বিয়ে হতে না হতেই তারকাদের অন্তঃসত্ত্বা হওয়া নিয়ে উসকে ওঠে জল্পনা। পরিণীতি থেকে সোনাক্ষী, তারকার মুখ বদলালেও জল্পনায় বদল নেই। কোনও নারী তারকা হতে পারেন, তবে ‘মা’ হওয়াই তাঁর চূড়ান্ত সাফল্য, এখনও কি এমনটাই ভাবি আমরা?
বিয়ের এক সপ্তাহের মধ্যেই কেন হাসপাতালে ছুটতে হল সোনাক্ষী সিনহাকে? তবে কি তিনি অন্তঃসত্ত্বা? এই প্রশ্নেই মুখর মিডিয়া থেকে সোশাল মিডিয়া। তবে সোনাক্ষী একা নন। তাঁর আগে আগেই যে তারকা-পরিণয় নিয়ে মিডিয়া চর্চায় মুখর ছিল, তা পরিণীতি ও রাঘব চাড্ডার বিয়ে। আর সেই বিয়ের পরেও পরিণীতিকে একই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল। এদিকে ক্যাটরিনা কাইফ অন্তঃসত্ত্বা কি না, তা নিয়ে তো কৌতূহল থামছেই না। শেষ পর্যন্ত সম্প্রতি সব জল্পনা থামাতে ভিকি কৌশল ঘোষণা করতেই বাধ্য হয়েছেন যে, কোনও সুখবর জানানোর থাকলে তাঁরাই জানাবেন।
আরও শুনুন:
যৌনকর্মী, কিন্তু ‘ভালো মেয়ে’! দর্শকের খিদে মেটাতে যে পথে হেঁটেছে বলিউড
প্রশ্নের মুখে পড়া মানুষগুলো আলাদা আলাদা। কিন্তু স্থান, কাল, পাত্র আলাদা হলেও প্রশ্নের ধরন যে আলাদা হচ্ছে না, তা থেকে একটা ছক কিন্তু চিনে নেওয়া যায়। আর সে ছকটি আদৌ আমাদের খুব আধুনিক অবস্থানে বসায় না। ভেবে দেখুন তো, মানুষের চাঁদে পৌঁছে যাওয়ার যুগে দাঁড়িয়েও যদি আমরা কেবল কে কবে মা হচ্ছেন সেই প্রশ্ন নিয়ে মাথা ঘামাই, তাহলে কী বলার থাকে আর? এই প্রশ্নের মধ্যে কি এই অলিখিত নিয়মটিই পুরে দেওয়া হচ্ছে না যে, কোনও মেয়েকে মা হতেই হবে? কেউ যে মা হতে নাও চাইতে পারেন, অথবা শারীরিক কারণেও কারও পক্ষে মা হওয়া সম্ভবপর না হতে পারে, সেইসব ভাবনার অবকাশই যেন নেই এখানে। এই তো সম্প্রতিই ‘অমর সিংহ চমকিলা’ ছবির ট্রেলার মুক্তি অনুষ্ঠানে কালো ঢিলেঢালা কাফতান ড্রেসে হাজির হয়েছিলেন পরিণীতি। সেই পোশাকে তাঁকে দেখেই প্রশ্ন ওঠে, তবে কি বিয়ের ছ’মাসের মধ্যেই অন্তঃসত্ত্বা রাঘব-ঘরনি? এমনিতেই, ঢিলেঢালা পোশাক পরা মানেই অভিনেত্রীদের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর চাউর হয়ে যায় সর্বত্র। যাদের আঁটসাঁট কিংবা খোলামেলা পোশাক দেখলে অনেকসময় বাঁকা কথা বলতে ছাড়েন না নেটিজেনরা, তাঁরা এহেন পোশাক পরলেও সেই মন্তব্যকারীরাই আবার তাঁদের শরীরে সন্ধানী নজর বুলিয়ে নেন। অথচ তেমনটা করাই কি সঙ্গত? কেউ কারও শরীরকে কীভাবে সাজাবেন, তা যেমন তাঁর সিদ্ধান্ত; তেমনই কেউ সন্তানধারণ করবেন কি না, করলে তা কবে, সেসব সিদ্ধান্তও তাঁরই। এমনকি অন্তঃসত্ত্বা হলেও সে কথা তিনি কবে প্রকাশ করবেন, সে সিদ্ধান্তও তিনিই নিতে পারেন একমাত্র। এইসব বিষয় নিয়ে ক্রমাগত জল্পনা করে যাওয়া কারও ব্যক্তিগত পরিসরে উঁকিঝুঁকি দেওয়ার মতোই।
এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে এক তারকার সাক্ষাৎকারের কথা। টেনিস কোর্টে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করা সেই সানিয়া মির্জাকে তাঁরই দেশের এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি কবে ‘সেট্ল ডাউন’ করবেন? প্রশ্নের সঙ্গে আরও ব্যাখ্যা জুড়ে দিয়েছিলেন তিনি, সোজাসুজিই জানতে চেয়েছিলেন, কবে মা হওয়ার কথা ভাবছেন সানিয়া। তারকার সংযত প্রতিপ্রশ্ন ছিল, “আপনি কি মনে করেন না আমি ইতিমধ্যেই সেট্ল ডাউন করেছি?” সানিয়া প্রশ্ন তুলেছিলেন, “কতগুলো উইম্বলডন জিতলে, কত বার বিশ্বসেরা হলে মহিলা খেলোয়াড় সেট্ল ডাউন করেছেন বলে মনে করা হবে?” সেই সময়ে প্রশ্নকর্তা নিজেও ক্ষমা চেয়ে বলেছিলেন, পুরুষ খেলোয়াড়কে সম্ভবত এই প্রশ্ন করতেন না।
আরও শুনুন:
মহিলারা সাফল্য পেলেই লোকে ঘৃণা ছড়ায়! ‘ভুল’ করে কি ঠিকই বললেন কঙ্গনা?
আসলে প্রশ্নটা তো এখানেই। বিরাট কোহলিকে কেউ প্রশ্ন করবেন না, তিনি কবে বাবা হচ্ছেন। কিন্তু অনুষ্কা শর্মাকে সে প্রশ্ন করা চলে। রাজনীতিবিদ রাঘব কিংবা সিনে-তারকা ভিকির ‘সেটল ডাউন’ করা নিয়েও কারও তেমন মাথাব্যথা নেই। কিন্তু পরিণীতি বা ক্যাটরিনা যতই স্বনির্ভর হোন না কেন, নিজেদের কাজের জায়গায় যতই খ্যাতি কুড়োন না কেন, স্ত্রী ও মা না হলে ভারতীয় সমাজ তাঁদের ঠিক ততটাও সফল ও প্রতিষ্ঠিত বলে মনে করবে না, এ তো বোঝাই যাচ্ছে। যে সময়ে মেয়েরা কাজের দুনিয়ার সব প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছেন, যে কোনও দায়িত্বের ভার তুলে নিচ্ছেন অনায়াসে, নিজেকেই নিজে অবলম্বন করে বাঁচার পথ দেখাচ্ছেন, সেই সময়েও যদি আমাদের প্রশ্নেরা পথ না বদলায়, তবে তা দেশের পক্ষেই বিশেষ গৌরবের নয়। একই গতে বাঁধা ছকে সানিয়া-সোনাক্ষীরা বাঁধা পড়বেন না বটে, তবে সে কথা বুঝে দেশ তার ভাবনার পরিসর বড় করবে কবে?