলো হঠাৎ একদিন নেই হয়ে যাবে জীবন থেকে।