চিনে খাবার খেতে কে না ভালবাসে! কিন্তু যে মানুষেরা কলকাতা শহরে কাটিয়ে দিলেন প্রায় ২৫০ বছর, তাঁদের সম্পর্কে কি তেমন কিছু জানি আমরা? জানি কি যে, এই মরশুমেই উৎসবে মেতে ওঠে কলকাতার চিনেপাড়াও? সে উৎসব স্বাগত জানায় নতুন বছরকে। আসুন, শুনে নেওয়া যাক চিনা নববর্ষের কথা।
জীবিকার তাগিদে যুগে যুগে এক দেশ থেকে আরেক দেশে পাড়ি জমিয়েছে মানুষ। সেই সূত্র ধরেই ব্রিটিশদের দখল করা বাংলায় একদিন পা রেখেছিলেন চিন দেশ থেকে আসা কিছু মানুষ। নানা ঘাটের জল খেয়ে অবশেষে তাঁরা থিতু হলেন যেখানে, সেই জায়গাটাকেই আজ আমরা চিনেপাড়া বলে চিনি। অবশ্য আজকের ঝাঁ চকচকে চিনেপাড়ার বাইরেও একটা চিনেপাড়া ছিল, বা বলা ভাল, এখনও আছে। পুরনো চিনেপাড়া সেটা। সেই নিঝঝুম পাড়ায় এখনও ছোট ছোট দু-একটি রেস্তোরাঁয় আসল চিনা খাবার পরিবেশন করে চলেন এ পাড়ায় থেকে যাওয়া অল্প কয়েকজন চিনা মানুষ। আর সকালবেলায় এই পাড়াতেই ভিড় জমে চাইনিজ ব্রেকফাস্ট খাওয়ার জন্য। কিন্তু নতুন বছরের আনন্দে একইরকম ভাবে উল্লাসে মাতে নতুন আর পুরনো চিনেপাড়া। আর সেই আনন্দের শরিক হতে পারেন আপনিও।
আরও শুনুন: ১ জানুয়ারি না ১ এপ্রিল, ইংরেজি মতে নতুন বছরের শুরু কোন দিনে?
ঠিক কবে আসে চিনা নববর্ষ? সৌরবর্ষ নয়, চিনা মানুষেরা যে ক্যালেন্ডার মেনে চলেন তা মূলত লুনার ক্যালেন্ডার। অর্থাৎ চাঁদের গতিবিধি মেনে সেখানে বছর ঘোরে। নববর্ষের আগের রাত থেকেই চলে উৎসবের প্রস্তুতি। এই উৎসবকে স্প্রিং ফেস্টিভ্যাল বলেও ডেকে থাকেন চিন দেশের মানুষ। যার একটা বড় অংশ হল ল্যান্টার্ন ফেস্টিভ্যাল। অজস্র চিনা লন্ঠনে সেদিন সেজে ওঠে চিনেপাড়া। আর থাকে নানারকম হাতের কাজ, গানবাজনা, আর অবশ্যই ঘরে তৈরি চিনা খাবার এবং বাঁশপাতায় জড়ানো চং। নাচগানের মধ্যে থাকবেই ড্রাগন ডান্স আর লায়ন ডান্স। রংচঙে ড্রাগন আর সিংহ বানিয়ে রীতিমতো শোভাযাত্রায় বেরিয়ে পড়েন মানুষ। মার্শাল আর্টের নানা কসরতও দেখানো হয়। টেরিটিবাজার সংলগ্ন ছাতাওয়ালা গলিতে বেশ কিছু চিনা ক্লাবে মাহজং খেলার আসর বসে বলেও শোনা যায়।
আরও শুনুন: কুশপুতুল দাহ থেকে হরেক রঙের অন্তর্বাস পরা, অদ্ভুত রীতিতে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয় বিশ্বে
এ তো গেল বিনোদনের কথা। কিন্তু নতুন বছর, আর দেবতার উপাসনা হবে না তাও কি হয়? চিনা মন্দিরে দেবদেবীদের সামনে এদিন নৈবেদ্য হিসেবে রাখা হয় চাউমিন। কেবল দেবতাদেরই রক্ষাকর্তা বলে মনে করেন না চিনা মানুষেরা। চিনা ক্যালেন্ডারে রাশি হিসেবে নির্দিষ্ট করা আছে ১২টি পশু, তাদের এক-একজনের জন্য এক-একটি বছরকে উৎসর্গ করার নিয়ম মেনে চলেন চিনারা। সেই মতে, আগামী বছরটিকে বাঘের বছর হিসেবে পালন করবেন তাঁরা। ইংরেজি মাসের হিসেবে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিনে শুরু হচ্ছে এবারের চিনা নববর্ষ। যেদিন কলকাতা শহরের বুকে ফের জেগে উঠবে এক টুকরো ভিনদেশ। আবার মনে করিয়ে দেবে, বিভেদ নয়, বেঁধে বেঁধে থাকাটাই আসলে ধর্ম।