ছলনা করেই অবলা রমণীর সর্বনাশ করে পুরুষ! এ কথা লিখেছিলেন এক নারী। আর জি করের সঙ্গিনী হিসেবেও যাঁকে চিনি আমরা। কেন এ কথা বলেছিলেন তিনি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
আর জি কর হাসপাতালে ধর্ষণের শিকার তরুণী চিকিৎসক। তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় গোটা রাজ্য। আর এই প্রেক্ষিতেই স্মৃতিতে ফিরে আসছেন আরও এক নারী, যাঁর সঙ্গে নাম জুড়ে আছে এই হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা আর জি করের। অর্থাৎ রাধাগোবিন্দ করের। সেই নারীই একসময় লিখেছিলেন, ছলনা করেই অবলা রমণীর সর্বনাশ করে পুরুষ। তিনি নটী বিনোদিনী।
আরও শুনুন:
নির্যাতনের দামে কেনা, তাই খোলা আকাশের অধিকার মেয়েদেরও
বিনোদিনী এমন এক পরিবেশ থেকে উঠে এসেছিলেন, আর সেই সূত্রেই তাঁকেও এমন পেশায় যুক্ত হতে হয়েছিল যে, যাকে গোটা সমাজ নিচু চোখে দেখে। মনে করে নেয় যে সে নারী ভোগ্য পণ্য ছাড়া আর কিছু নয়। বিনোদিনীর মা-দিদিমা দেহব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। বিনোদিনী নিতান্ত শিশু বয়সেই সেখান থেকে এসে অভিনয় জগতে পা রেখেছিলেন বটে, কিন্তু ভাগ্য তাঁর পিছু ছাড়েনি। পুরুষদের শয্যায় যেতে হয়েছে তাঁকেও, অনেকসময় নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধেও। এখনও ধর্ষণ কাণ্ডে অনেকসময় জল্পনা চলে, মেয়েটি যৌনকর্মী কি না। অথচ এ কথা ওঠে না যে, যৌনকর্মী হলেও কোনও মেয়ের শরীরের অধিকার তারই, ইচ্ছার বিরুদ্ধে সে শরীরে অন্য কেউ অধিকার কায়েম করতে পারে না। বিনোদিনীর সময়ে সে কথা তো ভাবারই প্রশ্ন নেই। তাই থিয়েটার গড়ে নেওয়ার জন্য তাঁকে ব্যবহার করেছেন তাঁর নিজের দলের লোকেরাও। বিনোদিনী তাঁর ‘বাবু’-র প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে চাইলেও, গিরিশ ঘোষ-সহ তাবড় নেতারাই বিনোদিনীকে অন্য পুরুষের রক্ষিতা হতে জোর করেছেন। যাতে সেই পুরুষ, গুর্মুখ রায় বিনোদিনীর বিনিময়ে নতুন থিয়েটার গড়ে দেন।
বিনোদিনী নিজের ভাগ বদলাতে পারেননি। কিন্তু নিজের জীবন কথা লিখতে বসে তিনি স্পষ্ট লিখতে ছাড়েননি, ‘‘বারাঙ্গনা জীবন কলঙ্কিত, ঘৃণিত বটে। কিন্তু তাহা কলঙ্কিত, ঘৃণিত কোথা হইতে হয়? … যাঁহারা লোকালয়ের ঘৃণা দেখাইয়া লোকচক্ষুর অগোচরে পরম প্রণয়ীর ন্যায় ….ছলনা করিয়া বিশ্বাসবতী অবলা রমণীর সর্বনাশ সাধন করিয়া থাকেন …. তাঁহারা কিছুই দোষী নহেন!’’ পুরুষের বিশ্বাসঘাতকতা, শয়তানি নিয়ে সপাট বিনোদিনী। তাঁদের আচরণের কথা খোলাখুলিই লিখেছেন তিনি। তবে একজনের সম্বন্ধে একটিও খারাপ কথা বলেননি। তাঁর নাম করেননি, কিন্তু ছত্রে ছত্রে তাঁর প্রতি সম্মান আর ভালোবাসা উজাড় করে দিয়েছেন। কেননা সেই পুরুষের থেকেই যে সবচেয়ে বেশি সম্মান পেয়েছিলেন পতিতা বিনোদিনী। পেয়েছিলেন অগাধ ভালোবাসাও। বিনোদিনী নাম না করলেও, শোনা যায় তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং রাধাগোবিন্দ কর। সমাজের কারণে দুজনের ভালোবাসা পরিণতি পায়নি, কিন্তু সে ভালোবাসাকে সমাজের দেগে দেওয়া কলঙ্ক ছুঁতেও পারেনি।
আরও শুনুন:
নারীর সম্মান তার যোনিতে রেখেছে কে! পালটা প্রশ্ন তুলেছিলেন কমলা ভাসিন
তবে বিনোদিনীর সেই নিয়তি কি বিনোদিনীর সঙ্গেই ফুরিয়েছে? তা তো নয়। এখনও মেয়েদের সর্বনাশ করতে মুখিয়ে থাকে বহু পুরুষ। সম্প্রতি যার নৃশংস দৃষ্টান্ত দেখল রাধাগোবিন্দ করের নিজের হাসপাতালই। নিজের জীবনে যিনি বিনোদিনীকেও সম্মান দিতে কার্পণ্য করেননি, সেই হাসপাতাল তার এক শিক্ষার্থীকেই নির্যাতনের হাত থেকে সুরক্ষা দিতে পারল না, এ অদৃষ্টের পরিহাসই বটে!