শৌখিন ফাস্ট ফুডের তালিকায় একেবারে প্রথম সারিতেই থাকবে পিৎজার নাম। নামী দোকানের পিৎজার দামও চোখধাঁধানো। কিন্তু জানেন কি, এই খাবারটি আদতে ছিল একেবারে গরিব মানুষের রোজকার খাদ্য? কীভাবে ভোলবদল ঘটে গেল তার? আসুন, শুনে নেওয়া যাক সে গল্প।
বিশেষ ধরনের রুটির উপরে জিভে জল আনা টপিং। তার উপর সস আর চিজের লোভনীয় হাতছানি। এমনতর পিৎজার প্রতি টান কার নেই বলুন তো? কিন্তু এককালে ছবিটা ছিল ঠিক এর উলটো। জিভে জল আনা দূরে থাক, পিৎজাকে আদৌ পাতে দেওয়ার যোগ্য বলেই মনে করতেন না অনেকে। কেন? আসছি সে কথাতেই।
আরও শুনুন: বাঙালির প্রিয় মিষ্টি ল্যাংচা, কিন্তু কেন তার এমন নাম?
কেবল শুকনো রুটি খেয়ে মন উঠত না বলে রোমানরা সেই রুটির উপরেই পনির, মধু ইত্যাদি নানারকম জিনিস লাগিয়ে খেত। আলাদা করে পাত্রের দরকার হয় না, আবার হাতেও লাগে না, এইজন্য সেনাবাহিনীতে এইরকম খাবারের বেশ চল ছিল সেকালে। আর এইরকম রুটিকেই পিৎজার পূর্বপুরুষ বলে মনে করেন অনেকে। বস্তুত, পারস্য সম্রাট প্রথম দরায়ুসের সৈন্যরা নাকি আগুনের উপরে লোহার ঢাল রেখে তাতে মোটা রুটি সেঁকে নিতেন, আর তার উপরে সাজাতেন নানারকম মশলা, চিজ ইত্যাদি। বলাই বাহুল্য, পিৎজার ধাঁচ থাকলেও সে খাবার মোটেও এখনকার পিৎজার মতো শৌখিন গোত্রের ছিল না। ‘পিৎজা’ শব্দটি প্রথম শোনা যায় ইতালিতে, যেখানে এই খাবারটির উৎপত্তি। ইতালির নেপলস শহরের গরিব বাসিন্দারা এমন কোনও খাবার খুঁজছিল, যা দামে কম কিন্তু মানে ভালো। অর্থাৎ সস্তায় পুষ্টিকর। রুটির উপর সস, সবজি দিয়ে তৈরি খাবারটি কাজের ফাঁকে চট করে খেয়ে নেওয়া যেত বলে সাধারণ মানুষের কাছে তা প্রবল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু এমন দায়সারা খাওয়ার দিকে তাকিয়ে অভিজাত মানুষেরা বরাবরই নাক সিঁটকাতেন।
আরও শুনুন: বাঙালির বিরিয়ানিতে আলুর ঠাঁই হল কীভাবে?
পিৎজার এই হাল বদলে গেল উনিশ শতকের একেবারে শেষে পৌঁছে, যখন এক রানির নেকনজর পড়ল তার দিকে। সেটা ১৮৮৯ সাল। নেপলসে পা পড়েছিল ইতালির রাজা রানির। তাঁদের আপ্যায়ন করার জন্য সবাই উঠেপড়ে লেগেছিল। রোজ রাজভোগ খেতে খেতে রানির পেটে চড়া পড়ে যাওয়ার জোগাড়। এই সময়েই রানির মুখ বদলাতে এগিয়ে এলেন রাফায়েল এস্পোসিতো নামে এক শেফ। ১৭৬০ সালে খোলা পিৎজার দোকান ‘দ্য পিয়েট্রো পিৎজারিয়া’-র মূল পাচক তখন তিনিই। রানির জন্য বিশেষভাবে পিৎজা বানালেন তিনি, আর তার টপিং হল সাদা পনির, লাল টমেটো সস আর সবুজ পুদিনা পাতা দিয়ে। আসলে রাজা রানিকে সম্মান জানানোর জন্য ইতালির জাতীয় পতাকার সাদা লাল সবুজ রংগুলিই ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন তিনি। সেই গরিবের খাবার খেয়েই দেখা গেল রানি মহা খুশি। রানি মার্গারিটা মারিয়া থেরেসা জিওভানা-র নামে এই পিৎজাটির নাম হয়ে গেল মার্গারিটা পিৎজা। আর তারপর থেকেই অভিজাতদের খাবারের তালিকায় পাকাপাকি আসন পেয়ে গেল পিৎজা।