ইচ্ছা থাকলে কী না হয়। আর সেই ইচ্ছাশক্তির জোরেই রেকর্ড গড়েছেন দিল্লির এই কন্যা। সবচেয়ে কম সময়ে গোল্ডেন কোয়াড্রিল্যাটারাল বা সোনালি চতুর্ভূজ পেরিয়েছেন ভারতীয় এই দৌড়বিদ। কেমন ছিল সেই সফর? আসুন, শুনে নিই।
মাত্র পঁয়ত্রিশেই দু-দুটি বিশ্বরেকর্ডের অধিকারী তিনি। আর সে সবই এসেছে দৌড়ের হাত ধরে। সব থেকে কম সময়ে প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার পথ দৌড়ে শেষ করার জন্য দ্বিতীয়বার গিনেস বুকে নাম তুলেছেন দিল্লির মেয়ে সুফিয়া খান। সম্প্রতি গোল্ডেন কোয়াড্রিল্যাটারাল বা সোনালি চতুর্ভুজে দৌড় শেষ করেছেন ভারতীয় আলট্রা রানার সুফিয়া।
এই গোল্ডেন কোয়াড্রিল্যাটারাল বা সোনালি চতুর্ভূজ হল এমন একটা হাইওয়ে, যা একই সঙ্গে দিল্লি, কলকাতা, চেন্নাই ও মুম্বই এই চারটি মেট্রোসিটিকে ছুঁয়ে একটি চতুর্ভূজ তৈরি করেছে। ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর দিল্লি থেকে দৌড় শুরু করেছিলেন সুফিয়া। ২০২১ সালের ৬ এপ্রিলের মধ্যে তিনি এই ৬ হাজার ২ কিলোমিটার রাস্তার দৌড় সম্পূর্ণ করেন। সব মিলিয়ে মোট ১১০ দিন ২৩ ঘণ্টা এবং ২৪ মিনিট সময় লেগেছে তার দৌড় শেষ করতে। মহিলা দৌড়বিদ হিসেবে যা এখনও পর্যন্ত রেকর্ড কম সময়। বিশ্বশান্তির বার্তা দিতেই তাঁর এই দৌড় বলে জানিয়েছেন সুফিয়া।
আরও শুনুন: টাইমস স্কোয়ারের বিখ্যাত বোর্ডে ফুটে উঠল ছবি, বিরল সম্মান দুই ভারতীয় ছাত্রীর
দিল্লিতে বড় হলেও সুফিয়ার জন্ম রাজস্থানে। দৌড়বিদ হিসেবে কেরিয়ার শুরু করার আগে বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড স্টাফ হিসেবে কাজ করতেন তিনি। চাকরি ছেড়ে ২০১৭ সাল থেকে মন দেন আল্ট্রা রানিংয়ে। দিল্লি-আগ্রা-জয়পুর. এই তিনটি শহর ছুঁয়ে গোল্ডেন ট্রায়েঙ্গলে দৌড় শেষ করেছিলেন ১৬ দিন, ১ ঘণ্টা, ২৭ মিনিটে। সেটার জন্য ভারতে রেকর্ড গড়েছিলেন সুফিয়া। তার আগে ২০১৭ সালেই অবশ্য দিল্লিতে একটি হাফ ম্যারাথনে অংশ নেন সুফিয়া। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত রাস্তায় সব চেয়ে কম সময়ে দৌড় শেষ করার জন্য ২০১৯ সালেও গিনেজ রেকর্ডে প্রথমবার নাম তোলেন তিনি। সেটি শেষ করেছিলেন ৮৭ দিন ২ ঘণ্টা ১৭ মিনিটে। মানালি থেকে লেহ হাইওয়ে পর্যন্ত ৪৮০ কিলোমিটার রাস্তাতেও দৌড় শেষ করেছেন সুফিয়া। এ বার তার মুকুটে যোগ হল আরও এক শিরোপা।
আরও শুনুন: শুধুমাত্র শব্দ শুনেই জালে পৌঁছল বল, দৃষ্টিহীন কিশোরীর লক্ষ্যভেদে মুগ্ধ নেটদুনিয়া
না, একেবারেই সহজ ছিল না এই দৌড়। সেই অর্থে তাঁর সঙ্গে অন্য কোনও প্রতিযোগীরা দৌড়চ্ছিলেন না বটে। কিন্তু এক্ষেত্রে তাঁর সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল সময়। আর সেই সময়র দিকে তাকিয়েই প্রাণপন দৌড়েছেন সুফিয়া। মাঝরাস্তায় পড়ে গিয়েছেন, চোট পেয়েছেন, তবে হার মানেননি তিনি। ফের নয়া উদ্যমে দৌড় শুরু করেছেন। সবচেয়ে কম সময়ে গোটা পথটা শেষ করাই ছিল তাঁর পাখির চোখ।
আর এই যাত্রায় তাঁর সবসময়ের সঙ্গী ছিলেন সুফিয়ার স্বামী বিকাশ। পুরো রাস্তাটাই সুফিয়ার পাশে পাশে সাপোর্ট কারটি চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। সুফিয়ার পুষ্টি ও ফিজিওথেরাপির দিকেও নজর ছিল তাঁর। নানা সময় সুফিয়ার মনোবল বাড়াতে তাঁর সঙ্গী হয়েছেন বিভিন্ন শহরের দৌড়বিদ ও সাইক্লিস্টরা। তাঁরাও সুফিয়ার সঙ্গে খানিকটা করে রাস্তা দৌড়েছেন। তাঁকে সমর্থন জানিয়েছেন, যা মুগ্ধ করেছে সুফিয়াকে। বিভিন্ন ছোট ছোট শহরের বাসিন্দারাও এগিয়ে এসেছিলেন সুফিয়ার সমর্থনে। তাঁদের বাড়িতে থাকার-খাওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছেন কেউ কেউ। এত কিছু সত্ত্বেও সহজ ছিল না যুদ্ধটা। বহু সময়েই রাস্তার পাশের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে রাত কাটাতে হয়েছে সুফিয়াদের। গোটা দৌড় প্রতিযোগীতার খরচ সামলাতেও কম হিমশিম খেতে হয়নি তাঁদের।
আর এত কষ্টের ফল পেয়েছেন সুফিয়া হাতেনাতেই। শেষপর্যন্ত সেই পাখির চোখে লক্ষ্যভেদ করেই ছেড়েছেন সুফিয়া। দিন কয়েক আগেই গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের তরফে শংসাপত্রটি এসেছে তাঁর কাছে। নিজের দেশে তো অনেক হল। চারদিকেএত যুদ্ধ, এত হানাহানি, এ সময়ে সবচেয়ে প্রয়োজন বোধহয় মানবতার। আর সেই বার্তা ছড়িয়ে দিতেই এবার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করার চ্যালেঞ্জ নিতে চান সুফিয়া।