শীতকাল মানেই বাহারি সবজির মেলা। তবে রোজ রোজ একই রকম তরিতরকারি খেতে কারই বা ভাল লাগে! তাই দরকার স্বাদ বদলের। জলখাবারে পরোটা তো নিশ্চয়ই খান। তেলে ভাজা পরোটা নিয়মিত খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ঠিক নয়। আবার ডাক্তারবাবুরা বলছেন বেশি করে সবজি খেতে। অবশ্য একটা উপায় আছে, যেখানে মিলবে স্বাদ আর স্বাস্থ্যের যুগলবন্দি। সেটা হল সবজি-পরোটা। কীভাবে আর কী দিয়ে বানাবেন? আসুন শুনে নিই।
সব মরশুমেরই রয়েছে আলাদা আলাদা ফল আর সবজির সম্ভার। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলাতে থাকে আমাদের খাবারের মেনুও। শীতকাল মানেই তো ফুলকপি থেকে কড়াইশুটি – একগুচ্ছ নতুন সবজি হাতে পাওয়া। এদিকে শীতকালে ঠান্ডার সঙ্গে টেক্কা দিতে এমন খাবারদাবার প্রয়োজন, যা শরীরকে গরম রাখতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে মাথায় রাখতে হবে স্বাদবদলের ব্যাপারটাও। রোজ রোজ থালা জুড়ে আটার শুকনো রুটি দেখতে কারই বা ভাল লাগে! মাঝেমধ্যে তাই মনে হয় লুচি বা পরোটা হলে মন্দ হয় না! তবে লুচি মানেই তো তেলের ভয়। পরোটা সামান্য আলাদা হলেও পুরোপুরি নিরাপদ নয়। আর আজকাল তেলে ভাজা পরোটার বদলে চল হয়েছে স্যাঁকা পরোটা খাওয়ার। তাতে তেল খাওয়াও কমে, আবার স্বাদও বজায় থাকে।
আরও শুনুন: Khichri: আপনি আমি তো কোন ছাড়! খিচুড়ির প্রেমে মজেছিলেন রাজা-বাদশারাও
তবে শুধু আটা বা ময়দার পরোটা না খেয়ে তাতে দিতে পারেন মরশুমি ছোঁয়া। শীতকালীন সবজিপত্তর দিয়েই বানিয়ে দেখুন না বাহারি পরোটা। তাতে সবজির গুণও রইল, আবার রসনার বাসনাও মিটল। কীভাবে বানাবেন এই সবজি-পরোটা?
কড়াইশুঁটির কচুরি তো শীতকালের জনপ্রিয় খাবার। তবে কচুরি মানেই তো ডিপ ফ্রায়েড। তার চেয়ে একই পুর দিয়ে বানিয়ে ফেলুন সুস্বাদু পরোটা। কড়াইশুঁটিতে রয়েছে প্রচুর কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেটস, ফাইবার ও প্রোটিন। রয়েছে অ্যান্টি অক্সেডেন্ট, পলিফেনলস। ভিটামিন কে, সি, বি-ওয়ান-সহ একগুচ্ছ জরুরি ভিটামিনস। রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ, কপার, ফসফরাসের মতো খনিজ পদার্থও। এমনকি কড়াইশুঁটির মধ্যে রয়েছে আমাদের পেটের পক্ষে উপকারী ভাল ব্যাকটিরিয়াও, যারা খারাপ ব্যাকটিরিয়াদের বেড়ে ওঠা আটকাতে সাহায্য করে।
খেতে পারেন মেথি পরোটা। শীতকালে বেশ জনপ্রিয় এই খাবার। মেথি শাকের মধ্যে রয়েছে প্রচুর আয়রন, জিঙ্ক, পটাশিয়াম ও প্রচুর ভিটামিন। যা আমাদের মেটাবলিজমকে বাড়িয়ে তোলে, পাশাপাশি ইমিউনিটি বাড়াতেও সাহায্য করে। কোথাও কোথাও দই বা আচারের সঙ্গে এই পরোটা খাওয়ার চল রয়েছে।
আরও শুনুন: ফুচকার জন্ম নাকি দ্রৌপদীর হাতেই! কোথা থেকে এল এই লোভনীয় খাবার?
শীতের আর-একটা জনপ্রিয় খাবার মুলোর পরোটা। মুলোতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার। মিউকাস তাড়াতে সাহায্য করে মুলো। গলা বা বুকে শ্লেষ্মা জমলে তা পরিষ্কার করতেও সাহায্য করে এই সবজিটি। কাঁচা লঙ্কা ও জোয়ান দিয়ে বানিয়ে ফেলুন মুলোর পরোটা। আর তার সঙ্গে বাড়িতে যদি টকঝাল পাঁচমেশালি আচার থাকে, তবে তো কথাই নেই।
শীতকালের অন্যতম প্রিয় সবজি ফুলকপি। এই ফুলকপির পরোটাও কিন্তু স্বাদে-গন্ধে বেশ ভাল। ফুলকপিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, কে এবং ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের মতো মিনারেলস। ফুলকপির কাটা টুকরোগুলোকে হালকা করে সিদ্ধ করে অল্প তেলে কাঁচা লঙ্কা, নুন, গোলমরিচ, স্প্রিং অনিয়ন ও ধনে পাতা সহযোগে বানিয়ে ফেলুন ফুলকপির সুস্বাদু পুর। তার পর সেই দিয়েই বানিয়ে ফেলুন পরোটা। খেয়েই দেখুন না কেমন লাগে। স্বাদের পাশাপাশি শরীরকে গরম রাখতেও সাহায্য করবে এই খাবার।
পালং শাকের পরোটা খেয়ে দেখেছেন! না থাকলে অবশ্যই চেখে দেখুন। পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও অন্যান্য মিনারেলস। রোজ রোজ পালং শাকের তরকারি খেয়ে বোর হয়ে গেলে অবশ্যই চাখতে পারেন এই পদ। এ ছাড়াও আরও রকমারি সুস্বাদু পদ তৈরি হয় এই পালং দিয়ে। নুন, কাঁচা লঙ্কা, একটু রসুন আর গোলমরিচের গুঁড়ো দিয়ে বানিয়ে নিন পরোটার জন্য পালং-পুর। দই বা চাটনি সহযোগে খেয়ে দেখুন।
এছাড়া অন্যান্য সবজি দিয়েও বানিয়ে দেখতে পারেন এই দারুণ জনপ্রিয় খাবারটি। আলুর পরোটা তো এমনিতেই খুব জনপ্রিয়। আর শীত মানেই সবজির মেলা। তাই গোটা শীত জুড়েই চলুক বাহারি পরোটার পার্বণ। তাতে, সবজি খাওয়াও হল, আর নিত্যনতুন স্বাদবদলে রসনাও খানিক তৃপ্তি পেল।