‘গরম লাগে তো তিব্বত গেলেই পারো’, বলেছিল সুকুমার রায়ের ‘হযবরল’-র সেই বেড়ালটা। কিন্তু পরিবেশের তাপমাত্রা নয়, যদি থার্মোমিটারে দেখা যায় শরীরের তাপমাত্রাই বেড়ে গিয়েছে, অর্থাৎ কিনা জ্বর এসেছে, কী করবেন তখন? ওষুধপত্র ছাড়াও জ্বর সারানোর জন্য যে কতরকম আশ্চর্য নিদান হাঁকে এক-একটি দেশ, শুনবেন নাকি সেসব কথা?
আমাদের সবচেয়ে পরিচিত অসুখগুলোর মধ্যে জ্বরের নাম নিশ্চয়ই থাকবে একেবারে প্রথমদিকেই। এত পরিচিত অসুখ যে তার প্রাথমিক ওষুধবিষুধের নামও খুব চেনা। কিন্তু এই ওষুধগুলির নাম আপনি নির্ঘাত শোনেননি। অথচ তাতেই নাকি মেলে জ্বর থেকে রেহাই, এমনই দাবি করে পৃথিবীর এক-একটি দেশ।
আরও শুনুন: অদ্ভুত শখ! বিমানের দরজা খুলে ডানায় হেঁটে বেড়ালেন ব্যক্তি! হলেন গ্রেপ্তার
ব্যাপারটা তবে খুলেই বলা যাক।
জ্বর হলে ঘরোয়া টোটকার উপরে কমবেশি ভরসা অনেকেই করে থাকেন। এ দেশে যেমন বাড়িতে বানানো কড়া-র উপর অনেকেরই অগাধ আস্থা। ঠিক তেমনই, জ্বর সারানোর জন্য নানা ধরনের ঘরোয়া পদ্ধতির প্রচলন রয়েছে পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও। আর তার কোনও কোনওটি রীতিমতো চমকে দেবে আপনাকে।
কী সেইসব টোটকা? আসুন, তবে শুনেই নেওয়া যাক।
এইসব টোটকার মধ্যে সবার আগে থাকে কোনও না কোনও কিছু খাওয়া। তবে জাপান ভিন্ন পথের পথিক। কোনও কিছু খাওয়া নয়, জ্বর এবং সর্দির সমস্যা কমাতে জাপানের মানুষ পেঁয়াজের গন্ধ শোঁকেন। চোখ এবং নাক দিয়ে জল বেরিয়ে গেলে জ্বর কমতে পারে বলে মনে করেন তাঁরা।
প্রাচ্যের আরেক দেশ চিনেও জ্বর সারানোর জন্য কোনও খাদ্য ব্যবহার করা হয় না। ব্যবহৃত হয় একটি আশ্চর্য পানীয়। এর মধ্যে কী থাকে জানেন? অন্যান্য উপাদানের সঙ্গে থাকে হরিণের শিংয়ের আঁশ, আর তা-ই জ্বর সারাবার ম্যাজিক জানে বলে বিশ্বাস করেন চিনের অনেক মানুষ।
চিনের কথা যখন উঠলই, তবে চিনের বিশেষ অধিকারে থাকা হংকং-এর কথাও বলে নেওয়া যাক। এখানে জ্বর হলে যে টোটকার প্রয়োগ করা হয়, তা আর কোথাও হয় কি না সন্দেহ। চিনদেশে বিভিন্ন প্রাণীকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করার রেওয়াজ আছে সে কথা তো সকলেই জানে। জ্বর সারানোর উপায় হিসেবেও তেমনই এক প্রাণীকে বেছে নিয়েছে হংকং। জ্বর হলে শুকনো গিরগিটি দিয়ে ঝোল বানিয়ে খাওয়ার চল রয়েছে এখানকার বহু মানুষের মধ্যে।
প্রাচ্যের পুরনো সভ্যতা ইরানেও জ্বর সারানোর টোটকার হদিশ মেলে। আমাদের চেনা সবজি শালগমকেই সে দেশে ওষুধের মতো ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আরও শুনুন: শহিদ হয়েছিলেন স্বামী, শিক্ষকতা ছেড়ে তবু ভারতীয় সেনাতেই যোগ দিলেন স্ত্রী
ভাবছেন কেবল প্রাচ্যেই এমন সব টোটকার ছড়াছড়ি? আজ্ঞে না। পিছিয়ে নেই পাশ্চাত্যও। স্পেনে জ্বরের ওষুধ হল মধু আর রসুন মেশানো চা। জার্মানিতে একসময়ে নাকি জ্বর সারানোর জন্য শামুকের সিরাপ বানিয়ে খেতেন মানুষ। আর রাশিয়াতে এর টোটকা হল গোগোল মোগোল। আসলে এটি আশ্চর্য কিছুই নয়, এগনগ-এর বাহারি নাম মাত্র। অবশ্য এইসব টোটকায় কতটুকু কাজ হয়, ওষুধ খাওয়া মানুষেরা ছাড়া তা বলা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়।