মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করার জেরে যেন তাঁর বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারার দক্ষতার কোনও ক্ষতি না হয়। এমনটাই শর্ত ছিল রোগীর। আর সে কারণেই অস্ত্রোপচারের গোটা সময়টা জুড়ে একটানা স্যাক্সোফোন বাজিয়ে গেলেন তিনি। যা দেশে বিস্মিত চিকিৎসকেরাও। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
মিউজিক থেরাপি, অর্থাৎ সুরের সূত্র ধরে মানুষের অসুখ সারিয়ে তোলার চেষ্টা নিয়ে দেশেবিদেশে গবেষণা করে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু এক্ষেত্রে সুর শুনিয়ে রোগীকে সুস্থ করা হয়নি, বরং রোগী নিজেই আশ্রয় নিয়েছেন সুরের কাছে। মস্তিষ্কে জটিল অপারেশন চলার সময় টানা ৯ ঘণ্টা ধরে সজাগ থেকে স্যাক্সোফোনে সুর তুলেছেন তিনি। আর এই ঘটনা উলটে চিকিৎসকদেরই অস্ত্রোপচার করতে সাহায্য করেছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
আরও শুনুন: স্ত্রীর পায়ে ব্যথা, প্রেসক্রিপশনে স্বামীকে পানশালায় যাওয়ার পরামর্শ দিলেন চিকিৎসক
জানা গিয়েছে, মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার চলাকালীন রোগীকে অজ্ঞান না করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় অ্যাওয়েক সার্জারি। যেখানে অস্ত্রোপচারের সময়ও রোগীর মস্তিষ্ক সচল থাকে, যাতে ওই সময়েই রোগীর সঙ্গে কথোপকথনের মাধ্যমে চিকিৎসকরা বুঝে নেন, অস্ত্রোপচারের জেরে তাঁর মস্তিষ্কের কোনও অংশের ক্ষতি হল কি না। এক্ষেত্রেও তেমনটাই করার প্রয়োজন ছিল বলে জানিয়েছে রোমের একটি হাসপাতাল। ইতালির বাসিন্দা ওই রোগীর বয়স ৩৫। ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। অ্যাওয়েক সার্জারির প্রক্রিয়া মেনেই তাঁর অস্ত্রোপচার শুরু করা হয়েছিল। এই দীর্ঘ অপারেশন চলাকালীন রোগী যাতে ঘুমিয়ে না পড়েন, সে বিষয়েও তাঁকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল। তাই ওই রোগী আগেই হাসপাতালের কাছে অনুমতি চেয়ে নিয়েছিলেন, যাতে অস্ত্রোপচারের সময় তিনি স্যাক্সোফোন বাজাতে পারেন। এর ফলে একদিকে যেমন তিনি সজাগ থাকতেও পারবেন, তেমনই আরেকদিকে তাঁর আরজি ছিল, অস্ত্রোপচারের জন্য তাঁর বাজনার দক্ষতার ক্ষতি হোক তিনি চান না। তাই অস্ত্রোপচারের সময় তাঁকে স্যাক্সোফোন বাজানোর সুযোগ দেওয়া হোক, যাতে তাঁর বাজন দক্ষতা তৈরি করে এমন কোশগুলি কোনোভাবেই নষ্ট না হয়।
আরও শুনুন: কন্ডোম, লিপস্টিক বা চকোলেট, সবই নাকি আমিষ! জানেন কি?
আর সেই কথামতোই, অস্ত্রোপচারের সময় সাতের দশকের আমেরিকান ছবি ‘লাভ স্টোরি’র আবহসংগীত বাজিয়ে গিয়েছেন ওই রোগী। তাও টানা ৯ ঘণ্টা ধরে। তাঁর অস্ত্রোপচারের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক দলের প্রধান ডঃ ক্রিশ্চিয়ান ব্রোগোনা জানিয়েছেন, রোগীর মস্তিষ্ক সচল থাকায় তার বিভিন্ন অংশের ভূমিকা বুঝে অস্ত্রোপচার করতে সুবিধেই হয়েছে তাঁদের। রোগী নিজেই যেন এক অন্যরকম মিউজিক থেরাপির আয়োজন করেছিলেন এই ঘটনায়, এমনটা বলাই যায়।